বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কলকাতা জয় করলেন মিরাজ!

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ক্রিকেটের বাইশগজে পারফরর্ম করে আগেই মানুষের হৃদয় জয় করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু দেশের সীমানা পেরিয়ে কয়েকশত কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গের কোনো একটি শহরেও যে এত জনপ্রিয়তা তা বোধহয় চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মিরাজ হয়তো নিজেও ভাবেননি যে তাকে দেখতে মানুষ এত উদ্বেল হয়ে উঠতে পারে।

গতকাল দুপুরের দিকে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের (হেম শীলা মডেল স্কুল) আমন্ত্রণে আসেন মিরাজ। কিন্তু তার আসার খবরে অনেক আগে থেকেই স্কুলের ব্যালকনি, জানালায় বসে শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করতে থাকে কখন তাদের প্রিয় ক্রিকেটার পা রাখবেন তাদের স্কুলে। দুপুর ১টা নাগাদ স্কুল গেটে পা রাখতেই শঙ্খ বাজিয়ে তাকে বরণ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের মূল ফটক থেকে ভবনের দুই ধারে স্কুলের পোশাকে মিরাজকে স্যালুট দিয়ে স্বাগত জানান। পরে স্কুল বিল্ডিং-এ প্রবেশের পর তাকে ধান-দুর্বা প্রদীপ জ্বালিয়ে বরণ করে স্কুলের ছাত্রীরা।

কেউ তার কপালে পরিয়ে দেয় চন্দনের টিপ, কেউ আবার লাল গোলাপের তোড়া উপহার দেন মিরাজকে। স্কুল বিল্ডিংটি ঘুরে দেখেন তিনি। পরে স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকাদের সঙ্গে গ্রুপ ফটোও তোলেন তিনি। এরপর স্কুলের মাঠে একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানও হয়। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল স্কুলের সব পড়ুয়ারা। এসময় স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হয় মিরাজকে। স্কুলের প্রতিটি জানালা, দরজা, ব্যালকনিতে শিক্ষার্থীরা হাত নেড়ে মিরাজকে অভিনন্দন জানান। মিরাজও তাদের হাত উঁচু করে অভিবাদন গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে সামনে দেখতে পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অশিক্ষক কর্মীরাও। কেউ কেউ আবার হাতে সাদা কাগজ ও পেন নিয়ে মিরাজের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। যদিও সবারই যে সেই সাধ পূর্ণ হয়েছে তা নয়। তবে মিরাজকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েই সবাই খুশি।

ক্রিকেটার বলে কথা, ব্যাট-বল হাতে নিয়ে ময়দানে নামবেন না তা কি হয়? স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে তাও করলেন মিরাজ। কখনো স্কুলের শিক্ষার্থীরাই তাকে বল করলেন, মিরাজ ব্যাট চালালেন। আবার উল্টোটাও হলো।

ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসায় আপ্লুত মিরাজ জানান যে ‘মানুষের যে এত ভালোবাসা, ¯ন্ডেœহ তা আমায় ছুঁয়ে গেছে।

দুর্গাপুরে আসা নিয়ে তিনি বলেন ‘সঞ্জয় নামে আমার কলকাতার এই ভাই আমায় বলে যে দুর্গাপুরের একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা তোমাকে দেখতে চাইছে। আমিও দেখা করার জন্য রাজি হয়ে যাই। প্রথমে বুঝতে পারিনি, কিন্তু এখানে পা দিয়েই বুঝলাম যে ওরা খুব এক্সাইটেড। ক্রিকেট দেখে এমনকি বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলাও দেখে। বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আমি সত্যিই এতে গর্ববোধ করেছি যে এখানকার মানুষ বাংলাদেশের ক্রিকেটারকেও শ্রদ্ধা করে।’

ইডেনে পিঙ্ক টেস্ট নিয়ে এই বাংলাদেশি ক্রিকেটার বলেন ‘আমাদের জন্য এটা একটা বড় অভিজ্ঞতা। দুই দলের কাছেও এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ ছিল। গোলাপি বলে এটাই আমাদের প্রথম টেস্ট ম্যাচ। কিন্তু আমরা আমাদের ১০০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করেছি’।

একটা সময় ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারতের মতো দলকে হারালেও সাম্প্রতিক কালে ধারাবাহিকতার অভাব নিয়ে মিরাজ জানান ‘ক্রিকেট খেলায় একটা খারাপ সময় যায়। শেষ চার-পাঁচ বছর ভালো ক্রিকেট খেলেছি। হয়তো দুই একটা সিরিজ আমাদের খারাপ যাচ্ছে। তবে আমাদের বিশ্বাস আল্লাহর রহমতে আমরাও কাম ব্যাক করতে পারব।’

নির্বাসনে যাওয়া বাংলাদেশ দলের অলরাউন্ডার সাকিব-আল-হাসান নিয়ে মিরাজের মন্তব্য ‘এ সব ইস্যুতে আমাদের আরও অনেক সতর্ক বা নিরাপদে থাকা উচিত। তবে এটা বলব যে সাকিব ভাইকে আমাদের দলের সবাই এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবে খুব মিস করেছি।’ নির্বাসন কাটিয়ে খুব শিগগিরি তিনি জাতীয় দলে ফিরে আসবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন মিরাজ।’  

ভারত সফরে প্রথম টি-২০ ম্যাচ জিতলেও পরের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ দলের বিপর্যয় নিয়ে মেহেদী হাসান জানান ‘আসলে ভারত এখন বিশ্বের এক নম্বর দল। ওরা অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছে। আমাদেরও অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের কিছু কিছু জায়গায় খামতি ছিল, সেটা পূরণ করার চেষ্টা করব।’ 

বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বিকালের দিকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। তবে যাওয়ার আগে কথা দিয়ে যান ২০২০ সালে ফের তিনি এই স্কুলে আসবেন এবং বাচ্চাদের সঙ্গে অফুরন্ত সময় কাটাবেন।

স্কুলের কর্মকর্তা অনিন্দিতা হোম চৌধুরী জানান ‘আন্তর্জাতিক মানের একটি ক্রিকেটারকে কাছে পেয়ে আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা খুব খুশি। মিরাজও অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন। তিনি আমাদের ক্যাম্পাস, অডিটোরিয়াম ঘুরে দেখেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কিছুক্ষণ কথা বলেন।’ 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর