শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নির্বিষ বোলিংয়েও উজ্জ্বল রাহী

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নির্বিষ বোলিংয়েও উজ্জ্বল রাহী

ডিপ স্কয়ার লেগে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন আবু জায়েদ রাহী। উৎফুল্ল স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ডাবল সেঞ্চুরির আলো ঝলমলে ইনিংস খেলেও আউট হওয়ার বেদনায় বিমর্ষ মায়াঙ্ক আগারওয়াল। ছন্দে থাকা আগারওয়াল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলে যখন সাজঘরে ফিরছিলেন, তখন মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নখ খুঁটছিলেন ইমরুল কায়েস। প্রথম দিন ইমরুল স্লিপে সহজ ক্যাচ ফেলেন ২৮ বছর বয়সী ভারতীয় ওপেনারের। ৩২ রানে জীবন পাওয়া ভারতীয় ক্রিকেটার শেষ পর্যন্ত থামেন ২৪৩ রানে। ৩৩০ বলের ইনিংসটি খেলে সাধারণ মানে নামিয়ে আনেন টাইগার বোলারদের। শুধু আগারওয়াল নন, চেতেশ্বর পূজারা, আজিঙ্কা রাহানে ও রবীন্দ্র জাদেজার    মেজাজি ব্যাটিংয়ে সুর, তাল, লয় হারিয়ে নখদন্তহীন হয়ে পড়েন এবাদত হোসেন, তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজরা। তারপরও বিরাট কোহলিকে শূন্য রানে সাজঘরে ফিরিয়ে দলের নির্বিষ বোলিংয়ের  মাঝেও আলো ছড়ান আবু জায়েদ রাহী। ৬ নম্বর টেস্ট খেলতে নেমে রাহী ক্যারিয়ার সেরা বোলিংটাও করে ফেলেন ইন্দোরে।

দ্বিতীয় দিন শেষে ম্যাচের যে চিত্র, তাতে স্পষ্ট ইন্দোর টেস্টের নিয়ন্ত্রণ এখন ভারতের হাতে। ম্যাচের ফল আজ হয়ে গেলে অবাক হওয়ারও কিছু থাকবে না! আগারওয়ালের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ভর করে ভারতের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান। এগিয়ে রয়েছে ৩৪৩ রানে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৫০ রান।

হোলকার স্টেডিয়ামের ঘাস আচ্ছাদিত উইকেটে প্রথম দিনই পুরোপুরি সুবিধা আদায় করেন তিন স্বাগতিক পেসার ইশান্ত, উমেশ ও শামী। গতি, সুইং ও বাউন্সে নাজেহাল করেন টাইগার ব্যাটসম্যানদের। তিন পেসারের সাঁড়াশি আক্রমণে ছন্নছাড়া ব্যাটিং করে মুমিনুল বাহিনী। অতীত রেকর্ড বলে ইন্দোরের উইকেট ব্যাটিং সহায়ক। এখানেই ভারতীয় অধিনায়ক কোহলি ডাবল সেঞ্চুরি ও রাহানে সেঞ্চুরি রয়েছে। সেই ব্যাটিং স্বর্গে টাইগার ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস উঠেছে ভারতীয় বোলিংয়ে। অথচ এ উইকেটেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা চেপে ধরেন টাইগারদের ধারহীন বোলিংকে। আগারওয়াল, পূজারা, রাহানে, জাদেজা ও যাদবের দৃঢ়তায় বাংলাদেশের বোলাররা হয়ে পড়েন নির্বিষ। তবে রাহী সুইংয়ের ব্যবহারে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলেছেন প্রতি মুহূর্তে। ২৮ ওভারের স্পেলে ১০৮ রানের খরচে সাজঘরে ফেরত পাঠান রোহিত, পূজারা, কোহলি ও রাহানেকে। রাহীর দুরন্ত বোলিং স্পষ্ট করে দেয়, বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের ম্যাচ পরিকল্পনা ছিল ভুল। দুই পেসার এবং দুই স্পিনার দিয়ে একাদশ সাজানো ভুল ছিল, প্রমাণ করে দেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। উইকেটের গতি ও বাউন্স স্পষ্ট করেছে, রাহী ও এবাদতের সঙ্গে আরও একজন পেসার থাকা জরুরি ছিল। টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল প্রথম দিনই স্বীকার করেন বাড়তি একজন পেসার না রাখাটা ভুল ছিল, ‘একাদশে আরও একজন পেসার থাকলে ভালো হতো।’ 

পরাক্রমশালী ভারতীয় বোলিং সামলাতে সাত স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান দিয়ে একাদশ সাজান অধিনায়ক মুমিনুল। চার বোলারের মধ্যে উইকেটের গতি ও বাউন্সের সহায়তায় দুরন্ত বোলিং করেন রাহী। এবাদত গতি ধরে রাখলেও ৩১ ওভারে রান দেন ১১৫। বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ২৮ ওভারে ১২০ ও মিরাজ ২৭ ওভারে ১২৫ রান দেন। রাহী তার দুরন্ত স্পেলের দুর্দান্ত এক ইনসুইঙ্গারে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন কোহলিকে। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে শূন্য রানে ফিরেন সাজঘরে তিনি।

যা তার ১৪০ ইনিংসে দশমবার। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ১৩ বার শূন্য রানে সাজঘরে ফিরেছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং। ৯ বার আউট হয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ ১৫০ ও ভারত ৮৬/১।

দ্বিতীয় দিন শেষে ভারত প্রথম ইনিংস : ৪৯৩/৬ (মায়াঙ্ক ২৪৩, পুজারা ৫৪, কোহলি ০, রাহানে ৮৬, জাদেজা ৬০* সাহা ১২, জাদব ২৫*; জায়েদ ৪/১০৮, মেহেদি ১/১২৫, এবাদত ১/১১৫।

সর্বশেষ খবর