শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

তিনি নেতা, তিনিই প্রেরণা

কলিনড্রেস সম্পর্কে বসুন্ধরা কিংস কোচ অস্কার ব্রুজোন

রাশেদুর রহমান

তিনি নেতা, তিনিই প্রেরণা

ড্যানিয়েল কলিনড্রেস গতকাল দারুণ খেললেন। দলকে বিজয়ের পথে পরিচালিত করলেন। ব্রুজোন যেমন বলেছেন, ‘মাঠে আমাদের ফুটবল দর্শনটা কলিনড্রেসই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি আমাদের নেতা। তিনিই আমাদের প্রেরণা।’

 

অভিষেক মৌসুমে দর্শকদের হৃদয় জয় করেছিল বসুন্ধরা কিংস। চ্যাম্পিয়ন হয় পেশাদার লিগ এবং স্বাধীনতা কাপে। অধরা ছিল কেবল ফেডারেশন কাপ। এবার সেই অধরা ট্রফিটাও হাতের খুব নাগালে চলে এলো। গতকাল টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বাংলাদেশ পুলিশ এফসিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল নিশ্চিত করল অস্কার ব্রুজোনের শিষ্যরা। গতবার আবাহনীর কাছে হেরে ট্রফিবঞ্চিত হলেও এবার আর কোনো ভুল করতে রাজি নয় দলটা। ফাইনালে রহমতগঞ্জকে হারিয়ে মৌসুমের শুরুতেই রাজার আসনে বসতে চায় কিংসরা। আগের ম্যাচগুলোতে চেনা কিংসকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও গতকাল কিংস ফিরেছে কিংস রূপেই।

অস্কার ব্রুজোনের সব কাজেই সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা থাকে। দলের প্রতিটা ফুটবলারকে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে গড়ে তোলেন তিনি। এই যেমন তপু বর্মণ। একজন পুরো দস্তুর ডিফেন্ডার। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলে পেনাল্টি শুটার হিসেবে বেশ নাম কুড়াতে পারেন তিনি। গতকাল ম্যাচের একমাত্র পেনাল্টিতে শুট নিতে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করলেন তপু। নিজের ওপর পরম আস্থায় দুরন্ত গতির শটে পরাস্ত করেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক আরিফুজ্জামান হিমেলকে। তপুর এই আত্মবিশ্বাসের পেছনের কারিগর অস্কার ব্রুজোন। অনুশীলনে এই ডিফেন্ডারকে দিয়ে প্রচুর ঘাম ঝরিয়েছেন তিনি। গড়ে তুলছেন একজন সেরা পেনাল্টিশুটার হিসেবে। কেবল তপু বর্মণই নন, অস্কার ব্রুজোনের দলে প্রতিটা ফুটবলারই গড়ে উঠছেন বিশেষ পরিচর্যায়। মাঠের লড়াইয়ে এর ছাপটা চোখে পড়ে বেশ।

ফেডারেশন কাপ শেষ হচ্ছে ঝড়ো গতিতে। ফুটবলাররা মোটেও বিশ্রাম পায়নি। ঝড়ো গতির এ টুর্নামেন্টের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছিলেন অস্কার ব্রুজোন। গতকাল সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও যেমন বিশ্রাম দিয়েছেন দলের অন্যতম সেরা ফুটবলার মোহাম্মদ জালাল কদুকে। এর আগে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বেশ কয়েকজনকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন তিনি। এর সুফলটাও পেয়েছেন। নব্বই মিনিট খেলার মতো শক্তি পাচ্ছে কিংস। অস্কার ব্রুজোন তো বলেই দিলেন, ‘জালালকে বিশ্রাম দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে শক্তি সঞ্চয় করা। আমার ছেলেরা প্রচুর পরিশ্রম করছে। তবে ফিজিওরা দারুণ কাজ করছেন। তারা ছেলেদের নব্বই মিনিট খেলার মতো করে গড়ে তুলছেন।’ ফাইনালে পূর্ণ শক্তির জালাল আরও ভয়ঙ্কর রূপে ফিরবেন বলেই তিনি আশা করেন।

