রবিবার, ১ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

আমি কি চোর, মাঠে চুরি করি!

ক্যারিয়ারে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি সফল তিনি। আফ্রিকার এই দলটির বিরুদ্ধে ৪২ ওয়ানডে খেলে নিয়েছেন ৬৩ উইকেট। এবার চাপের বোঝা মাথায় নিয়ে মাশরাফি কি পারবেন নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করতে?

মেজবাহ্-উল-হক, সিলেট থেকে

আমি কি চোর, মাঠে চুরি করি!

অনুশীলনে মাশরাফি ছবি : রোহেত রাজীব

ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রেস কনফারেন্স মানেই রসিকতায় ভরপুর! নিজেও যেমন হাসেন,  তেমনি সাংবাদিকদের হাসাতেও ভালোবাসেন। কিন্তু গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দেখা গেল অন্য ছবি। এ যেন ভিন্ন এক মাশরাফিকে। মুখে হাসির ছিটেফোঁটাও নেই। শরীরীভাষা দেখে মনে হচ্ছিল যেন বিধ্বস্ত! হতবিহ্বল চেহেরার মাশরাফি একের পর এক ‘অবসর’ সংক্রান্ত ‘তিক্ত’ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। তারপর হঠাৎ এক প্রশ্নে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন টাইগার ক্যাপ্টেন!

কি সেই প্রশ্ন?

‘ক্যাপ্টেন, আপনাকে যে প্রশ্নগুলো এখন শুনতে হয় তা অনেকটা ‘আত্মসম্মানের’! এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্যারিয়ারে কখনো এতটা চাপের মধ্যে পড়তে হয়নি। এই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে আপনার ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল দারুণ। ফ্লাওয়ার ব্রাদার্সের উইকেট নিয়েছেন প্রথম ম্যাচে। আবারও সামনে জিম্বাবুয়ে। এই দলটিকে সামনে পেলে বাড়তি অনুপ্রেরণা বোধ করেন কিনা?’

প্রশ্নটা শুনেই যেন অগ্নিশর্মা হয়ে যান মাশরাফি! অবশ্য প্রশ্নটা পুরোপুরি না শুনে ‘আত্মসম্মান’ শব্দটা  যেন ক্যাপ্টেনকে এলোমেলো করে দেয়। যেন মাশরাফি মননে-মগজে বিস্ফোরণ ঘটে যায়! তারপর ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না। কণ্ঠ একটু একটু কাঁপছিল!

লম্বা প্রশ্নের উত্তরটাও দেন ৩ মিনিট ধরে।

মাশরাফি বলেন, ‘প্রথমত বিষয়টি হচ্ছে, আত্মসম্মান বা লজ্জা! আমি কি চুরি করি মাঠে? আমি কি চোর!  খেলার সঙ্গে লজ্জা, আত্মসম্মান আমি মিলাতে পারি না! এত জায়গায় এত চুরি হচ্ছে, চামারি হচ্ছে তাদের লজ্জা নেই, আর মাঠে উইকেট না পেলে আমার লজ্জা লাগবে! আমি চোর! উইকেট আমি নাই-ই পেতে পারি, আমার সমালোচনা আপনারা (মিডিয়া) করবেন, সমর্থকরা করবেন, কিন্তু লজ্জা পেতে হবে কেন? আমি তো বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলছি, নাকি অন্য কোনো দেশের হয়ে খেলছি, যে আমার লজ্জা  পেতে হবে! আমি পারিনি, আমাকে বাদ দিয়ে দেবে, বিষয়টা খুবই সহজ! লজ্জা, আত্মসম্মান কাকে  দেখাব? আমি তো বাংলাদেশের হয়ে খেলছি। আমি কি বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষের মানুষ? যদি কারও  ডেডিকেশন না থাকে বা শৃঙ্খলা না থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে! এটি কমন বিষয় আমি উইকেট পাচ্ছি না সমালোচনা হবে, এটা গোটা বিশ্বেই হয়! কথা তখনই ওঠে যখন আত্মসম্মান বা লজ্জার প্রশ্ন ওঠে। আমার সমালোচনা হোক, কিন্তু ক্রিকেট খেলতে এসে আমি কি আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে এসেছি?’

তারপর মাশরাফি বলেন, ‘প্রত্যেক ক্রিকেটারের একটা সময় আসে যখন প্রত্যেকটা দিনই তার জন্য চ্যালেঞ্জিং। আমি এখন সেই সময়ে আছি। এখন যারা  সেরা ফর্মে আছে তামিম, মুশফিক বা রিয়াদ তাদেরও আজ থেকে চার বছর পর এমন পরিস্থিতি আসবে! সবাই চাইবে তাদের সঙ্গে তরুণ ক্রিকেটারদের মিলাতে। এটা একটা প্রক্রিয়া। আমি এ নিয়ে ভাবনার কিছু দেখি না।’

মাশরাফিকে এমন অপ্রস্তুত অবস্থায় সব শেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৬ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে। পেসার তাসকিন আহমেদ বোলিং অ্যাকশনের জন্য হঠাৎ নিষিদ্ধ হওয়ায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের  গেটে হু হু করে কেঁদেছিলেন।

টাইগার ক্যাপ্টেনকে আবারও দেখা গেল আবেগপ্রবণ অবস্থায়। তবে এবার কাঁদেননি ম্যাশ। উল্টো ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন!

মাশরাফি শেষ ১০ ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১টি। শেষ ৫ ম্যাচে নেই কোনো উইকেট! তবে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে বলেই যেন আত্মবিশ্বাসী! কেন না ক্যারিয়ারে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি সফল তিনি। আফ্রিকার এই দলটির বিরুদ্ধে ৪২ ওয়ানডে  খেলে নিয়েছেন ৬৩ উইকেট। এবার চাপের বোঝা মাথায় নিয়ে মাশরাফি কি পারবেন নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করতে? যদিও টাইগার দলপতি বলেছেন, তিনি গ্যারান্টি দিতে পারছেন না ভালো করবেনই!

গুঞ্জন ছিল, জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি তার বিদায়ী সিরিজ। তবে কাল মাশরাফি বললেন, নিজে থেকে অবসরের বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত  নেবেন না! আর অবসর নিলেও আগেই মিডিয়াকে জানাবেন না। তাই পরের সিরিজে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাশরাফিকে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! আবার জিম্বাবুয়ে বিরুদ্ধেই যদি ক্যারিয়ারে সমাপ্তি  রেখা টেনে দেন তাতেও বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না।

 

‘অবসর নাটক’ নিয়ে বিসিবি এবং মাশরাফির মধ্যে  বেশ কিছুদিন থেকেই একটা অদৃশ্য খেলা চলছে! যেন  কেউ কারও কাছে হার মানতে চাচ্ছে না? এবার বিসিবির কোর্টেই বল ঠেলে দিয়েছেন মাশরাফি! এখন বিসিবি কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই দেখার বিষয়!

তবে কাল মাশরাফির ‘আমি কি চোর’ মন্তব্য মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নিউজ হয়ে যায় বিদেশি গণমাধ্যমেও। ‘২৯  ফেব্রুয়ারি’ চার বছর পর পর আসা এই তারিখটা যেন ক্ষুব্ধ নড়াইল এক্সপ্রেসের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকল  দেশের ক্রিকেটাতিহাসে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর