রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট পরিসংখ্যান

প্রিয় জিম্বাবুয়ে অপ্রিয় জিম্বাবুয়ে

সাদা পোশাকে বাংলাদেশের প্রিয় প্রতিপক্ষ হচ্ছে জিম্বাবুয়ে। টেস্টে টাইগারদের প্রথম সিরিজ জয়ের মধুর স্মৃতি আফ্রিকার এই দলটির বিরুদ্ধেই। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথম সিরিজে যেমন হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তেমনি ২০১৪ সালে বাংলাওয়াশ করার সুখ-স্মৃতিও আছে। দলটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মোট ৮টি সিরিজ খেলেছে। ৪টিতে জিম্বাবুয়ে জিতেছে এবং বাংলাদেশের জয় ২টি। দুই সিরিজে ড্র। শুরুর দিকে জিম্বাবুয়ে টাইগারদের জন্য ‘অপ্রিয় প্রতিপক্ষ’ হলেও এখন প্রিয় প্রতিপক্ষ এ দলটিই। আবারও জিম্বাবুয়ে এসেছে বাংলাদেশে। সাদা পোশাকে দুই দলের দ্বৈরথ নিয়েই এ আলোচনা। লিখেছেন- মেজবাহ্-উল-হক

প্রিয় জিম্বাবুয়ে অপ্রিয় জিম্বাবুয়ে

১ম সিরিজ ২০০১

হোয়াইটওয়াশ টাইগাররা

২০০১ সালে বাংলাদেশ টেস্টে একদম নবীন এক দল। বয়স মাত্র এক বছর। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর প্রথম জিম্বাবুয়ে সফর। অথচ তখন আফ্রিকার দলটি সুপারস্টারে ভরপুর। হিথ স্ট্রিকের দলে ছিলেন, এন্ড্রি ফ্লাওয়ার, গ্রান্ড ফ্লাওয়ার, গাই হুইটেল, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের মতো বিশ্বসেরা তারকা। সফরের দুই ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হেরে যায় টাইগাররা। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথম এবং একমাত্র হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জা।

 

২য় সিরিজ ২০০১

আবারও সিরিজ হার

একই বছরে ফিরতি সফরে বাংলাদেশে আসে জিম্বাবুয়ে। সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ড্র, দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে যায় সফরকারীরা। যদিও প্রথম ম্যাচে শেষের দুই দিন বৃষ্টি কারণে খেলা মাঠেই গড়ায়নি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে হারলেও লড়াই করেছে বাংলাদেশ। দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন হাবিবুল বাশার সুমন। প্রথম ইনিংসে ১০৮ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন ৭৬ রানের ইনিংস। জাভেদ ওমর বেলিমের ৩২২ বলে খেলা ৮০ রানের ইনিংসটি ছিল অসাধারণ।

 

৩য় সিরিজ ২০০৪

আশরাফুলের ৯৮

দ্বিতীয়বারের মতো ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে যায় বাংলাদেশ। হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে দুই ম্যাচের সিরিজে আবারও ১-০ ব্যবধানে হেরে যায় টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ে জিতে যায় ১৮৩ রানে, দ্বিতীয় ম্যাচ ড্র। যদিও বৃষ্টির জন্য তিন দিন খেলা মাঠে গড়ায়। তবে প্রথম টেস্টে হারলেও মোহাম্মদ আশরাফুলের ৯৮ রানের ইনিংসটি ছিল দেখার মতো।

৪র্থ সিরিজ ২০০৫

টাইগারদের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত ২০০৫ সালের জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে এই সিরিজটি। প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে ২২৬ রানে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে ঢাকায় ড্র করে ১-০তে জিতে যায় বাংলাদেশ। দুই স্পিনার মোহাম্মদ রফিক ও এনামুল হক জুনিয়র মিলে ধসিয়ে দেয় জিম্বাবুয়েকে। দুই ম্যাচ মিলে ১৮ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন এনামুল।

 

৫ম সিরিজ ২০১১

অর্ডিনারি ভিটরি!

বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ফেবারিটের তকমা গায়ে মেখে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের একমাত্র টেস্ট খেলতে নামে। সিরিজের আগেই তামিম ইকবাল জিম্বাবুয়ের তরুণ মিডিয়াম পেসার ব্রায়ান ভিটরিকে ‘অর্ডিনারি বোলার’ বলে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হন। সেই ভিটরি প্রথম ইনিংসে তামিমকে ১৫ রানে আউট করেন এবং ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে পাঠান। অতি আত্মবিশ্বাসের কারণেই কিনা ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে যায় ১৩০ রানে।

 

৬ষ্ঠ সিরিজ ২০১৩

অতি সতর্কতায় সিরিজ ড্র

আবারও ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে যায় বাংলাদেশ। টাইগার সেবার ভীষণ সতর্ক। জিম্বাবুয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়েই কিনা প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। স্বাগতিকদের কাছে হার ৩৩৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারী। জিম্বাবুয়েকে ১৪৩ রানে হারিয়ে সিরিজে সমতা। দুই ইনিংসেই অসাধারণ ব্যাটিং করেন সাকিব, মুশফিক ও নাসির।

 

৭ম সিরিজ ২০০৭

জিম্বাবুয়ে বাংলাওয়াশ

২০১৪ সালের অক্টোবর-নভেম্বর বাংলাদেশের ক্রিকেটাতিহাসে দুর্দান্ত এক সময়। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে তিন ম্যাচেই উড়িয়ে দেয় টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে ঢাকায় ৩ উইকেটে জয়। সাকিব আল হাসান ও তাইজুলের স্পিনে ধরাশায়ী। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট সাকিবের, দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৮ উইকেট নেন তাইজুল। সব মিলে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা তাইজুল, সাকিবের ঝুলিতে জমা হয় ৬ উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে খুলনায় পাত্তাই পায়নি দলটি। স্বাগতিকরা তাদেরকে উড়িয়ে দেয় ১৬২ রানের বিশাল ব্যবধানে। এক সাকিবেই কুপোকাত। যেমন ব্যাটিং, তেমন বোলিং। সাকিব ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে খেলেছেন ১৩৭ রানের ইনিংস, তারপর বল হাতে দুই ইনিংসেই ৫টি করে উইকেট নেন। সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম ইকবালও। শেষ ম্যাচে চট্টগ্রামে টাইগাররা রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য। জয় আসে ১৮৬ রানের। চট্টগ্রামের ম্যাচটি ছিল ব্যাটসম্যানদের। দুই ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি- তামিম, ইমরুল ও মুমিনুল। ম্যাচে লেগ স্পিনার জুবায়ের আহমেদ লিখন নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে সিরিজ সেরা হয়েছিলেন সাকিব।

৮ম সিরিজ ২০০৮

মিরপুরে মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি

ঘরের মাঠে সব শেষ সিরিজটি ড্র হয় ১-১ ব্যবধানে। সিলেট স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ১৫১ রানে হেরে যায় স্বাগতিকরা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ঢাকায় ২১৮ রানে হারিয়ে সিরিজে সমতা আনে। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি এবং মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরি।

সর্বশেষ খবর