বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত কলকাতা

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত কলকাতা

২২ নভেম্বর থেকে কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে শুরু হতে হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ গোলাপি টেস্ট ম্যাচ। তার আগে কলকাতায় আসতে শুরু করেছেন দুই দেশের ক্রিকেটাররা। মঙ্গলবার সকালেই কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি, অজিঙ্কা রাহানে। মুম্বাই থেকে একই বিমানে করে সকাল ১০টা নাগাদ কলকাতায় নামেন তারা। বিমানবন্দর থেকে বাইরে বের হতেই তাদের দেখতে ভক্তদের ঢল নামে।

পরে বিকাল ৩টার পর ইন্দোর থেকে বিশেষ বিমানে করে কলকাতায় নামেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো, মুস্তাফিজুর রহমান, মুশফিকুর রহিম, মেহেদি হাসান মিরাজ, আবু জায়েদসহ দলের অন্য সদস্যরা।

ওই একই বিমানে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের কোচ রবি শাস্ত্রীসহ রবিচন্দন অশ্বিন, চেতেশ্বর পুজারা, মায়াঙ্কা আগারওয়ালসহ ভারতীয় ক্রিকেট দলের কয়েকজন সদস্যও কলকাতা বিমানবন্দরে পা রাখেন। বিমানবন্দরে পা রাখার পরই বাসে করে দুই দলের ক্রিকেটারদেরই নির্দিষ্ট হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

দুই দেশের ক্রিকেটাররাই গোলাপি বলে অনুশীলন সেরে ফেলেছেন। ভারত-বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচ পাঁচ দিনের বদলে মাত্র তিন দিনে শেষ হয়ে যায়। ফলে হাতে বাড়তি সময় থাকায় ইন্দোরে দুই দলের অধিকাংশ ক্রিকেটাররাই গোলাপি বলে অনুশীলন সেরে নিয়েছেন।

দুই দেশই এই প্রথমবারের জন্য গোলাপি টেস্ট ম্যাচে অংশ নিতে যাচ্ছে। স্বভাবতই দিন-রাতের এই টেস্ট ম্যাচকে ঘিরে কেবল সমর্থকদের মধ্যেই উন্মাদনা ছড়ায়নি, দুই দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যেও আবেগ, উন্মাদনা তুঙ্গে।  টুইটারে একটি ছবি পোস্ট করেন অজিঙ্কা রাহানে। যেখানে দেখা গেছে বালিশের পাশে একটি গোলাপি বল নিয়ে ঘুমাচ্ছেন রাহুলে। ক্যাপশন দেন ‘গোলাপি বলে টেস্ট খেলা নিয়ে ইতিমধ্যেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছি।’

এদিকে গোলাপি টেস্টের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। তৈরি ইডেন গার্ডেনও। গোটা শহর গোলাপি রঙের আলোকমালায় সেজেছে। সাম্প্রতিক অতীতে কোনো টেস্ট ম্যাচকে ঘিরে এমন উন্মাদনা চোখে পড়েনি কলকাতায়।

দিন-রাতের এই টেস্ট ম্যাচ দেখতে ইডেনে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। উপস্থিত থাকতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-এর মতো হাইপ্রোফাইল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। এ ছাড়াও বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলী, সুনীল গাভাসকার, কপিল দেব, দিলীপ বেঙ্গসরকার, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত, শচীন তেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষণ, সানিয়া মির্জা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ সেদেশের ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

 ২০০০ সালে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে আয়োজিত প্রথম টেস্টে খেলা দুই দলের ক্রিকেটাররাও হাজির থাকবেন সেখানে।

একসঙ্গে এত সংখ্যক ভিভিআইপিদের কথা মাথায় রেখে গোটা ইডেনকেই কার্যত নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হচ্ছে। তাই ইডেনের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে সোমবার মাঠে আসেন কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি)-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা। ইডেনের ব্যবস্থাপনা দেখে খুশি পুলিশ কর্মকর্তারাও। ম্যাচের দিন ইডেনে প্রবেশ ও প্রস্থানের ক্ষেত্রে একাধিক নিষেধাজ্ঞা থাকছে। শুক্রবার ম্যাচের প্রথম দিন অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্টেডিয়াম ছাড়া নিয়েও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে।

এদিকে পিচ ও আউটফিল্ডকে খেলার উপযুক্ত করে তুলতে গত কয়েকদিন ধরেই পরিচর্যা চালাচ্ছেন মাঠকর্মীরা। যে পিচে খেলা হবে সেই পিচকে অক্ষত রেখে পাশের পিচে গোলাপি বল পরীক্ষা করে দেখা হতে পারে বলে খবর। এ জন্য মূল পিচটিকে ঢেকে রেখে দেওয়া হয়েছে। পিচ কিউরেটর জানান, ‘ম্যাচ শুরুর আগে ওই পিচে কোনো গোলাপি বল প্র্যাকটিসের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।’

শুক্রবার দুপুর ১টায় ইডেনের বিসি রায় ক্লাব হাউস থেকে ঘণ্টা বাজিয়ে ঐতিহাসিক গোলাপি টেস্টের সূচনা করবেন শেখ হাসিনা ও মমতা ব্যানার্জি। প্রথম দিনের শেষ অর্ধের ম্যাচ চলবে রাত ১০টায়।

তবে রাতের আলোতে গোলাপি বলে খেলতে দুই দলের ক্রিকেটারদেরকেই সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে যে জল্পনা ছড়িয়েছে তা উড়িয়ে দিয়েছেন কলকাতারই কয়েকজন ক্রিকেটার। ঘরোয়া ক্রিকেটে এই গোলাপি বলেই শতরান পাওয়া অরিন্দম ঘোষ, অভিমন্যু ইশ্বরন বা সুদীপ চ্যাটার্জির অভিমত বলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া বা দিনের শেষ এবং ফ্লাড লাইটের আলো দুইয়ে মিশে গোলাপি বলের ওপর পড়লে যে সমস্যা হওয়ার বিষয়ে যতটা আলোচনা হচ্ছে তেমনটা হবে না। তবে রাতের শিশির একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে দুই দলের কাছেই। আর সে কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশের বোলাররা ইন্দোরে বল ভিজিয়ে প্র্যাকটিস করলেন।

বাংলাদেশের ক্রিকেটার মেহেদি হাসান মির্জা জানান, ‘শিশিরের মোকাবিলা করতে আগামী কয়েক দিন আমাদের পেস বোলাররা পানিতে বল চুবিয়ে অনুশীলন করবেন। আমার মনে হয় আমরা এই বলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি গোলাপি বলে ব্যাট করেছি। পিচে পড়েই এই বল দ্রুত গতিতে বল ব্যাটে আসছে। আমার মনে হয় এতে সুইং ও বাউন্সের ভাগ বেশি।’

দ্বিতীয় টেস্টে ভালো ফলের আশায় ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সামির কাছ থেকে টিপস নিয়েছেন বাংলাদেশের পেস বোলার আবু জায়েদ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, ‘আমার ও সামির মধ্যে অনেক মিল আছে। আমরা দুজনেই সিম (সেলাই) ব্যবহার করি। আমি তাকে অনেকবার বল করতে দেখেছি এবং সামি কীভাবে বল করে সেদিকেও আমি নজর দিয়েছি। তার উচ্চতার সঙ্গে আমার উচ্চতার তুলনা করে দেখেছি যে, সামি আমার সমান না কি আমার থেকে ওর উচ্চতা বেশি। এরপরই আমি অনুমান করলাম যে আমিও তার মতো বল করতে পারি।’

সর্বশেষ খবর