শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
রাইলি রুশোর অদ্ভুত নৃত্য

রুশোর ‘পাইপ’ সেলিব্রেশন

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

রুশোর ‘পাইপ’ সেলিব্রেশন

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি করেন খুলনা টাইগার্সের দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো। গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হাফ সেঞ্চুরি উদযাপন করেন হেলমেট খুলে ব্যাট মাটিতে রেখে ডান হাত মুখের কাছে নিয়ে বাঁশি বাজানোর ভঙ্গিতে।

ব্যাট ও হেলমেট বাইশগজে রেখে ডান মুখের কাছে নিলেন- যেন বাঁশি বাজাচ্ছেন! আর বাম হাত প্রসারিত  ঢেউয়ের মতো করলেন- নাচের মুদ্রা!

সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গতকাল হাফ সেঞ্চুরির পর এভাবেই সেলিব্রেশন করেছেন খুলনা টাইগার্সের আফ্রিকান তারকা রাইলি রুশো।

আইডিয়াটা বের করেছেন ইন্টারনেট ঘেঁটে। ফিফার  প্লেস্টেশন গেম থেকে বাছাই করে নিয়েছেন ‘পাইপ’  সেলিব্রেশন। রাইলি রুশো ব্যাট হাতে গতকাল বাইশগজে নামার আগে সতীর্থদের বলেছেন, হাফ  সেঞ্চুরি করলেই তিনি দর্শকদের দেখাবেন ‘পাইপ’  সেলিব্রেশন।

এমন সেলিব্রেশন আগে কখনো ক্রিকেটে দেখা যায়নি। হাফ সেঞ্চুরির পর খুলনাটা টাইগার্সের প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান এমন উদযাপন দেখে যেন মুগ্ধ  স্টেডিয়ামের দর্শকরা! প্রেস কনফারেন্সে সেলিব্রেশন নিয়ে প্রশ্ন করতেই, স্বভাবসূলভ লাজুক হাসি রুশোর মুখে। তারপর বললেন, ‘আমি ইন্টারনেটে ফিফার প্লে স্টেশন গেমে এমন সেলিব্রেশন দেখেছিলাম। ভালো লেগেছিল। তাই সবাইকে বলেছিলাম, যদি আজ (গতকাল) হাফ  সেঞ্চুরি করি তবে এমনভাবে উদযাপন করব।’

বাংলাদেশের বাইশগজ তার জন্য বড় পয়মন্ত! বিপিএলের আগে আসরে ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এবারও শুরুটা হয়েছিল উড়ন্ত। প্রথম ম্যাচেই অপরাজিত ৬৪ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে ৪২। গতকাল খেললেন ৩১ বলে হার না মানা ৬৬ রানের ইনিংস।

আগের আসরে করেছিলেন ৫৫৮ রান। এই আসরে তিন ম্যাচেই করেছেন ১৭২ রান। তিন ইনিংসের মধ্যে দুই ইনিংসে অপরাজিত থাকায় গড়ও তাই ১৭২!

বাংলাদেশের মাটিতে নিজের ব্যাটিং রহস্য সম্পর্কে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যাই হোক না কেন আমি উপভোগ করব। এ কারণেই আমি আমার সেরা পারফরম্যান্সটা দেখাতে পারি। এর পেছনে কিছুটা  সৌভাগ্যের ছোঁয়াও আছে। আমি ক্রিকেটকে ভালোবাসি। আমি সব সময় চেষ্টা করি মাথা ঠা া রাখতে।’

গতকাল খুলনা জয় পেয়েছে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। ৪৫ বল হাতে থাকতেই খেলা শেষ। রংপুর  রেঞ্জার্স ন্যূনতম প্রতিরোধও গড়ে তুলতে পারেনি। উত্তরাঞ্চলের দলটি কাল প্রথমে ব্যাট করে করেছিল মাত্র ১৩৭ রান। মোহাম্মদ নাঈম ৩২ বলে ৪৯ রানের ইনিংস খেলে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় দলের ওপেনার রান আউট হওয়ার পর যেন  ভেঙে পড়ে রেঞ্জার্সের ইনিংস। খুলনার দুই বোলার শফিউল ইসলাম সুহাস ও মোহাম্মদ আমির ধসিয়ে দিয়েছে রংপুরকে। চার ওভারের বোলিং কোটায় শফিউল ২১ রান নিয়েছেন ৩ উইকেট, ২৪ রানে দ্রুই উইকেট শিকার করেন আমির।

তারপর ১৩৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে রুশোর ঝড়ে ১২.৩ ওভারেই জিতে যায় টাইগার্স। যে উইকেটে আমির-শফিউলদের বিরুদ্ধে ব্যাট করতে  নেমে নাস্তানাবুদ রংপুরের ব্যাটসম্যানরা, সেখানে জাতীয় দলের তিন তারকা বোলার মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি কোনো রকম প্রতিরোধই গড়তে পারেননি। যেখানে রেঞ্জার্সের  বোলাররা পাত্তাই পেলেন না সেখানে খুলনার পেসার শফিউল হলেন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়। স্পোর্টিং উইকেটে সাফল্যের পেছনের কথা জানাতে গিয়ে শফিউল বলেন, ‘এমন উইকেটে বোলারদের বেশি মনোযোগ দিতে হয়। পরিকল্পনা মতো লাইনলেন্থ ঠিক রেখে বল করেছি তাই সফল হয়েছি।’

তিন ম্যাচে খুলনার টানা তৃতীয় জয়। রংপুরের টানা চার হার। রেঞ্জার্সের ক্রিকেটাররা যেখানে দিশাহারা  সেখানে টাইগার্সের ক্রিকেটাররা যেন পারফরম্যান্সে নিজেদের মধ্যে মধুর এক প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন, কে কার চেয়ে ভালো করতে পারেন!

অধিনায়ক হিসেবে এমন মধুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে উপভোগই করছেন মুশি। দলের অন্য সতীর্থরা যখন ভালো করেন তখন তো সবচেয়ে বেশি খুশি ক্যাপ্টেনেরই হওয়ার কথা। কাল ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে হাসতে হাসতে মুশি বলেন, ‘ভালোই লাগছে। দল যখন জয় পায় তখন অন্যরকম লাগে।’

মুশফিকদের নিজের মধ্যে ইতিবাচক ‘পারফরম্যান্স’ লড়াই-ই তো খুলনা টাইগার্সকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের দিকে।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

রংপুর রেঞ্জার্স : ১৩৭/৯ (২০ ওভার) (সফিউল ৩/২১)।

খুলনা টাইগার্স : ১৩৮/২ (১২.৩ ওভার) (রুশো ৬৬*)।

ফল : খুলনা ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : শফিউল।

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ২৩৮/৪ (২০ ওভার)

কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স : ২২২/৭ (২০ ওভার)

ফল : চট্টগ্রাম ১৬ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : ওয়ালটন

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর