শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

শেষ হচ্ছে এক অনন্য অধ্যায়

মেজবাহ্-উল-হক, সিলেট থেকে

শেষ হচ্ছে এক অনন্য অধ্যায়

ছবি : রোহেত রাজীব

অধিনায়ক মাশরাফির আনুষ্ঠানিক বিদায় আজ। শেষ হচ্ছে আজ ক্রিকেটের এক অনন্য অধ্যায়! যে অধ্যায়ের প্রতিটি চরণে কতই না আনন্দ-বেদনা আর অর্জনের কাব্য কথা লুকিয়ে!

২০১৪ সালে বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে দায়িত্ব নিয়ে তারপর  দেশের ক্রিকেটকে পৌঁছে দিয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায়। তার নেতৃত্বে ৮৭টি ওয়ানডে খেলে টাইগাররা জয় পেয়েছে ৪৯টি। আজ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে জিতলে একদিকে যেমন বাংলাওয়াশ করার আনন্দ, পাশাপাশি ম্যাশের নেতৃত্বে জয়ের হাফ সেঞ্চুরিও হয়ে যাবে বাংলাদেশের! এমন এক উপলক্ষ সামনে রেখেই নেতৃত্বকে গুডবাই জানালেন নড়াইল এক্সপ্রেস!

সিলেট ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দিন থেকেই আলোচনার  কেন্দ্রে ছিলেন মাশরাফি। প্রথম ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে, ম্যাশের বলা ‘আমি কি  চোর! আমি কি মাঠে চুরি করি!’ ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রথম দিনই ‘অবসর’ আলোচনার সমাপ্তি ঘটে, যখন ম্যাশ নিজেই জানান এখনই অবসর নিচ্ছেন না!

এদিকে ক্রিকেট বোর্ড সূত্রেও জানা যায়, ৮ মার্চ সভাতেই চূড়ান্ত হবে অধিনায়কত্ব নিয়ে! তার আগে নিজে থেকেই সরে দাঁড়ালেন মাশরাফি। টাইগার ক্যাপ্টেন কি তাহলে অভিমান থেকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? ম্যাশ বলেন, ‘অভিমান বা রাগ করা বা ক্ষোভ দেখানো...(হাসি) আমি আসলে কার ওপরইবা দেখাব? এসব জিনিস থাকে না তা নয়, অনেকের থাকে, বলতে পারে। কিন্তু সামনে এরকম বলার আসলে কিছু নেই প্রথমত। আর সত্যি কথা। অনেস্টলি বলছি। এরকম কিছু না। আমাকে একটা দায়িত্ব  দেওয়া হয়েছিল। আপনাদের সামনে এসে ঘোষণা দিলাম  যে আমার ওটা শেষ। কিন্তু এর ভিতরে যা হয়েছে মানা না মানা, ভালো-মন্দ সবকিছু নিয়েই তো এগিয়ে আসতে হয়েছে এই পর্যন্ত।’

গতকাল সকালে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফি। তারপর পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলেন, তারপর জানিয়ে দেন ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনকে।

দুপুরে প্রেস কনফারেন্সে এসে প্রথমেই বলেন, আমার একটি ঘোষণা আছে! তারপর নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর  ঘোষণা দেন। মাশরাফি বলেন, ‘আমি আজ বাংলাদেশ জাতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাচ্ছি। আগামীকাল জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচ অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। খেলোয়াড় হিসেবে অবশ্যই চেষ্টা করব আমার সেরাটা দেওয়ার, যদি সুযোগ আসে। পরবর্তী অধিনায়কের জন্য আমার শুভকামনা থাকবে। আমার বিশ্বাস সে বাংলাদেশ দলকে পরের ধাপে নিয়ে যাবে। যদি আমি দলে থাকি আমার যে অভিজ্ঞতা, আমার ভিতরে যতটুকু আছে, চেষ্টা থাকবে ততটুকু  দেওয়ার। ধন্যবাদ সবাইকে।’

মাশরাফি এক সংসদ সদস্য, তাই মনে হতে পারে তিনি এখন রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। ক্রিকেট থেকে দূরে থাকবেন। কিন্তু মাশরাফি অন্য চরিত্রের মানুষ! সাগরের পানি থেকে যেমন লবণাক্ততা আলাদা করলে তাতে আর সাগরের পানির স্বকীয়তা থাকে না তেমনি মাশরাফি জাতীয় সংসদ সদস্য হলেও ক্রিকেটকে তার  থেকে আলাদা করার উপায় নেই! সে কথা নেতৃত্ব ছাড়ার লগ্নে মনে করিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি নিজেই, ‘আমি সব সময়ই বলি আমি যা আজ যা কিছু তা সবকিছু ক্রিকেট দিয়ে। ক্রিকেট খেলা যদি শেষ না করতাম তাহলে মাছের ব্যবসা করতে পারতাম। পারিবারিক ব্যবসা তো আছে, ঘের আছে সেটাই হয়তো আমাকে ওভাবে চলে আসতে হতো। আমি যা কিছু হয়েছি এই ক্রিকেট দিয়েই হয়েছি এবং সামনে আমার যতো পরিকল্পনা অবশ্যই তার প্রধান ক্রিকেট। অবশ্যই আমাকে আমার এলাকার যা কাজ আছে করতে হবে। আল্লাহ যদি আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত আমাকে এটা করতে হবে। এখন  থেকে অবশ্যই আমি পিছু সরব না। আর ক্রিকেট টাতো আমার রক্তের ভিতরে।’

অধিনায়ক মাশরাফির বিদায়ে শুভকামনা জানিয়েছেন তার সহযোদ্ধারা। মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘মাশরাফি ভাইয়ের  কোনো বদলি হবে না। এমন অধিনায়ক আর বাংলাদেশে আসবে না। উনি যেন পরিবারের অংশ। তার ক্যাপ্টেন্সি মিস করব। শুধু অন দ্য ফিল্ড না। অফ দ্য ফিল্ডেও মাশরাফির অভাব দেখা দেবে। তার সঙ্গে খেলাটা অন্যরকম অনুভূতি।’

ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল বলেন, ‘মাশরাফির অবদান ভোলার মতো নয়। ২০১৫ সাল থেকে আমাদের দলটি এ পর্যন্ত যা করেছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না।’

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে উনি কতটা সফল সেটা দেখা যায় তার রেকর্ডে। মাশরাফি ভাই যখন বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছিল তখন দলের  চেহারাই পাল্টে গিয়েছিল। আর আমরা বেশ স্ট্রাগল করছিলাম। উনি আসায় কাজ সহজ হয়েছিল।’

মোহাম্মদ মিথুন বলেন, ‘সাফল্যই বলে উনি অধিনায়ক হিসেবে কেমন। অবশ্যই তাকে শুভ কামনা জানাই। আশা করি তিনি ভালো থাকবেন।’

সর্বশেষ খবর