মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

লিটন-তামিম জুটির রেকর্ড

মেজবাহ্-উল-হক

লিটন-তামিম জুটির রেকর্ড

ছবি : রোহেত রাজীব

শেষ ওয়ানডে ম্যাচের ছবিটাই যেন গতকাল প্রদর্শিত হলো আরেকবার। সিলেটের মতো ঢাকাতেও ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত বাংলাদেশ। নায়ক সেই লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। কালকের টি-২০তে তারা উদ্বোধনী জুটিতে এনে দিলেন ৯২ রানের জুটি। এই শক্ত ভীতের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্কোর পৌঁছে গেল ২০০ রানে।

টি-২০তে প্রথম উইকেটে পার্টনারশিপের নতুন রেকর্ড গড়লেন লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। আগের দুটির  রেকর্ড ছিল তাদেরই। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তামিম-লিটন মিলে করেছিলেন ৭৪ রানের প্রথম জুটি।

ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে এই জুটি রেকর্ডের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন। গড়েছিলেন ২৯২ রানের জুটি। সেটি ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসেই সেরা ১০ জুটির একটি। তবে কাল টি-২০তে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড ভাঙতে পারেননি। সেটি হচ্ছে তামিম ও মাহমুদুল্লাহ ১৩২*, দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ২০১২ সালে। গতকাল বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টি-২০তে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড গড়েছেন। এর আগে আফ্রিকার দলটির বিরুদ্ধে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এই ক্রিকেটে দলীয় সর্বোচ্চ ছিল ১৭৫। তবে কাল টি-২০তে তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। এর আগে শ্রীলঙ্কার মাটিতে অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফিতে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে ২১৫ রান করেছিল বাংলাদেশ। সেটাই টি-২০র সর্বোচ্চ স্কোর । দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১১ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে, চট্টগ্রামে।

গতকাল মাত্র ৩২ বলে অপরাজিত ৬২ রানের এক সাইক্লোন ইনিংস খেলেছেন সৌম্য সরকার। তার ইনিংসে ছিল বাউন্ডারি চারটি, ছক্কা ৫টি। তিনটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন ইনিংসের শেষ ওভারে। সৌম্য হাফ  সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন ৩০ বলেই।

একদিন আগেই একটা দুঃসংবাদ পেয়েছিলেন এই তারকা ব্যাটসম্যান। তিন ফরম্যাটের দলে থেকেও ছিলেন না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে। এ নিয়ে প্রশ্নও উঠেছিল। তবে সব শেষ খবর হচ্ছে, কেন্দ্রীয় চুক্তির ১৬ জনের তালিকায় না থাকলেও নতুন করে যোগ হচ্ছে সৌম্য সরকারের নাম।

লিটন দাস যেন ওয়ানডের ফর্মটাই টেনে এনেছেন টি-২০তে। আগের ম্যাচে খেলেছেন ১৭৬ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। কাল টি-২০তে করলেন ৫৯ রান।

লিটন দাস শুরু থেকেই ছিলেন ভয়ঙ্কর। হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন মাত্র ৩১ বলে। তবে জিম্বাবুয়ের  পেসারদের বিরুদ্ধে যত সহজে রান করছিলেন স্পিনারদের বিরুদ্ধে যেন কিছু অস্বস্তিবোধ করেন। সে কারণে হাফ সেