শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

স্বপ্নের ফাইনালে যুবারা

স্বপ্নের ফাইনালে যুবারা

যুব বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠে যুবারা। জয়ের পর বাংলাদেশ দলের সেলফি ছবি : আইসিসি

প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপের স্বপ্নের ফাইনালে উঠে গেল টাইগার যুবারা। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে করেছিল ২১১ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৫ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় যুবারা। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরেছেন- মেজবাহ্-উল-হক

 

জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া জুটি

মাহমুদুল হাসান জয় ও শাহাদত হোসেনের ১০১ রানের জুটিই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে দুর্দান্ত জয়টি। তবে এই জুটির আগে তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ৬৮ রানের আরও একটি পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছিলেন মাহমুদুল। তৃতীয় ও চতুর্থ উইকেটের এ দুই জুটিই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে সহজ জয়।

শেষ ওভারের দুঃখ

দারুণ বোলিং করেছেন পেসার শরিফুল ইসলাম। ১০ ওভারে ৪৫ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। তারপরও শেষ ওভারের জন্য দুঃখ হতে পারে এই যুবারা। কেননা যেখানে তিনি ৯ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২৬ রান, সেখানে শুধু শেষের ওভারেই দিয়েছেন ১৯ রান।

রকিবুলের প্রথম ২০ বল

কোয়ার্টার ফাইনালে প্রোটিয়া বধের নায়ক ছিলেন রকিবুল। মাত্র ১৯ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এই বিশ্বকাপের একমাত্র হ্যাটট্রিক ম্যান! গতকাল সেমিফাইনালেও দুর্দান্ত এই যুবা টাইগার। প্রথম ২০ বলে তিনি কোনো রানই দেননি। প্রথম তিন ওভার মেডেন করেছেন, একটি উইকেটও নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়েছেন।

২৫ ওভারে ৭২/, ২৫ ওভারে ১৩৯/

বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। প্রথম ২৫ ওভারে নিউজিল্যান্ডকে আটকে রেখেছিল মাত্র ৭২ রানে। কিন্তু সেখানে পরের দিকে রানের গতি আটকে রাখতে পারেননি টাইগাররা। নিউজিল্যান্ড শেষের ২৫ ওভার থেকে করেছে ১৩৯ রান।

প্রথম ১০ ওভারে ২৬ শেষ ১০ ওভারে ৭২

গতকাল বাংলাদেশের বোলিংয়ের প্রথম ১০ ওভার ছিল স্বপ্নের মতো। নিউজিল্যান্ডকে আটকে রেখেছিল মাত্র ২৬ রানে। অথচ সেখানে স্লগ ওভারের ১০ ওভার থেকে এসেছে ৭২ রান। শেষের দিকে রানের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি যুবা টাইগাররা। ৪০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ১৩৯ রান। সেখানে ৫০ ওভার শেষে ২১১।

গ্রিনালের গ্রেট ইনিংস

ব্যাটিংয়ের সময় নিউজিল্যান্ডকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন কেকহ্যাম হুইলার-গ্রিনাল। ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেছেন ৭৫ রানের হার না মানা ইনিংস। কিউই তারকার ৮৩ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি বাউন্ডারি ও ২টি দারুণ ছক্কার মার। গ্রিনালের দাপুটে ব্যাটিংয়েই নিউজিল্যান্ডের স্কোরলাইনটা ২০০ পেরিয়ে যায়।

ম্যাজিকেল ২৩ এবং ৩২!

২ এবং ৩-কে ওলট-পালট করলে একবার ২৩, আরেকবার ৩২! এই ম্যাজিকেল সংখ্যা দুটি এখন যেন বিরক্তিকর বাংলাদেশের দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হাসান তামিমের কাছে। ২১২ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে দলীয় ২৩ রানে আউট হয়ে যান ইমন। ৩২ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তামিম। ব্যর্থতায় দুই ওপেনারের মধ্যে দারুণ মিল!

অভিজ্ঞ হৃদয়ের বোকামি

বয়স মাত্র ১৯ হলেও ২২টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা তৌহিদ হৃদয়ের ঝুলিতে। একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলেছেন। লিস্ট এ ম্যাচে এই তরুণ ব্যাটসম্যানের গড়টা ঈর্ষণীয়- ৪৫.২৯। ছোট হৃদয় বড়দের সঙ্গে খেলে একটি সেঞ্চুরি ও ৬টি হাফ সেঞ্চুরিও করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কাল আবার কাজে লাগালেন। মাত্র ৩২ রানে দুই উইকেট পতনের পর খেলতে নেমে মাহমুদুলকে সঙ্গে নিয়ে গড়লেন ৬৮ রানের জুটি। নিজেও খেললেন ৪০ রানের এক ইনিংস। তবে অভিজ্ঞ হৃদয় নিজের বোকামির জন্য কাল স্ট্যাম্পিং হয়ে যান।

 

ক্যারিশম্যাটিক ক্যাচ

শামীম হোসেনের শট বলে সজোরে ব্যাট চালিয়েছিলেন ফারগুস লেলম্যান। মিড উইকেটে মাহমুদুল হাসান ডানদিকে লাফিয়ে বিদ্যুৎ গতির বলটি তালুবন্দী করেন। অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ! ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, ‘এটি বিশ্বকাপের সেরা ক্যাচগুলোর তালিকায় ওপরে থাকবে।’

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ড : ২১১/৮ (৫০ ওভার) (গ্রিনাল ৭৫*, লিডস্টোন ৪৪, লেলম্যান ২৪;

শরিফুল ৩/৪৫, শামীম ২/৩১,

মুরাদ ২/৩৪, রকিবুল ১/৩৫)

বাংলাদেশ : ২১৫/৪ (৪৪.১ ওভার) (মাহমুদুল ১০০, শাহাদত ৪০*, হৃদয় ৪০; হ্যাঙ্কক ১/৩১, ক্লার্ক ১/৩৭, অশোক ১/৪৪, টাস্কফ ১/৫৭)

ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরা : মাহমুদুল হাসান জয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর