সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বসুন্ধরায় আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স

রাশেদুর রহমান

বসুন্ধরায় আধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স

শহুরে কোলাহল নেই এখানে। ধুলোবালিতে দূষিত নয় বাতাস। চারপাশে সবুজের সমারোহ। এরই মধ্যে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন ব্লকে গড়ে উঠছে এক অত্যাধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স। মাত্র কয়েক মাস আগে কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে উন্নত মানের ড্রেনেজ সিস্টেমসহ ফুটবল স্টেডিয়ামের কাজ শেষ হয়েছে, যেখানে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার কিছুক্ষণ পরই মাঠ শুকানোর ব্যবস্থা আছে। বসুন্ধরা কিংস এই মাঠে প্রীতি ম্যাচও খেলেছে বেশ কয়েকটা। কেবল ফুটবলই নয়, ক্রিকেট ও হকি স্টেডিয়াম, ফুটসাল, বাস্কেটবল, ভলিবল ও কাবাডি কোর্ট, গলফ ড্রাইভিং রেঞ্জ, শুটিং ও আরচারি রেঞ্জ, সুইমিং পুল, জিমন্যাশিয়ামÑ কী নেই বসুন্ধরা মাল্টি স্পোর্টস অ্যারেনাতে!

একসময় দক্ষিণ এশিয়ার ক্রীড়া জগতে বেশ দাপট ছিল বাংলাদেশের। ফুটবল, হকি আর কাবাডি নিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে ছিল উৎসাহ-উদ্দীপনা। সেই সোনালি অতীত এখন হারিয়ে গেছে কালের গহ্বরে। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে আবার ছুটতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন। সাফল্যের আকাশ ছোঁয়ার এ যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। তিনি শুধু ক্রীড়া প্রেমিক নন, ছিলেন তারকা হকি খেলোয়াড়। তার বড় ভাই আবদুস সাদেক ক্রীড়াঙ্গনের কিংবদন্তি।

বসুন্ধরা কিংস এরই মধ্যে ফুটবলে সাড়া জাগিয়েছে। হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের মিশনে আবির্ভাবের কয়েক বছরের মধ্যেই অনেকটা সফল হয়েছে ক্লাবটি। দেশের মাটিতে সফল হওয়ার পর তাদের লক্ষ্য এবার এশিয়া জয় করা। কিংস ছাড়াও বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালনায় ফুটবলের উন্নয়নে ছুটে চলেছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া ইভেন্টের স্পন্সর হিসেবে বড় ভূমিকা রাখছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে ক্রীড়া কমপ্লেক্স।

প্রায় ২০০ বিঘা জমির ওপর চলছে বিরাট কর্মযজ্ঞ। সম্পূর্ণ আধুনিক একটা ক্রীড়া কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। ক্রীড়া কমপ্লেক্সের পাশ ঘেঁষেই হবে দৃষ্টিনন্দন এক লেক, যার নীল জলরাশি সবুজ-শ্যামল ছায়াঢাকা কমপ্লেক্সের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। ভলিউমজিরো আর্কিটেক্টের ডিজাইনে এ কমপ্লেক্স বিভক্ত দুটি জোনে। নর্থ ও সাউথ। নর্থ জোনে এএফসির শর্ত মেনে ১০ হাজার দর্শকের গ্যালারিসহ ফুটবল স্টেডিয়াম থাকছে। প্রীতি ক্রিকেট আয়োজনের জন্যও থাকছে স্টেডিয়াম। এ ছাড়া এই জোনে আছে একটি ফুটসাল কোর্ট এবং ইনডোর গেমস ও সুইমিং পুল কমপ্লেক্স। দুটি সুইমিং পুল থাকছে এখানে। একটি আট লেনের ৫০ মিটারের, অন্যটি ছয় লেনের ২৫ মিটারের। নর্থ জোনের চেয়ে বেশ বড় আকারের হচ্ছে সাউথ জোন। এখানে ১৫ হাজার দর্শকের গ্যালারিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট স্টেডিয়াম হবে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সব সুবিধা থাকবে এখানে। অনুশীলন মাঠের পাশাপাশি আলাদা নেট প্র্যাকটিসের ব্যবস্থাও থাকছে। সাউথ জোনে হবে একাডেমি এবং ক্লাব বিল্ডিং, যেখানে ডরমেটরিতে ৪০০ থেকে ৫০০ জনের আবাসনের সুব্যবস্থা থাকবে। এই একাডেমি ঘিরে অনেক বড় স্বপ্ন দেখছে বসুন্ধরা কিংস। বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, হেড অব অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড  ফিন্যান্স এবং বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘একাডেমি হচ্ছে খেলোয়াড় তৈরির কারখানা। এখান থেকেই দুর্বলতা কাটিয়ে একজন খেলোয়াড় পরিপূর্ণ হয়ে উঠবেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লড়াইয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবেন।’

