রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ওয়ার্নারের মহাকাব্য

ক্রীড়া ডেস্ক

ওয়ার্নারের মহাকাব্য

‘ব্রায়ান লারার ৪০০*’ -ঐতিহাসিক ইনিংসটি নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছিলেন ধারাভাষ্যকাররা! ট্রিপল সেঞ্চুরির পর হয়তো ডেভিড ওয়ার্নারের চোখের সামনেও ভাসছিল সেই অবিস্মরণীয় ইনিংস। তাই কিনা সতর্কতা থেকেই কৌশল পরিবর্তন করে অসি ওপেনার কিছুটা ধীরগতিতে ব্যাটিং করতে থাকেন। ‘আজ কিছু হতে চলেছে’ -ভেবে হয়তো ভক্তরাও উদগ্রীব ছিলেন! কিন্তু হায়, স্কোরবোর্ডে ওয়ার্নারের নামের পাশে ৩৩৫ রান হওয়ার পরই অধিনায়ক টিম পেইন ড্রেসিংরুম থেকে সংকেত দেন ফেরার জন্য!

এ যেন ডেভিড ওয়ার্নারের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের অবস্থা!

কেননা সবে তো টেস্টের দ্বিতীয় দিন। এখনো হাতে অনেক সময়। তা ছাড়া ওয়ার্নার ব্যাটিংও করছিলেন ওয়ানডে স্টাইলে। মাত্র ৪১৮ বল থেকে করেছেন ‘মহাকাব্যিক’ ৩৩৫! হয়তো আর ঘণ্টাখানেক থাকলেই অ্যাডিলেডে গতকাল সৃষ্টি হতে পারত নতুন ইতিহাস। কিন্তু হলো না! টিম পেইনের ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্তটা যে ডেভিড ওয়ার্নারের জন্য কতটা ‘পেইনফুল’ ছিল তা সহজেই অনুমেয়! অসি ওপেনারের শরীরী ভাষাতেও খানিকটা বিরক্তির ভাব চলে এসেছিল।

দিবারাত্রির টেস্টে এটিই কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ স্কোর। আগের সর্বোচ্চ ছিল পাকিস্তানের অধিনায়ক আজহার আলীর ৩০২। ওয়ার্নারের ক্যারিয়ারেও সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ম্যাথু হেইডেন  খেলেছিলেন ৩৮০ রানের ইনিংস। সব মিলে টেস্টের ইতিহাসে ওয়ার্নারের ইনিংসটা ১০ম সর্বোচ্চ।

ট্রিপল সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকার পর ইনিংস ঘোষণা -এমন ঘটনা অসিদের ক্ষেত্রে তৃতীয়বারের মতো ঘটল। এর আগে ১৯৯৮ সালে পেশোয়ারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অসি অধিনায়ক মার্ক টেলর ৩৩৪ রান করার পর নিজেই ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন। ২০১২ সালে ভারতের বিরুদ্ধে সিডনি টেস্টে ৩২৯ রানে অপরাজিত থাকার পরও মাইকেল ক্লার্ক নিজেই ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু টেলর কিংবা ক্লার্কের স্ট্রাইকরেট ওয়ার্নারের মতো ছিল না।

তা ছাড়া নিজেই ইনিংস ঘোষণা করেছেন বলে হয়তো কোনো দুঃখ নেই টেলর কিংবা ক্লার্কের, কিন্তু ওয়ার্নার? অসি ওপেনার কি নিজেকে বঞ্চিত মনে করছেন না!

এমন ঘটনায় যেন বঞ্চিত হলো ক্রিকেট বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তও! কেননা লারা ৪০০ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন ৬৮.৭২ স্ট্রাইকরেটে। সেখানে ওয়ার্নারের স্ট্রাইকরেট ৮০.১৪। তবে লারার ইতিহাস গড়ার সেই ম্যাচটি জিততে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু নিজেদের ব্যক্তিগত রেকর্ডের তোয়াক্কা না করায় ঠিকই জয় তুলে নিয়েছিলেন মার্ক টেলর ও মাইকেল ক্লার্ক।

এ ম্যাচে ওয়ার্নার ব্যক্তিগতভাবে বঞ্চিত হলেও দল হিসেবে দারুণ অবস্থায় অস্ট্রেলিয়া। তারা ৫৮৯ রানে ইনিংস ঘোষণার পর মাত্র ৯৬ রানে তুলে নিয়েছে পাকিস্তানের ৬ উইকেট। এখনো দিবারাত্রির এই টেস্টের তিন দিন বাকি। জয়টা যেন দেখতে পাচ্ছে স্বাগতিকরা!

ওয়ার্নারের ট্রিপল সেঞ্চুরির দিনে মার্নাস লাবুসকাজনি আউট হয়ে যান ১৬২ রানে। ব্যাট হাতে মাত্র ৩৬ রানের ছোট্ট একটি ইনিংস খেলেই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন স্টিভ স্মিথ। টেস্টের ইতিহাসে দ্রুততম ৭ হাজার রান করার রেকর্ড এখন তারই।

পাকিস্তান ‘মিরাকল’ কিছু না ঘটাতে পারলে এ ম্যাচে সহজে জিতেও যাবে অস্ট্রেলিয়া! তবে আক্ষেপটা থেকেই যাবে ডেভিড ওয়ার্নারের! তাই তো গতকাল দিনের খেলা শেষে তিনি মিডিয়াকে বলেছেন, ‘এমন সুযোগ কি আর বার বার আসে!’

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া : ৫৮৯/৩ (ডি.) (১২৭ ওভার) (ওয়ার্নার ৩৩৫*, লাবুসকাজনি ১৬২ ; শাহিন ৩/৮৮)

পাকিস্তান : ৯৬/৬ (৩৫ ওভার) (বাবর ৪৩*, মাসুদ ১৯; স্টার্ক ৪/২২)

সর্বশেষ খবর