বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

‘ঠান্ডা’ মিরপুরে ‘থান্ডার’ মিথুন

মেজবাহ্-উল-হক

‘ঠান্ডা’ মিরপুরে ‘থান্ডার’ মিথুন

ছবি : রোহেত রাজীব

দুপুর দুইটা বাজে! উদ্বোধনী ম্যাচের প্রথম ইনিংসে  খেলা চলছে। ‘সিলেট থান্ডার’ বনাম ‘চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স’। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রথম ১ নম্বর গেটের পাশে টিকিট কাউন্টার থেকে মাইকে  ঘোষণা চলছে ‘আপনারা কাউন্টার থেকে টিকিট কিনুন, মাঠে বসে খেলা উপভোগ করুন!’

কিন্তু যাদের উদ্দেশে বলা সেই দর্শক কোথায়? কাউন্টারের সামনে চিরচেনা সেই দৃশ্য (টিকিটের জন্য লম্বা লাইন) দেখা যায়নি। স্টেডিয়ামের প্রবেশ মুখে দর্শকের জটলা নেই। গেটে সিকিউরিটির দায়িত্ব পালনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও যেন অলস সময় পার করছেন!

স্টেডিয়ামও ফাঁকা। কেবলমাত্র পূর্ব পাশের গ্যালারিতে কয়েকশ দর্শক চুপচাপ বসে দেখছেন।  কোনো উত্তাপ নেই। মিরপুর যেন ঠান্ডা! আগের ছয় আসরের কোনো ম্যাচে কি এমন চিত্র দেখা গেছে কখনো! বলিউড সুপারস্টার সালমান খান, ক্যাটরিনা কাইফের নজরকাড়া স্টেজ শো ও ব্র্যান্ড ‘গুরু’ জেমস ভারতের সনু নিগম, খৈলাশ খেরের সূরের মূর্ছনায় যে হাইপ নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের পর্দা উঠেছিল মাঠের লড়াইয়ের উদ্বোধনী দিনে সেই উন্মাদনার ছিটেফোঁটাও লক্ষ্য করা যায়নি! যাও একটু দর্শক হয়েছিল তা বিকালের দিকে! তাও ২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে  টেনেটুনে ৫ হাজারও হয়েছিল কিনা!

তবে দর্শকদের স্বতঃস্ফূর্ত উন্মাদনা চোখে না পড়লেও বাইশগজ কিন্তু ঠিকই উত্তপ্ত ছিল। উত্তাপ ছড়িয়েছেন  মোহাম্মদ মিথুন। নিরুত্তাপ-ঠান্ডা মিরপুরে কাল সিলেটের এই তারকা ব্যাটসম্যান যেন সত্যিই ‘থান্ডার’ হয়ে গিয়েছিলেন। মিথুন মাত্র ৪৮ বলে করেছেন অপরাজিত ৮৪ রান। পাঁচটি বিশাল ছক্কা ও চার বাউন্ডারিতে সাজানো মনমুগ্ধকর এক ইনিংস। মিথুনের টি-২০ ক্যারিয়ারেই সেরা ইনিংস এটি। এক সময় মনে হচ্ছিল বুঝি সেঞ্চুরিই হয়ে যাবে। মিথুন হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেছিলেন নাসির  হোসেনের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে। মাত্র ৩০ বলে। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরির পর খানিকটা ধীরলয়ে ব্যাট করেন তিনি। যেখানে প্রথম ৩০ বলে করেছেন ৫৩ রান, সেখানে পরের ২৮ বলে ৩১ মাত্র! শেষের দিকে আর একটুখানি ব্যাট চালিয়ে  খেললে হয়তো গতকালই পেয়ে যেতেন টি-২০র প্রথম  সেঞ্চুরি। তারপরও কাল মিথুনের স্ট্রাইকরেট ছিল ১৭৫.০০।  যেখানে আন্তর্জাতিক টি-২০তে তার স্ট্রাইকরেট একশরও নিচে। আর ঘরোয়া টি-২০তে তার গড় স্ট্রাইকরেট ১১৬.৩৯। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে মনে হবে কাল যেন স্বভাব বিরুদ্ধ ‘মারকুটে’ ব্যাটিং করেছেন। মিথুনের ঝড়টা সবচেয়ে বেশি গেছে চ্যালেঞ্জার্সের নাসুম আহমেদের ওপর দিয়ে। দলীয় ১৩তম ওভারে এই বোলারের ওভার থেকে মিথুন নিয়েছেন ২৪ রান। তিন ছক্কা ও তিনটি ডাবলস। তবে জাতীয় দলের এই তারকার ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ের দিনেও অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ১৬২ রানের বেশি করতে পারেনি সিলেট। তাই জিততেও পারেনি দলটি।

মিথুনের দিনে ঝড় উঠেছিল ইমরুল কায়েসের ব্যাটেও। ৩৮ বলে খেলেন ৬১ রানের ইনিংস। দুই বাউন্ডারির সঙ্গে তার ইনিংসে ছিল পাঁচটি বিশাল ছক্কার মার। ইমরুলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই ১৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে এক ওভার হাতে রেখে ৫ উইকেটে জিতে যায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। উদ্বোধনী ম্যাচে লড়াইটা জমজমাট না হলেও ছক্কা-চারের কমতি ছিল না। দুই ইনিংস মিলে ১৬ ছক্কা এবং চার ২১টি। প্রথম ম্যাচে নজর কেড়েছে আরেকটি বিষয়, মাঠের পশ্চিম পার্শ্বের জায়ান্ট স্ক্রিনে ‘চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স’ নামটি দেখাচ্ছিল ‘অট্টগ্রাম চ্যালেন’! এই ডিজিটাল যুগেও মিডিয়াকে দেওয়া হলো হাতে লেখা খেলোয়াড় তালিকা (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)!

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সেলিব্রেটি টুর্নামেন্টের প্রথম দিনে ভুলগুলো পাশ কাটিয়ে আলোচনায় উঠে আসুক মিথুনের ‘থান্ডার’ ব্যাটিং কিংবা ইমরুলের ক্যারিশমা- এমনটাই কাম্য।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

সিলেট থান্ডার : ১৬২/৪ (২০ ওভার) (মিথুন ৮৪*। রুবেল ২/২৭)। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ১৬৩/৫ (১৯ ওভার) (ইমরুল ৬১, নাজমুল ২/২৩)

ফল : চট্টগ্রাম ৫ উইকেটে জয়ী

কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স : ১৭৩/৭ (২০ ওভার) (দানুশ সানাকা ৭৫)

রংপুর রেঞ্জার্স : ৬৮/১০ (১৪ ওভার) (আল আমিন ৩/১৪)

ফল : কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ১০৫ রানে জয়ী।

সর্বশেষ খবর