এখানেই শেষ নয়। আর্টিফিশিয়াল টার্ফে খেলা হবে হকি, টেনিস কোর্ট, বাস্কেটবল কোর্ট, ভলিবল কোর্ট, স্কোয়াশ কোর্র্ট, মাল্টিপারপাস স্পোর্টস কোর্ট, কাবাডি কোর্ট এবং একটি ফুটসাল কোর্ট থাকবে বসুন্ধরা মাল্টি স্পোর্টস অ্যারেনার সাউথ জোনে। এ ছাড়া দৃষ্টিনন্দন ল্যান্ডস্কেপ পার্ক আর মাল্টিপারপাস স্টুডিও তো থাকছেই। দর্শকরা খেলা দেখার পাশাপাশি পার্কে ভ্রমণের বিনোদনও পাবেন এখানে। সাউথ জোনে এসবের পাশাপাশি গড়ে উঠছে পেশাদার ফুটবলারদের অনুশীলনের জন্য আধুনিক মাঠ। এসব মাঠে থাকবে ব্রডকাস্ট কোয়ালিটির ফ্লাডলাইট। সব মিলিয়ে বসুন্ধরা মাল্টি স্পোর্টস অ্যারেনা চোখ ধাঁধিয়ে দেবে ক্রীড়ামোদীদের।

 

এই ডিসেম্বরেই আরচারিতে এসএ গেমসে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। ১০টি ইভেন্টেই জিতেছে সোনার পদক। বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে থাকছে ৯০ মিটার আরচারি রেঞ্জ, যেখানে অনুশীলন করে ভবিষ্যতে হাজারো রোমান সানা, ইতি খাতুন গড়ে উঠবে। পাশাপাশি থাকবে একটি শুটিং রেঞ্জ, যেখানে ৫০, ২৫ ও ১০ মিটার রেঞ্জে অনুশীলন করতে পারবেন শুটাররা। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান মনে করেন, অসাধারণ এই ক্রীড়া কমপ্লেক্স বদলে দেবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস। সফলতার এক নতুন পথে ছুটতে শুরু করবে বাংলাদেশ।

 

অবশ্য ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতিতে এটাই প্রথম কোনো পদক্ষেপ নয় বসুন্ধরা গ্রুপের। এর আগেও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের জন্য আধুনিক প্র্যাকটিস ফিল্ড তৈরি করেছে গ্রুপটি। নীলফামারীতে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম সংস্কার করে আধুনিক রূপ দিয়েছে। বসুন্ধরা কিংসের হোম ভেন্যু এখনো নীলফামারীতেই আছে। ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসান আশা করেন, এক মৌসুম পরই কিংসের হোম ভেন্যু বসুন্ধরায় নিয়ে আসা হবে। অভিষেক মৌসুমেই পেশাদার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়া বসুন্ধরা কিংস হোম গ্রাউন্ডের দিক দিয়েও ইতিহাস গড়তে চলেছে। পেশাদার লিগের কোনো ক্লাবেরই ঢাকায় নিজস্ব হোম গ্রাউন্ড নেই। কিংসই প্রথম এই ধারা শুরু করতে চলেছে।

 

উইকিপিডিয়ার দেওয়া তথ্যমতে, এশিয়ায় খুব বেশি ক্রীড়া কমপ্লেক্স নেই। ফিলিপাইন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ইসরায়েলেরই কেবল ক্রীড়া কমপ্লেক্স আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় দেরাদুনের ক্রীড়া কমপ্লেক্সকেই সবচেয়ে বড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে বেসরকারি উদ্যোগে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ক্রীড়া কমপ্লেক্স হতে যাচ্ছে বসুন্ধরা মাল্টি স্পোর্টস অ্যারেনা। আর এই কমপ্লেক্স নিয়ে এখনই ক্রীড়াঙ্গনের বিশেষজ্ঞরা বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। অত্যাধুনিক এই কমপ্লেক্স থেকে ভবিষ্যতে হাজারো ক্রীড়াবিদ বেরিয়ে আসবে, যারা বাংলাদেশের পতাকা বিশ্বমঞ্চে উড়িয়ে গৌরব বয়ে আনবে। ইমরুল হাসানের ভাষ্যমতে, কমপ্লেক্সের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হবে আগামী বছরের ডিসেম্বরে। তিনি জানালেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাসকারীরা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সুবিধা নিতে পারবেন সহজেই।

সর্বশেষ খবর