শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঐতিহাসিক টেস্ট শুরু আজ

ইডেন গার্ডেনের অন্যরকম অভিষেক

ঐতিহাসিক টেস্ট শুরু আজ

শুধু চাই একটি টিকিট! সেটা ডা. বিধান চন্দ্র রায় স্ট্যান্ড হোক, কিংবা জগমোহন ডালমিয়া স্ট্যান্ডই হোক। অথবা সৌরভ গাঙ্গুলী বা যোগীন্দার সিং স্ট্যান্ড। দেড় শ বছরের পুরনো স্টেডিয়ামের যেখানেই হোক, সমস্যা নেই একরত্তি। যেনতেন একটি টিকিট হলেই হবে! একটি টিকিটের জন্য সে কি কাকুতি-মিনতি। গোলাপি আভায় শোভিত একটি টিকিটের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে গোটা কলকাতা। বালিগঞ্জ, টালিনগর, কলেজ স্ট্রিট, খিদিরপুর, হাওড়া- সব রাস্তা এখন ময়দানলাগোয়া ইডেনমুখী। সবাই ছুটছেন টিকিটের জন্য। টিকিট পেলেই যে হয়ে যাবেন ইতিহাসের অমূল্য সাক্ষী! এমন সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়? ইতিহাসখ্যাত, অভিজাত ইডেন গার্ডেনের মুকুটে নতুন পালক যোগ হচ্ছে আজ। শুধু ইডেন নয়, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরও সোনালি দিন আজ। সাদা পোশাকে দুই দলেরই অভিষেক হচ্ছে গোলাপি বলে। ঠিক ১৯ বছর আগে যেভাবে ইতিহাসের পাতায় সোনালি কালিতে ব্র্যাকেটবন্দী হয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী, নাইমুর রহমান দুর্জয়রা। আজ সোনার কয়েনে টস করে একইভাবে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিচ্ছেন মুমিনুল হক ও বিরাট কোহলি। গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্টকে আতিথেয়তা দিতে কলকাতা সেজেছে গোলাপি রঙে।

প্রতিবেশী দুই দেশ। একই ভাষা দুই নগরীর। জাতীয় সংগীতের রচয়িতাও একই- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এত সখ্য, এত সৌজন্য, কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে চরম প্রতিপক্ষ! সকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ঘণ্টি বাজিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন ঐতিহাসিক কলকাতা টেস্টের। এর আগেই আছে চমক। আকাশ থেকে ছত্রীসেনা নেমে এসে দুই অধিনায়কের হাতে তুলে দেবে দুটি গোলাপি বল। মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, মুস্তাফিজ, রাহীরা ব্যাট ও বলের যুদ্ধে মেতে উঠবেন কোহলি, রোহিত, সামি, অশি^নদের বিপক্ষে ‘এসজি’ বল নিয়ে। এর আগে যে ১০টি টেস্ট হয়েছে গোলাপি বলে, সবই খেলা হয়েছে কোকাবুরা বলে। তাই দুই দলের কাছেই রহস্যময় এসজি গোলাপি বল!

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আভিজাত্যে মেলবোর্ন কিংবা লর্ডস থেকে একচুলও পিছিয়ে নেই ইডেন। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে। ১৮৬৪ সালে স্থাপিত ইডেনে খেলতে মুখিয়ে থাকেন বিশে^র তাবৎ ক্রিকেটার। তারা ইডেনের সবুজ গালিচায় পা দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারকে মহিমান্বিত করেন। নন্দনকানন ইডেনের নামকরণ লেডি এমিলি ইডেনের নামে। উনবিংশ শতকের শুরুতে ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল অকল্যান্ডের বোন এমিলি ইডেন। এখানে প্রথম ক্রিকেট খেলা হয় ১৮০৪ সালে। প্রথম ক্রিকেট খেলে ব্রিটিশদের ক্যালকাটা ক্লাব। প্রথম টেস্ট ১৯৩৪ সালে। ড্র হয়েছিল ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট ম্যাচটি। সে হিসাবে এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো টেস্ট ভেন্যু ইডেন গার্ডেন। পুরনোদের তালিকায় অবশ্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামও রয়েছে। ১৯৫৫ সালে ভারত-পাকিস্তান টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল ঢাকায়।

অভিজাত ইডেনে এখন পর্যন্ত টেস্ট হয়েছে ৪১টি। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালও হয়েছিল এখানে। দুই প্রতিবেশীর গোলাপি বলের অভিষেক টেস্টকে রাঙাতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নতুন সভাপতি বেছে নেন ১৫৫ বছরের পুরনো ইডেনকে। স্যার জ্যাক হবস, রঞ্জি সিংজি, সৌরভ গাঙ্গুলী, শচীন টেন্ডুলকার, ভিভিএস লক্ষ্মণ, রাহুল দ্রাবিড়, ব্রায়ান লারা, অ্যালান ডোনাল্ডদের মতো ক্রিকেটাররাই খেলেননি এখানে; ল্যাটিন আমেরিকান ফুটবলের অন্যতম সেরা ফুটবলার উরুগুয়ের এঞ্জো ফ্রান্সেসকোলি, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী জর্জ বুরুচাগাও খেলেছেন ইডেনের সবুজ গালিচায়। এতসব তারকার কাতারে নাম লেখাতে মুখিয়ে আছেন বাংলাদেশের ১১ নম্বর টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল, ‘গোলাপি বলে টেস্ট খেলব প্রথম। আমরা সবাই মুখিয়ে আছি টেস্টটি খেলতে। ইডেনে খেলার অভিজ্ঞতাই আলাদা। অসাধারণ অনুভূতি।’ ২০০০ সালে টেস্ট অভিষেক বাংলাদেশের। ইডেনে নামার আগে ১১৬ টেস্ট খেলে এখন অভিজ্ঞ টইগাররা। আজ তাই নতুন ইতিহাস লিখতে কঠিন পরীক্ষায় নামছেন তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর