সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মতিন ম্যাজিকে সেমিতে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মতিন ম্যাজিকে সেমিতে বাংলাদেশ

ছবি : রোহেত রাজীব

জয়ের নায়ক মতিন মিঞা। ঘরোয়া আসরে বসুন্ধরা কিংসে খেলা এ তরুণ ফুটবলার গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাজিক প্রদর্শন করেন। তিন গোলের মধ্যে দুটিই করেন তিনি। নাবীব নেওয়াজ জীবন টুর্নামেন্টের বাইরে থাকায় বাড়তি দায়িত্ব এসে পড়ে মতিনের ওপর

 

হয় জয় না হয় বিদায়। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছিল গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। গ্রুপের আগের ম্যাচে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দুদলই ০-২ গোলে ফিলিস্তিনের কাছে হেরে যায়। তাই সেমিফাইনালে খেলতে হলে জয় ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা ছিল না কারোর। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ড্র হলে সরাসরি টাইব্রেকার। এমন ভয়ঙ্কর ম্যাচেও ইনজুরিতে বাইরে ছিলেন দলের প্রাণ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। ছিলেন না ইয়াসিনও। সব ভয়কে জয় করে বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে শেষ চারে। শ্রীলঙ্কাকে হারায় ৩-০ গোলে। জয়ের নায়ক মতিন মিঞা। ঘরোয়া আসরে বসুন্ধরা কিংসে খেলা এ তরুণ ফুটবলার গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাজিক প্রদর্শন করেন। তিন গোলের মধ্যে দুটিই করেন তিনি।

নাবীব নেওয়াজ জীবন টুর্নামেন্টের বাইরে থাকায় বাড়তি দায়িত্ব এসে পড়ে মতিনের ওপর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে কোচ জেমি ডে তাকে বলেছিলেন কোনোভাবেই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না। ক্যারিয়ারে সেরাটা দিতে পারলে তুমি তোমার প্রিয় মাতৃভূমিকে শিরোপার রাস্তায় নিয়ে যেতে পারবে। ক্যারিয়ারে সেরাটা খেলেছেন কি না তা মতিনই ভালো বলতে পারবেন। তবে ম্যাচসেরা হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম দেশকে কিছু দিতে। আল্লাহ্র অশেষ রহমতে আমি স্বার্থক হয়েছি। তবে সতীর্থদের সহযোগিতা না পেলে এমন খেলতে পারতাম না।’

এক সময় জাতীয় দল তো দূরের কথা মোহামেডান-আবাহনীর কাছে পাত্তা পেত না লঙ্কানরা। ১৯৬৮ সালে আগা খান গোল্ডকাপ ফাইনালে মোহামেডানের কাছে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কালের বিবর্তনে সেই দৃশ্য বদলে যায়। শ্রীলঙ্কাও জিততে শিখেছে। নীলফামারীতে দুই জাতীয় দলের শেষ লড়াইয়ে বাংলাদেশ হেরে যায়। সুতরাং গতকাল ম্যাচে বাংলাদেশ জিতবেই কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তবে ফুটবলাররা যে মাঠে জয়ের প্রতিজ্ঞা নিয়ে নেমেছিলেন তা তাদের নৈপুণ্য দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।

জয়ের নেশায় শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা খেলতে থাকে। একের পর এক আক্রমণ করে প্রতিপক্ষকে দিশাহারা করে রাখে। শ্রীলঙ্কারও দরকার জয়। তাই তাদের কোচ ঢাকার মাঠে পরিচিত মুখ পাকির আলী শিষ্যদের আক্রমণ করেই খেলার নির্দেশ দেন। এতে কোনো লাভ হয়নি। বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা ছিলেন বড্ড সতর্ক। গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাও অসুস্থ শরীরে দৃঢ়তার পরিচয় দেন। গোলের অপেক্ষায় অস্থির সমর্থকরা। কখন উড়বে লাল-সবুজের পতাকা। ১৮ মিনিটেই সেই কাক্সিক্ষত গোলের দেখা মিলে। অভিষেক ম্যাচে খেলতে নামেন মিডফিল্ডার মানিক হোসেন মোল্লা। তারই পাসে দুরন্ত গোল করে দলকে এগিয়ে রাখেন মতিন মিঞা। জাতীয় দলে এটি ছিল তার প্রথম গোল।

দ্বিতীয়ার্ধেও বাংলাদেশের চাপ অব্যাহত থাকে। শ্রীলঙ্কা সমতা আনতে কাউন্টার অ্যাটাকে গোলে সুযোগটা কাজে লাগায় জেমি ডের শিষ্যরা। ৫১ মিনিটে সোহেল রানা নিশ্চিত সুযোগ হাতছাড়া করেন। ৬৪ মিনিটে মতিনের দ্বিতীয় গোলটি দর্শকদের মনে থাকবে দীর্ঘদিন। ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনা একক প্রচেষ্টায় প্রতিপক্ষের বেশ কজনকে কাটিয়ে জালে বল পাঠান। মতিনের গোলটিও ছিল সেই রকম। ৮৩ মিনিটে ইব্রাহিম তৃতীয় গোল করলে বাংলাদেশের জয় শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যায়।  শেষের দিকে অযথা ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তপু বর্মণ। সেমিফাইনালে বুরুন্ডির বিপক্ষে তিনি আর খেলতে পারবেন না। ম্যাচ শেষে কোচ জেমি ডে বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল ছেলেরা জিতবে। তবে এতটা সহজে ভাবেনি। বুরুন্ডি খুবই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। সেমিফাইনালে আমাদের সেই রকম প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামতে হবে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জামালরা অসাধারণ খেললেও এস এ গেমসে ভরাডুবিতে হতাশা নেমে আসে। সেই হতাশা কাটবে যদি ১০ বছর পর ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৮ সালেও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সেমিতে উঠলেও হেরে যায় ফিলিস্তনির কাছে।

সর্বশেষ খবর