সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
মুক্তিযুদ্ধে ক্রীড়াবিদদের অবদান

৪৮ বছরেও নির্মাণ হয়নি স্মৃতিফলক

কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে কিন্তু স্মৃতিফলক নির্মাণের প্রয়োজন কেউ মনে করেন না। বেশ কজন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী স্মৃতিফলক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কথাতেই বন্দী থাকে। যেখানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হতে চলেছে সেখানে ক্রীড়াঙ্গনে স্মৃতিফলকের কোনো খবরই নেই

মনোয়ার হক

৪৮ বছরেও নির্মাণ হয়নি স্মৃতিফলক

পতাকা হাতে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা -সংগৃহীত

স্বাধীনতার পর বেশি সময় লাগেনি। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের ফুটবলে জাতীয় দল গড়া হয়। সেবার মারদেকা কাপ দিয়েই জাতীয় দলের অভিষেক হয়। মালয়েশিয়া যাবার আগে ফুটবলাররা গণভবনে দেখা করতে যান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু তখন প্রধানমন্ত্রী। ফুটবলারদের দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। বললেন স্বপ্ন আমার পূরণ হতে চলেছে। আমাদের জাতীয় দল প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছে। কী যে আনন্দ লাগছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।

বঙ্গবন্ধু এরপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বললেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ক্রীড়াবিদদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। যুদ্ধ করতে গিয়ে অনেকে শহীদ হয়েছেন। আবার স্বাধীন বাংলা দল ফুটবল খেলে মুক্তিযুদ্ধে ফান্ড সংগ্রহ করেছে। জাতি যেন তোমাদের নাম মনে রাখে সেজন্য ঢাকা স্টেডিয়ামের পাশে শহীদ ক্রীড়াবিদ, স্বাধীন বাংলার প্রতিটি ফুটবলারের নাম লিখে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হবে। তবে এজন্য আমাকে সময় দিতে হবে। হুট করে এত বড় কাজ করা সম্ভব নয়। তোমরা দেশের গর্ব। জাতি কখনো ভুলবে না।’

১৯৭৩ সালে ক্রীড়াঙ্গনে স্মৃতিফলকের ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালে ঘাতকদের হাতে শহীদ হওয়ায় তিনি তা দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু এর পর কেন হলো না? এটাতো কোনো দলীয় বিষয় নয়। জাতির গর্বের। কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে কিন্তু স্মৃতিফলক নির্মাণের প্রয়োজন কেউ মনে করেন না। বেশ কজন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী স্মৃতিফলক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কথাতেই বন্দী থাকে। যেখানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হতে চলেছে সেখানে ক্রীড়াঙ্গনে স্মৃতিফলকের কোনো খবরই নেই। এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে।

১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের অনুমতি ক্রমেই ফুটবল দল গঠন হয়। স্বাধীন বাংলা বেতারে খেলোয়াড়দের যোগদানের আহ্বান জানানো হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুটবলাররা খেলতে যান মাতৃভূমির টানে। ভারতের যেখানে খেলেছে সেখানে উপচেপড়া দর্শকের সমাগম হয়েছে। দিলিপ কুমার, মনসুর আলী খান পতৌদির মতো কিংবদন্তিরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। শুধু মাঠে খেলা নয় অনেকে সরাসরি পাকিস্তানি আর্মিদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছেন। শহীদ হয়েছেন জনপ্রিয় সংগঠক মুস্তাক, ক্রিকেটার জুয়েল, ফুটবলার কালে খাঁ, মিরাজ ও খোকন রায়।

হাফিজউদ্দিন, নূরুন নবী, সংগঠক সাদেক হোসেন খোকা এরা বড় ধরনের অপারেশনে অংশ নেন। জুয়েলতো শহীদই হন। মুক্তিযুদ্ধে যেখানে ক্রীড়াবিদদের এত ত্যাগ সেখানে সামান্য স্মৃতিফলক গড়ে তাদের সম্মান জানানো হয়নি। বরং অনেকে অবহেলা আর অর্থ কষ্টে মারাও গেছেন। স্বাধীন বাংলার ফুটবলার আইনুলের লাশ দাফনের সময় গার্ড অব অনার জানিয়ে সম্মানও জানানো হয়নি।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার ছিলেন তানভীর মাজহার ইসলাম তান্না। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স বড় জোর ১৮ কিংবা ১৯ হবে। আজাদ বয়েজে ক্রিকেট খেলতেন তখন। এই খেলা পাগল তরুণ জীবনবাজি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। স্মৃতিফলকের প্রসঙ্গ উঠতেই তার মুখে কষ্টের হাসি ফুটে উঠল। বললেন, ‘বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাকে হত্যার কারণে তা শুরু করতে পারেননি। কিন্তু পরবর্তীতে যারা এসেছেন তারা কি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রায় প্রতিটি সেক্টরে স্মৃতিফলক আছে। ক্রীড়াঙ্গনে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্যস এই পর্যন্ত। আমরা আর কিছুই বলব না। অনেক বলেছি, কোনো লাভ হয়নি। তবে আশা করি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার থাকা অবস্থায় স্মৃতিফলক দেখতে পারব।’

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সহ-অধিনায়ক প্রতাপ শংকর হাজরা বলেন, ‘ফজলুর রহমান পটল যখন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তখন ক্রীড়াঙ্গনের স্মৃতিফলক নিয়ে পিন্টু ও আমার সঙ্গে একাধিকবার আলাপও হয়েছিল। কোন পাথরে খেলোয়াড়দের নাম খোদাই করা হবে তাও চূড়ান্ত করা হয়েছিল। কি রহস্যে তা হলো না আমার জানা নেই।’

সর্বশেষ খবর