বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

অধিনায়ক মাশরাফির শেষ সিরিজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

অধিনায়ক মাশরাফির শেষ সিরিজ

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে টাইগারদের পারফরম্যান্স আকাশ ছোঁয়নি। খেলতে পারেনি স্বপ্নের সেমিফাইনাল। যাচ্ছেতাই ছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার পারফরম্যান্স। টাইগার অধিনায়কের মামুলী পারফরম্যান্সের সমালোচনায় মুখর হয়ে পড়েছিলেন নেটিজেনরা। ক্রিকেট মহাযজ্ঞ শেষ হওয়ার আগেই নানাজন নানাভাবে জানতে চাচ্ছিলেন মাশরাফি খেলা ছাড়বেন কবে? কবে যতি টানবেন ক্যারিয়ারের? দেশে ফেরার পরও একই প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খেয়েছে ক্রিকেটপাড়ায়। কিন্তু দেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক কখনোই অবসর প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু বলেননি। বারবার জানিয়েছেন, যতদিন মনে চাইবে, ততদিনই খেলবেন। টাইগার অধিনায়ক সিদ্ধান্ত জানাননি বলে, বিসিবিও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাচ্ছিল না। দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের সঙ্গে আলোচনা করে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজই অধিনায়ক মাশরাফির শেষ সিরিজ। ৩৭ বছর বয়সী মাশরাফির এটা শেষ সিরিজও। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ শুরু ১ মার্চ সিলেটে।

২০০৯ সালে টেস্ট খেলা ছেড়েছেন। শেষ টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন ২০১৭ সালে। টেস্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় বলেননি। তবে বিদায় জানিয়েছেন টি-২০ ক্রিকেটকে। এবার পুণ্যভূমি সিলেটেই হয়তো বোলিং বুট তুলে রাখবেন স্থায়ীভাবে। যদিও ওয়ানডেকে বিদায় বলেননি ‘দ্য ক্যাপ্টেন অব বাংলাদেশ’। কিন্তু লাইফ লাইন টেনে দিয়েছে বিসিবি। এখন বিশ্বাস করতেই হবে, ২১৭ ওয়ানডেতে ১৭৮৬ রান ও ২৬৬ উইকেট নেওয়া মাশরাফির রঙিন পোশাকে খেলার সময় মাত্র তিন ম্যাচ! ৬ মার্চেই বোধহয় ঘটা করেই দেশের সবচেয়ে লড়াকু ক্রিকেটারকে বিদায় জানাবে বিসিবি।

মাশরাফি এখন পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ। আফ্রিকান প্রতিনিধি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১, ৩ ও ৬ মার্চ সিরিজটি মাশরাফির শেষ সিরিজ বলেন বিসিবি সভাপতি, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থানে আসতে মাশরাফির অবদান অসাধারণ। কোনোভাবেই অস্বীকার যাবে না। তবে এটাও ঠিক ওর সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। মাশরাফি এই সিরিজ খেলছেন অধিনায়ক হিসেবেই। বিশ্বকাপের আগে হঠাৎ করেই একজন অধিনায়ক পাঠানো সম্ভব নয়। সুতরাং খুব শিগগিরই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। এই সিরিজ পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি।’

২০০১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদচারণা মাশরাফির। সাত, সাতটি অস্ত্রোপচারের পরও ১৯ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছেন তিনি। তার নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগে আয়ারল্যান্ডে তিন জাতির টুর্নামেন্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। তার নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল এবং এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে। অসাধারণ নেতৃত্বগুণের জন্য মাশরাফিকে বলা হয় ‘দ্য চ্যাম্পিয়ন ক্যাপ্টেন অব বাংলাদেশ’। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া, পাশে থেকে ক্রিকেটারদের উৎসাহ দিতে জুড়ি নেই নড়াইল এক্সপ্রেসের। এজন্যই হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তির নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার কথা ঠিক, ‘সতীর্থদের সামনে রেখে নেতৃত্ব দেওয়া ভালো। বিশেষ করে জয় যখন সামনে আসে এবং সুখকর মুহূর্তগুলো যখন ঘটতে থাকে। যদি বিপদ দেখা দেয়, তাহলে সামনে চলে আসতেই হবে আপনাকে। তখন আপনার নেতৃত্বকে স্বাগত জানাবে সবাই।’ অধিনায়ক মাশরাফির চরিত্র এমনই। সিরিজের পরই ভবিষ্যতের অধিনায়কের নাম ঘোষণা করবে বিসিবি।

বিশ্বকাপের পর গত সাত মাস ক্রিকেটের বাইরে মাশরাফি। এই সময়ে বাংলাদেশ শুধু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে। দ্বীপরাস্ট্রে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। এবার নেতৃত্ব ফিরে পেয়েছেন মাশরাফি। যদিও ফিটনেস পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে টাইগার অধিনায়ককে। বিদায়ী সিরিজ বলেই ফিটনেসে কিছুটা কনসিডার করা হবে টাইগার অধিনায়ককে, বলেন বিসিবি সভাপতি, ‘আগে বিপ টেস্টের কোনো ব্যাপার ছিল না। এখনো সেখানে পাস করতে হয়। প্রথম কথা হচ্ছে মাশরাফিকে বিপ টেস্টে পাশ করতে হবে। এজন্য হয়তো তার জন্য কিছুটা কনসিডার করা হবে।’ জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর শেষ হয়ে যাবে অধিনায়ক মাশরাফি অধ্যায়। তবে পারফরম্যান্স করে তিনি দলে আসার সুযোগ পাবেন তখনো।

সর্বশেষ খবর