ড্যানিয়েল কলিনড্রেস গতকাল দারুণ খেললেন। দলকে বিজয়ের পথে পরিচালিত করলেন। ব্রুজোন যেমন বলেছেন, ‘মাঠে আমাদের ফুটবল দর্শনটা কলিনড্রেসই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি আমাদের নেতা। তিনিই আমাদের প্রেরণা।’ গতকাল কলিনড্রেস নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করেছেন। পেনাল্টির পেছনের কারিগর ছিলেন তিনি। আর দ্বিতীয় গোলটা তো নিজেই করলেন। অবশ্য এখন কলিনড্রেসের চারপাশে জমা হয়েছেন জালাল কদু আর নাজারভের মতো তারকা ফুটবলাররা। যারা কিংসের আক্রমণাত্মক ফুটবলে যোগ করেছেন ভিন্ন মাত্রা।

কিংসের ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে। পুলিশ এফসি বিদায় নিয়েছে। ১৯৭৫ সালে পুলিশ সর্বশেষ কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছিল। সেবার তারা হেরেছিল বিজেএমসির কাছে।

আর ফেডারেশন কাপে গতবার ফাইনালে আবাহনীর কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল কিংস। এবার রহমতগঞ্জকে হারিয়ে গতবারের ব্যর্থতা ভুলতে চায় কিংস। অবশ্য অস্কার ব্রুজোন রহমতগঞ্জের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা রেখেই দল মাঠে নামাবেন।

 

গতকাল ম্যাচের ১২ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বসুন্ধরা কিংস। ড্যানিয়েল কলিনড্রেস ব্যাক ভলিতে দুর্দান্ত এক গোল করেন। কিন্তু রেফারি সুজিত লাইন্সম্যানের ইশারায় অফসাইডের অজুহাতে গোলটা বাতিল করেন। বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা বার বার আবেদন করেও রেফারির সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেননি। অবশ্য এগিয়ে যেতে খুব একটা সময় নেয়নি কিংস। ১৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন তপু বর্মণ। ড্যানিয়েল কলিনড্রেসকে ডি বক্সের ভিতরে ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান বাড়ায় বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়নরা। ৪৯ মিনিটে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার আর্থার মুলাদজানভ ও তারা খানকে পরাস্ত করে বেশ খানিকটা পথ ড্রিবলিং করে ডি বক্সের ভিতর থেকে বুলেটগতির শটে গোল করেন কলিনড্রেস। এরপর ম্যাচের যোগ করা সময়ে ডি বক্সের ভিতর থেকে প্রতিপক্ষের তিনজন ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে গোল করেন কিংসের আর্জেন্টাইন ফুটবলার নিকোলাস দেলমন্তে। বসুন্ধরা কিংস ৩-০ গোলের দারুণ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।

 

গোলের বর্ণনা

বসুন্ধরা কিংস ১-০

ম্যাচের ১৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন তপু বর্মণ। বখতিয়ারের চমৎকার পাসে বল পেয়ে দ্রুত গতিতে ডি বক্সে প্রবেশ করেন ড্যানিয়েল কলিনড্রেস। তাকে রুখতে না পেরে পেছন থেকে ট্যাকল করেন পুলিশ এফসির ডিফেন্ডার তারা খান। সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পাশাপাশি হলুদ কার্ডও দেখান তারাকে।

 

বসুন্ধরা কিংস ২-০

ম্যাচের ৪৯ মিনিটে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার আর্থার মুলাদজানভ ও তারা খানকে পরাস্ত করে অনেকটা ড্রিবলিং করে বল নিয়ে ডি বক্সে প্রবেশ করেন কলিনড্রেস। ডান প্রান্ত থেকে তার বুলেটগতির শট রুখতে পারেননি পুলিশ এফসির গোলরক্ষক হিমেল।

 

বসুন্ধরা কিংস ৩-০

ম্যাচের যোগ করা সময়ে ডি বক্সের ভিতর থেকে প্রতিপক্ষের তিনজন ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে গোল করেন আর্জেন্টাইন ফুটবলার নিকোলাস দেলমন্তে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর