কয়েক স্টেপ এগিয়ে স্লগ সুইপ করে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। জিম্বাবুয়ের বোলার মাদভরের বলে লিটন কুমার দাসের ছক্কাটি ছিল দেখার মতো। এরপরই পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগায় ফিজিও কাঁধে ভর করে চলে যান ড্রেসিংরুমে। তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ২০৬ রান। ওভার ছিল ৩৬.২। লিটনের রান ১২৬। শেষ পর্যন্ত আর ব্যাট হাতে নামতে পারেননি তিনি। লিটন ১০৬ বলের ইনিংসে ছিল ১৩ বাউন্ডারির সঙ্গে দুটি ছক্কার মার।
তিরিপানোর বল ডিপ মিডউইকেট দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিন অঙ্কে পৌঁছে যান লিটন কুমার দাস। সেঞ্চুরি করতে খেলেছেন ৯৫ বল। তার ইনিংসে ছিল একটি বিশাল ছক্কার সঙ্গে ১০টি বাউন্ডারি।
যদিও সেঞ্চুরি করতে কিছু ধীর গতি চলে এসেছিল তার ব্যাটিংয়ে। কিন্তু শতক পূরণের পর যেন পুনরায় ঝলছে ওঠে লিটনের ব্যাট। এক ওভারে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান। কাল টাইগার ওপেনারের প্রতিটি শটেই ছিল মুগ্ধতা! সবুজে ঘেরা নয়নাভিরাম সিলেটে কাল লিটনের ব্যাট ছড়ালো সৌরভ!তার দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতেই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ৩২১ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ।
গতকাল বাংলাদেশের ইনিংসটা শুরু হয়েছিল গল্পের ‘খরগোশ-কচ্ছপ’ দৌঁড়ের মতো। তবে শেষটা ঠিক একই রকম গল্পের মতো হয়নি। ম্যাচের ‘খরগোশ’ অনেক সতর্ক। বলা হচ্ছে, পাওয়ার প্লেতে দুই ওপেনার লিটন ও তামিমের ব্যাটিং নিয়ে! একপ্রান্তে যখন লিটন জিম্বাবুয়ের বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ছেন সেখানে তামিম সেই একই বোলারদের বিরুদ্ধে রীতিমতো ধুঁকছিলেন! পাওয়ার প্লের প্রথম ১০ ওভারে লিটন যেখানে ২৯ বল খেলে ২৭ রান করেন সেখানে তামিম ৩১ বল খেলে করেন মাত্র ১৫ রান। একটি মাত্র বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন সেটাও কিনা দশম ওভারে। ১৩তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪৩ বল খেলেছেন করেছেন ২৪ রান।
হয়তো যুক্তি থাকতে পারে, তিনি একপ্রান্ত আগলে ধরে খেলেছিলেন! তাই বলে তামিমের মতো একজন ড্যাসিং ওপেনার জিম্বাবুয়ের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এমন কচ্ছপ গতির ব্যাটিং!
তবে বাইশগজে তামিমের মন্থর ব্যাটিংয়ের বিপরীতে ঝড়ো গতিতে রান তুলে সব ভুলিয়ে দেন লিটন। পাওয়ার প্লের পর আরও মারমুখী ব্যাটিং করেছেন। তার ১২৬ রানের ইনিংসটি ক্যারিয়ার সেরা।
এটি তার ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। লিটনের প্রথম সেঞ্চুরিটি ২০১৮ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে। দুবাইয়ে ভারতের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে খেলেছিলেন ১২১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে একদিনের ক্রিকেটে লিটন এখন সর্বোচ্চ রানের মালিক। এর আগে অবশ্য সেঞ্চুরিই আছে আর মাত্র একটি। ২০১৮ সালে খেলা একমাত্র টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার সাই হোপের অপরাজিত ১০৮ রান। গতকাল তাকেও টপকে গেলেন লিটন।
তবে টাইগার ওপেনারকে যদি বলা হয়, তার ক্যারিয়ারে সেরা ইনিংস কোনটি? নিশ্চয় বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলা সমারসেটে অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংসের কথাই বলবেন। তবে ওই ম্যাচে লিটন ওপেনার ছিলেন না। খেলতে নেমেছিলেন ৫ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে।
মূলত ওপেনার হলেও লিটনের বিভিন্ন পজিসনে ব্যাটিং করার অভিজ্ঞতা আছে। ৩৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২০বারই ইনিংস ওপেন করেছেন। সফল ওপেনার হিসেবেই। দুই সেঞ্চুরি ছাড়াও তিন হাফ সেঞ্চুরির মধ্যে দুটিই করেছেন উদ্বোধনী জুটিতে ব্যাট করতে নেমে। কালকের ইনিংস দিয়ে যেন ওপেনিংয়ে জায়গাটা পাকাপোক্ত করে রাখলেন।
লিটনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের দিনে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দলীয় সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৯ সালে সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ বুলাওয়েতে আফ্রিকান দলটির বিরুদ্ধে করেছিল ৩২০ রান। নয়নাভিরাম সিলেটেও এটি রেকর্ড। তবে কালকের স্কোরটি সব মিলে ওয়ানডেতে অষ্টম দলীয় সর্বোচ্চ (দলীয় সর্বোচ্চ গত বিশ্বকাপে নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৩৩৩ রান)।
শেষ দিকে বাইশগজে ঝড় তুলেছিলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। বিশ্বকাপের পর প্রথম ওয়ানডে দলে ফিরে মাত্র ১৫ বলে তিন ছক্কায় ২৮ রানের ইনিংস। ৪১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন মোহাম্মদ মিথুন। তবে এ ম্যাচে নায়ক লিটনই, সাইফুদ্দিন কিংবা মোহাম্মদ মিথুন পার্শ্বনায়ক মাত্র!
বাংলাদেশ : ৩২১/৬ (৫০ ওভার) (লিটন ১২৬, মিথুন ৫০,
মাহমুদুল্লাহ ৩২, শান্ত ২৯, সাইফুদ্দিন ২৮, তামিম ২৪,
মুশফিক ১৯; এমপুফো ২/৬৮)।
জিম্বাবুয়ে : ১৫২/১০ (৩৯.১ ওভার) (মাধিভিরে ৩৫, মুতুমবুজি ২৪, সিকান্দার ১৮, সাইফুদ্দিন ৩/২২, মেহেদী ২/৩৩, মাশরাফি ২/৩৫)।
ফল : বাংলাদেশ ১৬৯ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : লিটন দাস।