শিরোনাম
রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দ্য পিপলস চ্যাম্পিয়ন

মেজবাহ্-উল-হক

দ্য পিপলস চ্যাম্পিয়ন

মোহাম্মদ আলী

নাম ছিল ‘ক্যাসিয়াস মার্সেয়াস ক্লে জুনিয়র’- ইসলাম গ্রহণের পর হয়ে গেলেন মোহাম্মদ আলী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা। বিশ্বক্রীড়ার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় একটি নাম মোহাম্মদ আলী। এই মুষ্টিযোদ্ধা অসামান্য নৈপুণ্য দেখিয়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে যেমন আলোচিত তার চেয়েও অনেক বেশি আলোড়িত তাঁর প্রতিবাদী চরিত্রের কারণে। গোটা বিশ্বেই ছিল তাঁর কোটি কোটি ভক্ত। মোহাম্মদ আলীর মতো আর কোনো ক্রীড়াবিদ বিশ্বে এতটা জনপ্রিয় ছিলেন না।

মোহাম্মদ আলী মোট ৬১টি লড়াইয়ে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন ৫৬ বার। এর মধ্যে ৩৭ বার প্রতিপক্ষকে রীতিমতো নকআউট করে দিয়েছেন। এ কারণেই তাঁকে ডাকা হলো ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ নামে। তবে তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় ডাকনাম ‘দ্য পিপলস চ্যাম্পিয়ন’।

বিবিসি তাঁকে শতাব্দীর সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষণা করে। আলীর বক্সিং প্রশিক্ষণ শুরু করেন মাত্র ১২ বছর বয়সে। বক্সিংয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহের পেছনে রয়েছে মজার এক গল্প। নিজের পছন্দের বাইসাইকেল চুরি হওয়ায় পুলিশ স্টেশনে যান আলী। ওই পুলিশ স্টেশনে দায়িত্বরত ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা কাম বক্সিং প্রশিক্ষক জো মার্টিন। তিনি মোহাম্মদ আলীকে বলেন, ‘তুমি বক্সার হয়ে যাও, তাহলে নিজেই চোরকে শাস্তি দিতে পারবে!’ সেই শুরু...!

কিংবদন্তি এই বক্সারের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি। তিনি ২২ বছর বয়সে ’৬৪ সালে সনি লিস্টনকে পরাজিত করে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতেন। এর কয়েকদিন পর তিনি ‘নেশন অব ইসলাম’-এ যোগ দিয়ে তাঁর নাম পরিবর্তন করেন।

পত্রিকার একটি কার্টুন মোহাম্মদ আলীকে ধর্মান্তরিত হতে অনুপ্রাণিত করে। ঘটনাটি বেশ চমকপ্রদই...

একদিন রোলার স্কেটিং করে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ব্লেজার পরা এক ব্যক্তিকে পত্রিকা বিক্রি করতে দেখেন। পত্রিকাটি ছিল নেশন অব ইসলামের। পত্রিকার একটি কার্টুনে আলীর চোখ আটকে যায়। কার্টুনে একজন শেতাঙ্গ মালিক তার কৃষ্ণাঙ্গ দাসকে মারধর করে তাকে যিশুখ্রিস্টের কাছে প্রার্থনা করতে চাপ দিচ্ছেন। সেই কার্টুনের সার কথাকে নিজে ধারণ করেন। কৃষ্ণাঙ্গ মোহাম্মদ আলী তখন নিজেকে দাস মনে করতে থাকেন। সেই থেকে খ্রিস্টধর্ম থেকে তিনি দূরে থাকতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন।

আলীর প্রতিবাদী চরিত্র সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়। তখন সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু এতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান মোহাম্মদ আলী। এ অপরাধে তাঁর বক্সিং উপাধি কেড়ে নেওয়া হয়। এমনকি তাঁর বক্সিং প্রতিযোগিতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। যদিও ’৭১ সালে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। তবে ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে চার বছর তিনি বক্সিংয়ে অংশ নিতে পারেননি। যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ায় মোহাম্মদ আলীর প্রতি ওই সময় তরুণ প্রজন্ম জাদুর মতো আকর্ষিত হয়। গোটা বিশ্বে তখন মোহাম্মদ আলী যেন এক মহানায়ক। তবে বক্সিংজগতে ফিরে এসে আলী পুনরায় বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন ১৯৭৪ ও ’৭৮ সালে।

একটি বিদেশি সংস্থার হয়ে পাঁচ দিনের সফরে ১৯৭৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এসেছিলেন মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী বিখ্যাত মডেল ভেরোনিকা, মেয়ে লায়লা আলী। বাংলাদেশ সরকার খুশি হয়ে মোহাম্মদ আলীকে সম্মানসূচক নাগরিকত্বও প্রদান করেছিল। তখন পল্টনের বক্সিং স্টেডিয়ামের নামকরণ হয় মোহাম্মদ আলীর নামে। এই কিংদবন্তি ২০১৬ সালের ৩ জুন শ্বাসনালির সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে অ্যারিজোনায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর