সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের রাজা

মেজবাহ্-উল-হক

ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের রাজা

স্বপ্নের অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো সুযোগ পাওয়ার পরও ১৯৮০ মস্কো অলিম্পিকে খেলা হয়নি এক তরুণ অ্যাথলেটের! স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় ছটফট করতে থাকা সেই তরুণ অ্যাথলেট পরে অলিম্পিকের সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ানদের একজন হয়ে যান।

তাঁর ঝুলিতে ১০টি অলিম্পিক মেডেল। এর মধ্যে ৯টিই সোনা।

তিনি একাধারে লং জাম্প, ১০০ মিটার স্প্রিন্ট, ২০০ মিটার, ৪ গুণীতক ১০০ মিটার রিলে ও ৪ গুণীতক ২০০ মিটার রিলেতে ‘মাস্টার অ্যাথলেট’। অলিম্পিকে সোনাও জিতেছেন এই ইভেন্টগুলো থেকে। এ কারণেই তার একটি ছদ্মনাম ‘অলরাউন্ডার অ্যাথলেট’।

‘ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড’ এর রাজা এই মার্কিন কিংবদন্তি অ্যাথলেটের নাম ফ্রেডারিক কার্লটন লুইস। ক্রীড়াবিশ্বে তিনি ‘কার্ল লুইস’ নামে পরিচিত।

আমেরিকা ’৮০ মস্কো অলিম্পিক বয়কট করার পর যেন হৃদয় ভেঙে যায় লুইসের। কিন্তু ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের প্রতি তার আকর্ষণ কমেনি। বরং জেদ বেড়ে যায়। সংকল্প আরও দৃঢ় করেন। অধ্যবসায়ের ফল পান ’৮৪-তে। লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত সেই অলিম্পিকে মোট চারটি সোনা জিতেন- ১০০ মিটার, ২০০ মিটার, ৪ গুণীতক ১০০ মিটার রিলে ও লং জাম্পে।

১৯৮৮ সিউল অলিম্পিকেও লং জাম্প ও ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতেন। তবে ২০০ মিটারে সিলভার পান। চার বছর পর ১৯৯২-এ বার্সেলোনায় আবারও ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ঝড় তোলেন লুইস। জিতেন দুই স্বর্ণপদক। বয়স বাড়তে থাকায় পরের আসর ১৯৯৬-এ আটলান্টা অলিম্পিকে তিনি কেবলমাত্র পছন্দের লং জাম্পে অংশগ্রহণ করেন এবং সোনা জিতেন। অলিম্পিকের ইতিহাসে লুইসই একমাত্র তারকা যিনি লং জাম্প থেকে টানা চার আসরে সোনা জিতেছেন।

অলিম্পিকে এক ইভেন্ট থেকে টানা চার আসরে পদক জয়ের রেকর্ডই আছে মাত্র আর দুটি।

কার্ল লুইসের জন্ম ১৯৬১ সালের ১ জুলাই আমেরিকার আলাবামায়। কার্ল লুইসের মা ইভেলিন লুইস ছিলেন তারকা হার্ডলার। তাঁর বড় ভাই ক্লেভল্যান্ড লুইস ছিলেন আমেরিকার তারকা ফুটবলার। ছোট বোন ক্যারল লুইসও ছিলেন তারকা লং জাম্পার। লুইসের বাবা উইলিয়াম লুইস ছিলেন স্থানীয় অ্যাথলেট কোচ। সেই ছোটবেলা থেকেই বাবার কাছে অ্যাথলেটিকসে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই লং জাম্প প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। জুনিয়র লং জাম্পে সর্বকালের সেরাদের র‌্যাঙ্কিংয়ে চতুর্থ স্থানে ছিলেন কার্ল লুইস। তাঁকে ভর্তি করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ করে তাঁর পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু কার্ল লুইস ভর্তি হন টেক্সাসের হাউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে কোচ টম তেরেজের তত্ত্বাবধানে লুইসের সামর্থ্য যেন আরও বেড়ে যায়।

লুইস ২৬ ফুট ৮ ইঞ্চি লাফ দিয়ে হাইস্কুলের রেকর্ড ভাঙেন। ১৯৮০ সালে ২৭ ফুট সাড়ে ৪ ইঞ্চি লাফ দিয়ে সৃষ্টি করেন নতুন রেকর্ড। এরপর লং জাম্পের পাশাপাশি স্প্রিন্টেও মনোযোগী হন। প্রতিটি ইভেন্টেই তিনি সফল হয়েছেন। প্রচÐ মনের জোর, দৃঢ় সংকল্প ও কঠোর অধ্যবসায়ই লুইসকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের চূড়ায়।

 

কার্ল লুইস

১০০ মিটার : ৯.৮৬ সে. (১৯৯১, টোকিও)।

২০০ মিটার : ১৯.৭৫ সে. (১৯৮৩, ইন্ডিয়ানা)।

লং জাম্প : ৮.৮৭ মিটার (২৯-১, টোকিও)।

৪ ১০০ মিটার রিলে : ৩৭.৪০ সে. (আগস্ট ১৯৯২, বার্সেলোনা)।

৪ x ২০০ মি. রিলে : ১:১৮.৬৮ মি. (১৯৯৪)।

১৯৯৯ সালে লুইস আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির ভোটে ‘শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ’ নির্বাচিত হন। একই বছর আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন লুইসকে ‘শতাব্দীর সেরা অ্যাথলেট’ হিসেবে ঘোষণা করে। আমেরিকার জনপ্রিয় স্পোর্টস ম্যাগাজিন ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’ তাঁকে ‘শতাব্দীর সেরা অলিম্পিয়ান’ হিসেবে ঘোষণা করে।

২০১০ সালে লুইস আমেরিকান অ্যাথলেটদের বিরল সম্মান ‘নিউ জার্সি হল অব ফেম’-এ অন্তর্ভুক্ত হন।

২০১৬ সালে তিনি ‘টেক্সাস ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড কোসেস অ্যাসোসিয়েশন হল অব ফেম’- অন্তর্ভুক্ত হন।

সর্বশেষ খবর