শনিবার, ৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

যেমন লিটন তেমন তামিম

মেজবাহ্-উল-হক, সিলেট থেকে

যেমন লিটন তেমন তামিম

ছবি : রোহেত রাজীব

সবুজ কোলে টিলায় সুশোভিত লাক্কাতুরা চা বাগানের এক কোণে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। দেখে মনে হবে যেন সবুজের মাঝে অপূর্ব এক ক্যানভাস। আর সেই ক্যানভাসে দুই শিল্পী লিটন দাস ও তামিম ইকবাল মনের মতো করে রংতুলির (পড়ুন ব্যাটের) আঁচড় কাটলেন! সৃষ্টি হলো অপূর্ব এক চিত্রকর্ম! যা বাংলাদেশের ক্রিকেটাতিহাস রাঙিয়ে দিল নতুন করে। এক ম্যাচে রেকর্ডের বন্যা! ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস, জুটিতেও সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড। প্রথমবারের মতো এক ম্যাচে দুই ওপেনারের সেঞ্চুরি।

লিটন দাস খেললেন ১৭৬ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস। আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল অপরাজিত রইলেন ১২৮ রানেই। বৃষ্টি বিঘিœত ৪৩ ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করল ৩২২ রান। আর একটু হলে ডাবল সেঞ্চুরিই হয়ে যেত লিটনের। তারপরও ১৪৩ বলের ইনিংসেই মোহিত দর্শক। ১৬টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৮টি বিশাল ছক্কা। আগের ম্যাচে ১৫৮ রান করে নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে ছিলেন তামিম। কাল তার সামনেই লিটন তাকে টপকে গেলেন। এতে তামিম খুশিই হয়েছেন! হয়তো চেয়েছিলেন লিটনের ডাবল সেঞ্চুরি হোক, তাই শেষের দিকে তিনি সিঙ্গেলস নিচ্ছিলেন। কিন্তু একটুর জন্য হলো না।

তামিমের ইনিংসটিও ছিল অসাধারণ। তার হার না মানা ১২৮ রানের ইনিংসটি খেলেছেন মাত্র ১০৯ বলে। ৭টি চারের সঙ্গে ৬টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনিও। তারপরও এ ম্যাচে তামিম ছিলেন পার্শ্ব নায়ক হয়ে।

কাল লিটন-তামিমের জুটিতে এসেছে ২৯২ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে ষষ্ঠ বৃহত্তম জুটি। সেরা জুটি ২০১৫ সালে এই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলসের। অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় তারা করেছিলেন ৩৭২ রান।

তবে উপমহাদেশের মাটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে হায়দরাবাদে ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩৩১ রান করেছিলেন ভারতের দুই ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার ও রাহুল দ্রাবিড়।

গতকাল তামিম-লিটন পেছনে ফেলেছেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ২২৪ রানের জুটি। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তারা জুটিটি গড়েছিলেন। সবার আগে তারা ভেঙে ফেলেন ২১ বছরের পুরনো বাংলাদেশের ওপেনিং পার্টনারশিপে শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ও মেহেরাব হোসেন অপির করা ১৭০ রানের জুটির রেকর্ড। ১৯৯৯ সালে এই মার্চেই ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে তারা জুটিটি গড়েছিলেন। ওই ম্যাচে ১০১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছিলেন অপি। আন্তর্জতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি ছিল সেটি।

উইলিয়ামসের বলে পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়েই সেঞ্চুরি পূরণ করেন লিটন দাস। সেঞ্চুরি করতে খেলেছেন ১১০ বল। সঙ্গে ছিল ১৩টি বাউন্ডারির মার। পরের ৩৩ বলে করেছেন ৭৬ রান। লিটন কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন এখানেই বোঝা যায়। এই সিরিজে এটি লিটনের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। প্রথম ম্যাচেও তিনি খেলেছিলেন ১২৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ওই ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। সেঞ্চুরির পর মনে হচ্ছিল ডাবল সেঞ্চুরিও অসম্ভব নয়। কিন্তু ১২৬ রান করার পর পেশিতে টান পড়ায় রিটায়ার্ট হার্ড হয়ে বাইশগজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট। গতকাল ডাবল সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েছিলেন। একটুর জন্য হলো না।

এ ম্যাচে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তামিম। আগের ম্যাচে ১৫৮ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেছেন। সেঞ্চুরি করেছিলেন ২৯ ইনিংস পর। বেশ কিছু রানখরায় ভোগার পর সিলেটে যেন নিজেকে নতুন করে পান এই ড্যাসিং ওপেনার। প্রথম ম্যাচে ৩২১, দ্বিতীয় ম্যাচে ৩২২। আর কাল লিটন ও তামিমের সেঞ্চুরিতে মাত্র ৪৩ ওভারেই ৩২২ করে বাংলাদেশ। কাল সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। ৩৩.২ ওভার খেলা হওয়ার পর শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। তখন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১৮২ রান। লিটনের ১০২, তামিমের ৭৯। অতিরিক্ত থেকে মাত্র ১ রান। দীর্ঘ ২ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট পর খেলা শুরু হলে গ্যালারির দর্শকরা যেন আনন্দে উল্লসিত হয়ে পড়েন। কাল বৃষ্টিতেও যেন বিরক্ত হননি সমর্থকরা! বিষয়টা এমন যেন এই বৃষ্টি কেবল বৃষ্টি নয়, এ তো অধিনায়ক মাশরাফিকে বিদায় জানাতে প্রকৃতির কান্না!

 

বাংলাদেশ : ৩২২/৩ (৪৩ ওভার) (লিটন ১৭৬, তামিম ১২৮*)।

জিম্বাবুয়ে : ২১৮/১০ (৩৭.৩ ওভার) (সিকান্দার রাজা ৬১, মাধভেরে ৪২, চাকাভা ৩৪; সাইফুদ্দিন ৪/৪১, তাইজুল ২/৩৮)।
টার্গেট : ৩৪২। ফল : বাংলাদেশ ১২৩ রানে জয়ী। 
ম্যাচসেরা : লিটন দাস।
ম্যান অব দ্য সিরিজ : তামিম ইকবাল ও লিটন দাস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর