মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আমির ম্যাজিকে ফাইনালে খুলনা

আসিফ ইকবাল

আমির ম্যাজিকে ফাইনালে খুলনা

বিপিএল ইতিহাসে সেরা বোলিং করে খুলনা টাইগার্সকে ফাইনালে নিয়ে গেলেন পেসার মোহাম্মদ আমির। তিনি ৪ ওভারে ১৭ রানের বিনিময়ে রাজশাহীর ৬ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরত পাঠান। জিতে নেন ৫০০ ডলারের ম্যাচসেরা পুরস্কার -রোহেত রাজীব

বয়স মাত্র ২৮। সতীর্থরা এখন দাপটের সঙ্গে ক্রিকেট মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু ছিপছিপে গড়নের মোহাম্মদ আমির বিদায় বলেছেন টেস্ট ক্রিকেটকে। আর কখনই তাকে দেখা যাবে না সাদা পোশাকে। ‘সুলতান অব সুইং’ ওয়াসিম আকরামের যোগ্য উত্তরসূরি আমির পাকিস্তানের হয়ে শুধু খেলবেন ওয়ানডে ও টি-২০। ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা বাঁহাতি পেসার আমির এখন ঢাকায়। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে খেলছেন খুলনা টাইগার্সের হয়ে। শুধু খেলছেনই না, গতকাল প্রথম কোয়ালিফায়ার্সে বিপিএল ইতিহাসে সেরা বোলিং করে একাই ফাইনালে তুলেছেন খুলনা টাইগার্সকে। বিপিএলের ইতিহাসে এই প্রথম ফাইনাল খেলবে খুলনা। আমিরের রেকর্ড বোলিংয়ে খুলনা ২৭ রানে হারিয়েছে রাজশাহী রয়্যালসকে। হারলেও অবশ্য রাজশাহীর ১৭ জানুয়ারি ফাইনাল খেলার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য আগামীকাল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার্সে মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। প্রথম এলিমিনেটর ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের চট্টগ্রাম ৭ উইকেটে হারিয়ে বিপিএল থেকে বিদায় করেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার ঢাকা প্লাটুনকে।

ওয়াসিম আকরামের মতো সুইং, গতি কিংবা বাউন্স নেই আমিরের। কিন্তু গতিতে পিছিয়ে নেই। আবার সুইং একেবারে মামুলি নয়। নিজের দিনে এবং বোলিং সহায়ক উইকেটে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন,  পৌষের সন্ধ্যায় মিরপুর স্টেডিয়ামে গতকাল হাড়েহাড়ে টের পেয়েছেন আন্দ্রে রাসেল, লিটন দাস, আফিফ হোসেন, অলক কাপালি, তাইজুল ইসলাম, রবি বোপারা। গতির সঙ্গে সুইংয়ের ম্যাজিক দেখিয়ে রাজশাহীর ব্যাটম্যানদের বোকা বানিয়ে সাজঘরে পাঠিয়ে তুলে নেন ৬ উইকেট। যা তার ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং। শুধু তাই নয়, বিপিএলের সেরা বোলিং রেকর্ডও তার। তিন স্পেলে ৪ ওভার বোলিং করে রান দেন ১৭। ডট নেন ১৭টি এবং উইকেট নিয়েছেন ৬। সব মিলিয়ে ম্যাচসেরা আমিরের স্পেল ৪-০-১৭-৬। এর আগে বিপিএলের সেরা বোলিং ছিল আরেক পাকিস্তানি মোহাম্মদ সামিরের। ২০১২ সালে দুরন্ত রাজশাহীর হয়ে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের বিপক্ষে ৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে এর আগে সেরা বোলিং ছিল আমিরের সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানো ওয়াহাব রিয়াজের। ঢাকা প্লাটুনের হয়ে ওয়াহাব রাজশাহীর বিপক্ষে ৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন।                 

আমিরময় ম্যাচে গতকাল আরেক উজ্জ্বল পারফরমার নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের ছোট তালিকায় উপরের দিকেই যার নাম। বয়স মাত্র ২৩। খেলেছেন দুটি করে টেস্ট ও টি-২০ ম্যাচ এবং তিনটি ওয়ানডে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি কখনো। পারফরম্যান্সের গ্রাফ বরাবরই ওঠানামা করেছে। ‘বঙ্গবন্ধু’ বিপিএলও এর বাইরে নয়। খুলনা টাইগার্সের হয়ে প্রথম ৪ ম্যাচে তার রান ছিল মাত্র ৫! অবিশ্বাস্য। কিন্তু সত্য। পঞ্চম ম্যাচ থেকে জাদুর কাঠি হাতে পেয়েই ঘুরে দাঁড়ান। খেলতে থাকেন অবিশ্বাস্য সব ইনিংস। গতকাল প্রথম কোয়ালিফায়ার্সে রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে খেলেন হার না মানা ৭৮ রানের ইনিংস। তার ঝড়ো ইনিংসেই রাজশাহীর বিপক্ষে খুলনা ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৫৮ রান করে। গ্রুপ পর্বের শেষে ম্যাচে ঢাকা প্লাটুনের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওপেন করতে নেমে শান্ত খেলেন ১১৫ রানের নান্দনিক এক ইনিংস। গতকাল ৫৭ বলে ৭ চার, ৪ ছক্কায় খেলেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। অথচ ইনিংসটি থেমে যেতে পারত মাত্র ৯ রানে। কিন্তু ভাগ্য সহায় থাকায় শোয়েব মালিকের বলে বোল্ড হয়েও বেঁচে যান তিনি। ইনিংসের তখন ৫.২ ওভার এবং রান ২০। অসাধারণ এক টার্নে বোকা বানিয়ে বোল্ড করেন শান্তকে। সাজঘরে হাঁটা ধরেন। কিন্তু অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম তাকে থামতে বলেন। এরপর তৃতীয় আম্পায়ার ‘নো’ বল কল করেন। ক্রিজে ফিরে আসেন শান্ত এবং খেলতে থাকেন বাহারি সব স্ট্রোক। শান্ত ও আমিরের দিনে দুর্ভাগ্য মুশফিকের। মাসল পুল করলে ব্যক্তিগত ২১ রানে সতীর্থদের কাঁধে চড়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিক।

১৫৯ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে আমিরের বোলিং ম্যাজিকে ২০ ওভারে ১৩১ রানের বেশি করতে পারেনি রাজশাহী রয়্যালস। তবে এই রান হতো না। যদি না পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শোয়েব মালিক ৮০ রানের পর্বতসমান দৃঢ়তার ইনিংসটি খেলতেন। ইনিংসটি খেলেন ৫০ বলে। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ রান আসে তাইজুলের ব্যাট থেকে।

 

ঢাকা প্লাটুন : ১৪৪/৮ (২০ ওভার)

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ১৪৭/৩ ( ১৭.৪ ওভার)

ফল : চট্টগ্রাম ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : এমরিত।

 

খুলনা টাইগার্স : ১৫৮/৩ (২০ ওভার)

রাজশাহী রয়্যালস : ১৩১/১০ (২০ ওভার)

ফল : খুলনা ২৭ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : আমির

সর্বশেষ খবর