শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
আবু জায়েদের উল্লাস

১০ রানে ৫ উইকেট নেই

মেজবাহ্-উল-হক

১০ রানে ৫ উইকেট নেই

রোহিত শর্মাকে আউট করার পর শূন্যে লাফ দেন পেসার আবু জায়েদ। তাকে নিয়ে সেলিব্রেশনে মেতে ওঠেন অন্যরাও। ইন্দোর টেস্টের প্রথম দিনে এটি ক্ষণিকের চিত্র মাত্র! এ ছাড়া পুরো দিনটিই ছিল টাইগারদের জন্য হতাশার -এএফপি

ব্যক্তিগত ৩ রানে অধিনায়ক মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম জীবন পান। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বেঁচে যান ৮ রানের সময়। তার পরও বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের তিন ভরসা সুবিধা করতে পারলেন না। যেন স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলেন অন্যরাও! প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানেই প্যাকেট টাইগাররা! শেষ ১০ রানেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

গতকাল দুর্দান্ত শুরুর পরও ৩৭-এ আটকে গেলেন টাইগার ক্যাপ্টেন। মুশফিক তো এরপর ১৫ ও ৩৪ রানে আরও দুবার জীবন পেয়েছেন। তিনবার সুযোগ পেয়েও হাফ সেঞ্চুরি করতে পারলেন না মিস্টার ডিপেন্ডেবল। অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ নতুন জীবন পাওয়ার পর আর মাত্র ২ রান যোগ করতে পেরেছেন।

ভারতীয় ফিল্ডারদের ব্যর্থতার দিনে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ তিন ব্যাটসম্যানও নিজেদের উইকেটটি উপহার দিয়ে এসেছেন।

রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বল ছেড়ে দিয়েছিলেন মুমিনুল। কিন্তু দেখা গেল বল গিয়ে আঘাত করল উইকেটে। পেসার মোহাম্মদ সামির বলে একই ঘটনা ঘটালেন মুশফিকও। দল যখন মহাবিপর্যয়ে তখন অযথাই এগিয়ে ব্যাট চালাতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান মাহমুদুল্লাহ।

 বোল্ড হয়ে মুমিনুল ও মুশফিক যেন বোকা বনে গেছেন। আর মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল তিনি টি-২০-এর শেষ ওভারে ব্যাট করতে নেমেছেন। হাতে কোনো সময় নেই, যত দ্রুত রান করা যায় ততই মঙ্গল!

সিনিয়রদের আত্মাহুতির মিছিলে গতকাল ইন্দোরে যোগ দিয়েছিলেন তরুণরাও। সে কারণেই ব্যাটিংস্বর্গে বাংলাদেশ আটকে গেল মাত্র ১৫০ রানেই। দুই সেশনেই শেষ টাইগারদের ইনিংস। দিনের শেষ সেশনে ভারতীয়রা ১ উইকেটে ৮৬ রান তুলে বুঝিয়ে দিয়েছেন এ উইকেটে কোনো জু জু নেই।

স্পিন আক্রমণের কথা মাথায় রেখে যেখানে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ, সেখানে গতকাল পেস আক্রমণ দিয়েই ধসিয়ে দিয়েছে ভারত। তিন পেসার ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ সামি মিলে নিয়েছেন ৭ উইকেট। ১টি রান আউট। আর বাকি ২টি উইকেট নিয়েছেন স্পিনার অশ্বিন।

অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয়েছে মুমিনুলের। স্মরণীয় এই দিনে টস জিতে নিলেন সাহসী সিদ্ধান্ত। প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। দিনের প্রথম ঘণ্টা মাটি কামড়ে পড়ে থাকাই ছিল উদ্দেশ্য। কেননা সকালে বাইশগজে ময়েশ্চার থাকে। সেখান থেকে বাড়তি সুবিধা পান পেসাররা। এর পরই উইকেট হয়ে যাবে ব্যাটসম্যানদের বন্ধু। এসব চিন্তা হয়তো টাইগারদের পরিকল্পনায় ছিল। কিন্তু সর্বনাশের শুরু সকালেই। ষষ্ঠ ও সপ্তম উইকেটে বিদায় নেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও ইমরুল কায়েস। দুজনের কেউই ব্যক্তিগত স্কোরকে ২ অঙ্কের কোঠায় নিয়ে যেতে পারেননি। এরপর যেন নিয়মিত বিরতিতে পড়তে থাকে উইকেট।

বাংলাদেশ কাল প্রথম সেশনে হারায় ৩ উইকেট। দ্বিতীয় সেশনে ৪ উইকেট। আর তৃতীয় সেশনে ইনিংসের মেয়াদ ছিল মাত্র ৪.৩ ওভার। শেষের ১০ রানে একে একে সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, লিটন কুমার দাস, তাইজুল ইসলাম ও এবাদত হোসেন।

মুশফিককে বোল্ড করার পরের বলেই মেহেদী মিরাজকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন ভারতের পেসার মোহাম্মদ সামি। জাগিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। কিন্তু হয়নি।

সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ইনিংসের ওপেন করলেও সাদা পোশাকে লিটন ব্যাট করতে নামেন ৭ নম্বরে। প্রথম বলেই দারুণ এক বাউন্ডারি হাঁকান। তারপর বেশ আস্থার সঙ্গে ব্যাট করছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তের ঝড়ের মধ্যে পড়ে যান তিনিও। মুশি-মিরাজ আউট হওয়ার পরের ওভারেই ইশান্ত শর্মার বলে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। এরপর তাইজুল রান আউট ও এবাদতকে বোল্ড করেন যাদব।

শেষ মুহূর্তের ঝড়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামি। ২৭ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ম্যাচ শেষে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে ভারতীয় এই পেসার বলেন, ‘আমি কন্ডিশন ও ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনা করে বল করেছি। আমার পরিকল্পনা সফল করেছি। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের জন্য আমার আলাদা পরিকল্পনা ছিল। দলের হয়ে দেশের হয়ে ভালো খেলতে পারলে খুবই ভালো লাগে।’

প্রথম ইনিংসে ব্যাকফুটে চলে গিয়ে ফিল্ডিং করতে নামে বাংলাদেশ। ১৪ রানেই ভারতের তারকা ওপেনার রোহিত শর্মাকে আউট করে ম্যাচে প্রাণ ফিরিয়ে আনেন পেসার আবু জায়েদ। আরেক ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়ালও ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু স্লিপে সহজ ক্যাচ মিস করেন ইমরুল। শেষ বিকালে আর কোনো ভুল করেনি ভারত।

এখনো ৬৪ রানে পিছিয়ে কোহলিরা। হাতে রয়েছে ৯ উইকেট। ভারতের ইনিংস কোথায় গিয়ে থামে তা-ই এখন দেখার বিষয়। টাইগার বোলাররা কি পারবেন আজ কোহলিদের সামনে প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলতে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর