বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

লাইফলাইন পেল কুমিল্লা

মেজবাহ্-উল-হক

লাইফলাইন পেল কুমিল্লা

ইবাদতের ওভারে কাভারের ওপর দিয়ে সৌম্য সরকার বল আঁচড়ে ফেলেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ভিআইপি গ্যালারিতে। দেখার মতো এক ছক্কা! ব্যাট হাতে এই টুর্নামেন্টে প্রত্যাশিত রূপে দেখা না গেলেও সৌম্য যেন বুঝিয়ে দিলেন তিনি কতটা ‘টেকনিক্যালি সাউন্ড’ ব্যাটসম্যান!

মনমুগ্ধকর এই শটে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স পৌঁছে যায় জয়ের দ্বারপ্রান্তে। সৌম্য পৌঁছে যান ৪৮ রানে। ২০তম ওভারের প্রথম বলে দারুণ একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সৌম্য ৩০ বলে হাফ সেঞ্ঝুরি ছুঁয়ে ফেলেন, সেই সঙ্গে নিশ্চিত করে ফেলেন কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের জয়ও।

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে ৫ উইকেটে পাওয়া এই জয়টা যেন কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের শেষ লাইফলাইন! ১০ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট এখন ১০। পরের দুই ম্যাচে জিততে পারলে এবং ভাগ্য সহায় থাকলে প্লে-অফে খেলার সুযোগ হলেও হতে পারে! অনিশ্চয়তার ক্রিকেটে কখন কী ঘটে বলা তো যায় না!

সিলেট থান্ডার বাদ পড়ে গেছে আগেই। তাদের জন্য কালকের ম্যাচটি ছিল নিছক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তারপরও জিতলে পারলে তাদের নামের পাশে তো আরও দুটি পয়েন্ট যোগ হতো। কিন্ত সেটি পারেনি দলটি।

প্রথমে ব্যাট করে তারা ৫ উইকেটে মাত্র ১৪১ রান  স্কোরবোর্ডে জমা করতে সক্ষম হয়। ১০ রানের মধ্যে দুই ওপেনার ফারদিন হাসান ও উপুল থারাঙ্গাকে হারানোর পর ১৪২ রানের ছোটখাটো টিলাকেই কুমিল্লার কাছে মনে হতে থাকে বিশাল পাহাড়!

পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ১৬ রান জমা হয় ওয়ারিয়র্সের স্কোরবোর্ডে। ৩২ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারিয়ে সিলেট থান্ডারের দেওয়া টার্গেটটা কুমিল্লার কাছে হয়ে যায় এভারেস্ট!

সবার কাছে ম্যাচটি তখন রীতিমতো ‘পানসে’! পরের ম্যাচটি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও রাজশাহী রয়্যালসের। অর্থাৎ ক্রিস  গেইল বনাম আন্দ্রে রাসেল। টি-২০র সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুই ক্রিকেটারের লড়াই।

হয়তো সে কারণেই প্রচ- শীত উপেক্ষা করে দর্শকরা খানিকটা আগেই স্টেডিয়ামে এসেছিলেন। কিন্তু মাঠের লড়াই  দেখে হয়তো তারা হতাশই হচ্ছিলেন!

কিন্তু শেষ পর্যন্ত দর্শকদের হতাশ করেননি সৌম্য সরকার।  খেলেছেন ৫৩ রানের হার না মানা ইনিংস। জাতীয় দলের এই তারকা ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইকরেট ছিল ১৭৬.৬৬।  সৌম্যের স্ট্রক ঝলমলে ইনিংসে ছিল দুই ছক্কা ও ছয়টি দর্শনীয় চারের মার। তার সিঙ্গেলসও ছিল দেখার মতো।

 শেষ পর্যন্ত কুমিল্লাকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে বাইশগজ ছাড়লেও সৌম্য কিন্তু ম্যাচসেরা হতে পারেননি। আবারো ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ডেভিড মালান। তিনে ব্যাট করতে নেমে দলের বিপর্যয়ের সময় শক্তভাবে হাল করে ৪৯ বলে ৫৮ রানে করেছেন ৫৮ রান। মালানের ইনিংসে ছিল দুটি করে ছক্কা ও চারের মার।

দারুণ এই হাফ সেঞ্ঝুরিতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে (৩৫তম ম্যাচ পর্যন্ত) নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করেছেন কুমিল্লার অধিনায়ক মালান। এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান ৯ ম্যাচে করেছেন ৪৩৫ রান।

দলের বিপর্যয়ের সময় তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়েছিলেন  সৌম্য ও মালান। তাদের জুটিতে আসে ৭২ রান। এই পার্টনারশিপই কুমিল্লাকে জয়ের পথে নিয়ে যায়। তবে দলীয় ১০৪ রানের মাথায় মালান আউট হলেও ম্যাচটি দারুণভাবে শেষ করে মাঠ ছেড়েছেন সৌম্য।

সিলেট হারলেও কাল দারুণ বোলিং করেছেন জাতীয় দলের স্পিনার নাঈম হাসান। ৪ ওভারে তিনি ২১ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। আরেক স্পিনার সোহাগ গাজীও দারুণ বোলিং করেছেন। উইকেট না পেলেও চার ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৬ রান। সৌম্য-মালানরা বাইশগজে ঝড় তুললেও দুই স্পিনারের ওভার থেকে কোনো বাউন্ডারি আদায় করে নিতে পারেননি। গ্রুপ পর্বে শেষের দুই ম্যাচে কুমিল্লার প্রতিপক্ষ রংপুর  রেঞ্জার্স ও খুলনা টাইগার্স। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে দুই ম্যাচেই জিততে তো হবেই, তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য ম্যাচগুলোর দিকেও।

এদিকে গতকাল দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে রাজশাহী রয়্যালসকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ক্রিস গেইল মাত্র ১০ বলে ৩টি ছক্কা ও ১টি চারে ২৩ রান করে দর্শকদের বিনোদন দিয়েছেন। এ জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে বিপিএলের শীর্ষে অবস্থান করছে চট্টগ্রাম।

সিলেট : ১৪১/৫ (২০ ওভার)

কুমিল্লা : ১৪২/৫ (১৯.১ ওভার)

ফল : কুমিল্লা ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : ডেভিড মালান।

 

রাজশাহী : ১৬৬/৮ (২০ ওভার)

চট্টগ্রাম : ১৭০/৩ (১৮.৩ ওভার)

ফল : চট্টগ্রাম ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : ইমরুল কায়েস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর