সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কেন এমন লজ্জার হার

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার দুই দশকের মধ্যে এবার দ্বিতীয়বারের মতো ভারত সফরে বাংলাদেশ দল। বছর দুয়েক আগে মাত্র এক টেস্টের জন্য ভারতে গিয়েছিল টাইগাররা। সেবার হায়দরাবাদ টেস্টে বাংলাদেশ ২০৮ রানে হারলেও কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে পেরেছিল। প্রথম ইনিংসে ভারতের ৬৮৭ রানের জবাবে ৩৮৮ রান করেছিল সফরকারীরা। এবার তো বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং- সব বিভাগেই নাস্তানাবুদ। ন্যূনতম প্রতিরোধও গড়তে পারেনি টাইগাররা। কেন এমন লজ্জার হার! চলতি বছরে এখন পর্যন্ত খেলা ৪ টেস্টের মধ্যে ৪টিতেই শোচনীয় হার। এর মধ্যে ৩টিতে ইনিংস ব্যবধানে। আরেকটি নবাগত আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ২২৪ রানে পরাজয়। ইন্দোর টেস্টে লজ্জার হারের পেছনে কারণগুলো তুলে ধরেছেন -মেজবাহ্-উল-হক

কেন এমন লজ্জার হার

লণ্ডভণ্ড ইমরুলের উইকেট! এই ছবিটিই যেন ইন্দোর টেস্টের প্রতীকী

ওপেনিংয়ে ব্যর্থতা

এই টেস্টে ভারতের ব্যাট করতে হয়েছে মাত্র এক ইনিংস। তাও আবার ইনিংস ঘোষণা করেছে তারা। ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল একাই খেলেছেন ২৪৩ রানের ইনিংস। ম্যাচ সেরাও হয়েছেন। আর বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও ইমরুল কায়েস দুই ইনিংসেই ব্যর্থ। একবারও তারা দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছাতে পারেননি। দুই ওপেনারের চার ইনিংসে মোট রান ১৮ (৬+৬+৬+৬)। শুরুটা ভালো না হলে বড় স্কোর করা কঠিন। ওপেনারদের এই ব্যর্থতাই বাংলাদেশের ব্যাটিং নড়েবড়ে করে দেয়। তামিম ইকবালের অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো।

মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন!

মিডিয়ায় এসেছে, ইন্দোর টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরুতে সুনীল গাভাস্কার বলেছিলেন, ‘এখানে লড়াই করে টিকে থাকার মানসিক শক্তি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আছে কি না! যদি সেখানে তারা উন্নতি করতে না পারে, ম্যাচ শেষ হতে পারে আজ বিকালেই।’ গাভাস্কারের কথাই সত্যি হয়েছে। তৃতীয় দিনেই শেষ হয়েছে ইন্দোর টেস্ট। ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে! শুধু দুই ওপেনারই নন, তিন ও চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা অধিনায়ক মুমিনুল হক (৩৭ ও ৭ রান) ও মোহাম্মদ মিথুনও (১৩ ও ১৮ রান) সুবিধা করতে পারেননি। মাহমুদুল্লাহর মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানও অযথাই চড়াও হতে গিয়ে আউট হয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ১০ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে করেছেন ১৮ রান। এমনকি লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়েছে বালির বাঁধের মতো। প্রথম ইনিংসে তো শেষের ১০ রান করতে হারাতে হয়েছিল ৫ উইকেট। এমন ব্যাটিংয়ের পর ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা কি স্বাভাবিক নয়?

সিনিয়রদের দায়িত্বহীনতা

দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল নেই। তাই গুরুদায়িত্ব ছিল সিনিয়র ক্রিকেটারদের ওপর। কিন্তু একমাত্র মুশফিক ছাড়া অন্যরা সে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মুশি এক ইনিংসে ৪৩, আরেক ইনিংসে করেছেন ৬৪ রান। ৫ নম্বরে ব্যাট করতে নামায় তাকে লড়াই করতে হয়েছে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দেশের সেরা ব্যাটসম্যান কেন ব্যাটিং অর্ডারের এত নিচে? আর ইমরুল, মুমিনুল, মিথুন, মাহমুদুল্লাহর মতো সিনিয়ররাই বা কেন এমন একসঙ্গে ব্যর্থ হলেন?

ছন্নছাড়া বোলিং আক্রমণ

একসময় ভারতের ব্যাটসম্যানরা তাদের ম্যাচ জিতিয়ে দিতেন। কিন্তু এখন পেসাররাই সে কাজটি করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপ আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। ইন্দোরে যেখানে ভারতীয় বোলাররা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছেন, সেখানে টাইগার বোলাররা কোনো দাগ কাটতেই পারেননি। আবু জায়েদ রাহী একা ৪ উইকেট তুলে নিলেও ২৫ ওভারে দিয়েছেন ১০৮ রান। অন্যদের অবস্থা তো যাচ্ছেতাই। এমন ছন্নছাড়া বোলিং লাইনআপ নিয়ে কি টেস্টে ভালো কিছু করা সম্ভব?

দুর্বল পরিকল্পনা

প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনা নিয়েও! এই নভেম্বরে সকালে উইকেটে অনেক ময়েশ্চার থাকে, পেসাররা বাড়তি সুবিধা পান। তারপরও কেন টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো -তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে।

বারবার সুযোগ হাতছাড়া

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বেশ কয়েকবার নতুন জীবন পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি। যেমন প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হক ৩ রানে জীবন পেয়ে করেছেন ৩৭ রান। মুশফিক তিন তিনবার নতুন জীবন পেয়ে করেছেন ৪৩। মাহমুদুল্লাহ ৮ রানে সুযোগ পেয়েও ১০ রানে আউট। অন্যদিকে ভারতের ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে ৩২ রানে আউট করার সুযোগ এসেছিল। ইমরুল ক্যাচ মিস করেন স্লিপে। আর একবার জীবন পেয়েই ভারতীয় ওপেনার করে ফেলেন ২৪৩ রান। টেস্টে এমন সুযোগ খুব কম আসে। আর এই সুযোগ হাতছাড়া করলে ভালো করার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়। টেস্টের এক নম্বর দল ভারতের বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে বারবার সুযোগ হাতছাড়া করার কারণেই হয়তো টাইগারদের পরাজয়টা হয়েছে এমন শোচনীয়!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর