শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রাসেল চমকে চ্যাম্পিয়ন রাজশাহী

মেজবাহ্-উল-হক

রাসেল চমকে চ্যাম্পিয়ন রাজশাহী

ছবি : রোহেত রাজীব

পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ‘আন্দ্রে রাসেল’ নামটি ঘোষণা হওয়ার পরই এই বিপিএলে রাইলি রুশোর ট্রেডমার্ক ‘পাইপ সেলিব্রেশন’-এ মেতে উঠলেন ক্যারিবীয় তারকা! রাসেল-কান্ডে তখন গ্যালারিতে যেন রাজশাহী সমর্থকদের হাসির রোল পড়ে যায়! আন্দ্রে রাসেল যেন নিজ হাতেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চিত্রনাট্য লিখে রেখেছিলেন! আর তার পা-ুলিপি অনুসরণ করেই যেন শিরোপা জিতে গেল রাজশাহী রয়্যালস! বিপিএল পেয়ে গেল নতুন চ্যাম্পিয়নকে।

কোয়ালিফায়ারে (পড়ুন সেমিফাইনাল) একাই টেনে তুললেন রাজশাহীকে। ফাইনালেও তার ক্যারিশমাতে খুলনা টাইগার্সকে ২১ রানে হারিয়ে বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠল পদ্মাপাড়ের দলটি।

ব্যাট হাতে মাত্র ১৬ বলে অপরাজিত ২৭ রান এবং বল হাতে ২ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ফাইনালের পুরস্কার পেলেন রাসেল। সব মিলে ২২৫ রান এবং ১৪ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টসেরাও হয়েছেন এই ক্যারিবীয় তারকা।

তবে সিরিজসেরা হতে পারতেন রাইলি রুশোও! কিন্তু শেষ ম্যাচে খুলনার তারকা ক্যারিশমা দেখাতে পারেননি। তবে আসরে সর্বোচ্চ ৪৯৫ রান করে ‘ট্র্যাজিক হিরো’ হয়ে রইলেন রুশো। সে কারণেই বুঝি শিরোপা জয়ের পরও প্রোটিয়া তারকার সেলিব্রেশনটি বেছে নেন রাসেল!

গতকাল প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ১৭০ রান করেছিল রাজশাহী। ৩৫ বলে ৫২ রান করেছিলেন ইরফান শুকুর। ২০ বলে ৪১ করেছিলেন মোহাম্মদ নেওয়াজ। ১৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৪৯ রানে আটকে যায় খুলনা রয়্যালস। ৪৩ বলে ৫২ রান করেন শামসুর রহমান শুভ। রুশো করেন ২৬ বলে ৩৭ রান।

 

মহানাটকীয় কিছু না ঘটলে টি-২০তে নাকি পাওয়ার প্লেতেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়! ফাইনালে সেখানে কাউকেই এগিয়ে রাখার উপায় ছিল না। প্রথম ছয় ওভারে রাজশাহী রয়্যালসের স্কোর ছিল ৪৩/১। খুলনা তাদের চেয়ে ৫ রান বেশি করলেও উইকেট একটি বেশি হারিয়েছিল। তবে মাঝপথে এগিয়ে গিয়েছিল খুলনাই। যেখানে রয়্যালসের দলীয় সেঞ্চুরি পূরণ করতে ১৫ ওভার খেলতে হয়েছে, সেখানে টাইগার্স ১৩ ওভারেই ১০০ রান করে।

কিন্তু প্রবাদ আছে না ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’, গতকাল খুলনার শেষ ভালোটা আর হয়নি। স্লগ ওভারের ৫ ওভারে যেখানে রাজশাহী করেছে ৭০ রান সেখানে খুলনা পথভ্রষ্ট হয়েছে শেষের দিকেই। ৫ ওভারে তারা করেছেন মাত্র ৩৮ রান। রাসেল একদিকে নিজেদের ব্যাটিংয়ে শেষের দিকে যেমন বাইশগজে ঝড় তুলেছিলেন তেমনি বল হাতে খুলনাকে আটকে দিতেও রেখেছেন বড় ভূমিকা। তাই শিরোপাও উঠেছে রাসেলের হাতেই।

কাল টসে হার দিয়ে শুরু হয়েছিল রাজশাহীর। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটাও ছিল তাদের সাদামাটা। ওপেনিং জুটি ভালো করতে পারেনি। তবে গতকাল রাজশাহীর ব্যাটিং ইনিংসের প্রথমার্ধে চমক ছিল স্থানীয় ব্যাটসম্যান ইরফান শুকুরের ৩০ বলে করা হাফসেঞ্চুরি। আফিফ দ্রুত আউট হওয়ার পর আরেক ওপেনার লিটনও যেন ঝিমিয়ে পড়েছিলেন। আফিফ ৮ বলে ১০ রান আর লিটনের ২৮ বলে ২৫! তারপর শোয়েব মালিকও ফ্লপ।

অন্যদিকে খুলনার পাকিস্তানি বোলার মোহাম্মদ আমির ছিলেন বরাবরের মতোই ভয়ঙ্কর। প্রথম তিন ওভারে তিনি ১৭ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট।

প্রোটিয়া বোলার রবি ফ্রাইলিঙ্ক যেন আরও কিপটে! প্রথম তিন ওভারে তিনি দিয়েছেন মাত্র ১৩ রান। একটি উইকেটও নিয়েছেন।

কিন্তু আন্দ্রে রাসেল দুই বোলারকেই ফ্লপ করে দেন তাদের শেষ ওভারে। ফ্রাইলিঙ্কের শেষ ওভারে এসেছে ২১ রান। আর আমিরের শেষ ওভার থেকে ১৪। আমিরের ওই ওভারে এমন একটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন সেটি ছিল ১১৫ মিটার। এবারের বিপিএলে সবচেয়ে বড় ছক্কা তো বটেই, হয়তো মিরপুরসেরা বাংলা স্টেডিয়ামের ইতিহাসেই সবচেয়ে বড়। শেষ পর্যন্ত পুরো বিপিএলই যেন রাসেলময় হয়ে থাকল।

ম্যাচ শেষে ক্যারিবীয় তারকা জানালেন, ‘টি-২০ ক্রিকেট এমনই। শেষ বলের আগে কিছুই বলা যায় না। যদিও প্রথম ১০ ওভারে আমরা কঠিন সময় পার করেছি। তবে আমি শেষ পর্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। শিরোপা জিতে ভালোই লাগছে।’

 

রাজশাহী রয়্যালস : ১৭০/৪ (২০ ওভার)

(ইরফান ৫২, নওয়াজ ৪১, রাসেল ২৭, লিটন ২৫। আমির ২/৩৫)।

খুলনা টাইগার্স : ১৪৯/৮ (২০ ওভার) (শামসুর রহমান ৫২, রুশো ৩৭। ইরফান ২/১৮, রাসেল ২/৩২, রাব্বি ২/২৯)। ফল : রাজশাহী ২১ রানে জয়ী।

সর্বশেষ খবর