রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নাঈমের স্পিনে নাকাল জিম্বাবুয়ে

মেজবাহ্-উল-হক

নাঈমের স্পিনে নাকাল জিম্বাবুয়ে

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট কেমন? সবার আগে এই প্রশ্নটাই মনে আসার কথা পাঠকদের!

প্রেসবক্স থেকে হালকা সবুজ ঘাস দেখা যাচ্ছিল। সকালে  পেসারদের জন্য বেশ সুবিধা ছিল। সবুজ ঘাসের সঙ্গে ময়েশ্চার।

কিন্তু সকালের সেশনের প্রথম ঘণ্টা পরেই উইকেট হয়ে যায় ব্যাটিং স্বর্গ! এমন উইকেটে ব্যাটসম্যান আউট হতে না চাইলে তাকে ড্রেসিংরুমে পাঠাবে সাধ্য কার! কিন্তু গতকাল মিরপুরে অসাধ্যই সাধন করেছেন বাংলাদেশের স্পিনার নাঈম হাসান। ৩৬ ওভার বোলিং করে একাই তুলে নিয়েছেন জিম্বাবুয়ের ৪ উইকেট।

প্রথম দিন শেষে জিম্বাবুয়ের স্কোর ৬ উইকেটে ২২৮। শুরুতেই ম্যাচের লাগাম টেনে ধরেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের ড্রেসিংরুমে নেই কোনো স্বীকৃত ব্যাটসম্যান। এখন রেজিস চাকাভাকে আউট করতে পারলেই  কেল্লাফতে!

আজ সকালে লোয়ার অর্ডার নিয়ে ব্যাট করতে নামবে আফ্রিকার দলটি। বাইশগজে প্রথম ঘণ্টা কাটাতে পারবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

টেস্টের প্রথম দিনটি নিজের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। সকালের ময়েশ্চার কাটাতে সহযোগিতা করবে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরাই। তারপর বেশ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়েই ব্যাট করতে পারবেন তামিম-মুশফিকরা।

মিরপুরের উইকেটে কোনো জুজু নেই! সে কথা কাল  সেঞ্চুরি করার পর জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনই বলেছেন, ‘উইকেট খুবই ভালো। ব্যাটিং করা সহজ। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা দারুণ বোলিং করেছেন।’

সকালের ময়েশ্চারকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের  পেসাররা উইকেটের সুবিধাটা শতভাগ আদায় করে নিতে না পারলেও রানে আটকে রেখেছিলেন। তারপর স্পিনার নাঈম হাসান নাকাল করে ছাড়লেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের। বাংলাদেশের এই স্পিনার টানা ৩২ ওভারের এক স্পেল করেছেন।

মিরপুরের উইকেটে টস ছিল একটা বড় ‘ফ্যাক্টর’! কারণে প্রথম দুদিন ব্যাটিং করা খুবই সহজ। এই দুদিন স্পিনারদের জন্য রীতিমতো বধ্যভূমি। কিন্তু একাগ্রতা  দেখিয়ে সেই বধ্যভূমিতেই ক্যারিশমা দেখালেন নাঈম।

 বোলিং কী এমন পরিবর্তন এসেছেন যে এমন উইকেটেও দুর্দান্ত বোলিং করলেন? প্রেস কনফারেন্সে এমন প্রশ্ন শুনে স্বভাবসুলভ লাজুক হাসিতে নাঈম জানালেন, ‘বোলিংয়ে আলাদা কিছু করিনি। আমার কেবল একটাই টার্গেট ছিল, জায়গা মতো বোলিং করা। সেটা করতে পেরেছি তাই সফল হয়েছি।’

তাহলে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভালো রেকর্ড যে তাইজুল ইসলামের তিনি কেন উইকেট পেলেন না? নাঈমের উত্তর, ‘পুরো দিনের বোলিং নিয়ে আমি খুশি। আপনি বলছেন তাইজুল ভাই উইকেট পাননি। তাইজুল ভাই একদিক থেকে ভালো বোলিং করেছেন বলে আমি অন্য পাশে উইকেটগুলো পেয়েছি। ধরেন আজ আমি  পেয়েছি। কাল যদি আমি এক পাশ থেকে ডট দেই তাহলে তাইজুল ভাই পাবেন। পার্টনারশিপ বলে কথা।’

বিসিএলে সব শেষ দুই ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়েছেন নাঈম। কী অসাধারণ ফর্ম! তা ছাড়া দারুণ বোলিং স্টাইলের জন্য স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরির ভীষণ পছন্দ নাঈমকে। কোচের আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন এই স্পিনার। বিসিএলের দুর্দান্ত ফর্মটা টেনে আনলেন জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচেও।

নাঈম বললেন, ‘আমি বিসিএলে লম্বা স্পেলে বোলিং করে থাকি। সেই অভিজ্ঞতা এখানে কাজ দিয়েছে। ওখানে ভালো করার কারণে আত্মবিশ্বাসটাও ভালো ছিল। অনুশীলনের  চেয়ে ম্যাচ খেললে আত্মবিশ্বাস বেশি পাওয়া যায়।’

নাঈম হাসানের শেষ উইকেটটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দিনের খেলা শেষ হওয়ার এক ওভার আগে তিনি  ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে। ২২৭ বলে ১০৭ রানের ধৈর্যশীল ইনিংস খেলার পরও শেষ বিকালে টিকতে পারেননি। আরভিন নটআউট থাকলে হয়তো দিনটা সমানে সমান হতো। কিন্তু এখন এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশই। সেকথা বললেন নাঈম হাসানও, ‘এখন আমরা খুব ভালো অবস্থায় আছি। উইকেটটাও ভালো আছে। ওপাশ থেকে আমাদের বোলাররা খুব ভালো বোলিং করেছে। দুই পাশ থেকে যখন রান কম হয়েছে তখন উইকেটগুলো বের হয়েছে। আর উইকেটে থাকলে মনে হয় ব্যাটিং করা সহজ।’

 

জিম্বাবুয়ের ১ম ইনিংস : ২২৮/৬ (৯০ ওভার) (ক্রেইগ আরভিন ১০৭, মাসভাউরে ৬৪, সিকান্দার রাজা ২৮, টেইলর ১০, চাকাবা ৯, মারুমা ৭; নাঈম হাসান ৪/৬৮, আবু জায়েদ ২/৫১।

সর্বশেষ খবর