বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ছোটদের দিকে তাকিয়ে...

মেজবাহ্-উল-হক

ছোটদের দিকে তাকিয়ে...

ক্রীড়াঙ্গনে শেষ দুই দিনের দুটি ঘটনা বেশ আলোচিত-

ঘটনা এক :

মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে তখন ৯৯.৯৯ ভাগ হার নিশ্চিত হয়ে গেছে রজার ফেদেরারের! প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের স্যান্ডগ্রিন তখন শেষ পয়েন্টের অপেক্ষায়। বিশ্বব্যাপী ফেদেরারের ভক্তরা তখন হয়তো টিভিই বন্ধ করে দিয়েছেন! টেনিস কিংবদন্তিও মনে করেছিলেন তিনি হেরেই গেছেন- কিন্তু মেনে নেননি তখনো। ০০.০১ ভাগ সুযোগকে কাজে লাগিয়েই অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ জিতে যান।

 

ঘটনা দুই :

সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে হ্যামিল্টনে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে নিউজিল্যান্ড জিতেই গেছে বলা যায়! কারণ জয়ের জন্য তখন দরকার ছিল ৪ বলে মাত্র ২ রান। উইকেটে ৯৫ রানের বিধ্বসী ইনিংস খেলা কিউই ক্যাপ্টেন কেন উইলিয়ামসন নিজেই রয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের জয় তখন ৯৯.৯৯ ভাগ নিশ্চিত! ভক্তরা হয়তো উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরি হবে কিনা তা নিয়ে ভাবছেন। মোহাম্মদ সামির বাউন্সারে থার্ডম্যান দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকাতে চেয়েছিলেন উইলিয়ামসন। কিন্তু আউট। তারপর ৩ বলে আর ২ রানই নেওয়া হলো না। নিউজিল্যান্ড ১ রান নিয়ে ‘ম্যাচ টাই’। সুপার ওভারে শেষের দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতে যায় ভারত।

 

  -শেষ পর্যন্ত লড়াই করে ‘উপযুক্ত পুরস্কার’ পাওয়ার অসাধারণ এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এ দুটি ঘটনা!

 

এমন ঘটনা থেকে কি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কিছু শিখছে?

 

সদ্য সমাপ্ত পাকিস্তান সিরিজের প্রথম ম্যাচটির কথা চিন্তা করুন! শেষ ৩ বলে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল ২ রান। এমন সময় ক্যাচ তুলে দিলেন ওই ম্যাচের সেরা তারকা শোয়েব মালিক। ফিল্ডার মোহাম্মদ মিথুন সহজ ক্যাচটি ছেড়ে দিলেন। আসলে মিথুনের কী দোষ! ক্রিকেটারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হচ্ছিল, আরও অনেক আগেই ম্যাচটি ছেড়ে দিয়েছিল টাইগাররা। তা না হলে সে ম্যাচে জিততে পারত বাংলাদেশই!

পরের ম্যাচে মানসিকভাবে রীতিমতো বিধ্বস্ত ছিলেন মাহমুদুল্লাহরা। ম্যাচে একদম পাত্তাই পায়নি। শেষ পর্যন্ত সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় ক্রিকেট ভক্তরা রীতিমতো হতাশ। হারের চেয়েও ক্রিকেটারদের হতাশাজনক ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ যেন বেশি হতাশ করেছে! হারের আগেই কেন হেরে বসে থাকেন ক্রিকেটাররা- এমন প্রশ্ন উঠেছে এখন! প্রশ্ন উঠছে ক্রিকেটারদের দায়িত্ববোধ নিয়েও!

তবে সিনিয়ররা যাই করুক না কেন যুবা টাইগারদের বিষয়টা যেন খানিকটা আলাদা। আকবর আলীর নেতৃত্বে দলটি আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার

 

মাটিতে দাপুটে পারফর্ম করছে। যেখানে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল ইংল্যান্ডের যুবারা গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে যায় সেখানে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের গ্রুপে কিন্তু পাকিস্তানের যুবারা ছিল!

আজ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন বাংলাদেশের যুবারা। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। খেলা হবে পচেফস্ট্রুমের মার্কস ওভালে। যেখানে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে আকবররা জিম্বাবুয়েকে ৯ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে এবং স্কটল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে। স্কটিশদের বিরুদ্ধে তো হ্যাটট্রিক করেছিলেন বাংলাদেশের বোলার রকিবুল হাসান। এই বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক!

কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার আগে বাংলাদেশের যুবারা আত্মবিশ্বাস নিতে পারেন আফগানিস্তানের কাছ থেকে। আফগান যুবারা তাদের প্রথম ম্যাচেই উড়িয়ে দিয়েছেন প্রোটিয়া যুবাদের। আকবররা আত্মবিশ্বাস নিতে পারেন বিশ্বকাপের গত আসর থেকেও। ওই

 

আসরে গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে

দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার সেমিফাইনালেউঠেছিল যুবারা। শেষ চারের লড়াইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে যায়।

এবার শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রেখেছেন আকবররা। আজ কোয়ার্টার ফাইনালের বাধা পেরিয়ে যাওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ।

সিনিয়রদের মতো যুবা টাইগারদেরও সামর্থ্যে ঘাটতি নেই। কিন্তু দরকার কেবল দুরন্ত সাহস! বিশ্লেষকদের দাবি, বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেট দল এই জায়গায় অনেকখানি পিছিয়ে থাকলেও জুনিয়ররা বেশ নির্ভীক! আকবরের নেতৃত্বে এই দলটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।

পাকিস্তান সফরে বড়দের কান্ডে (সিনিয়র ক্রিকেটার) ক্রিকেটামোদীদের মনে যে হতাশা বিরাজ করছে তা অনেক দূর করে দিতে পারেন ছোটরা- বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে! ছোটদের দিকেই তাকিয়ে এখন দেশ!

যুবারা কি পারবেন ‘রজার ফেদেরার’ কিংবা ‘ভারতীয় ক্রিকেট দলের’ মতো শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার মানসিকতা দেখিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর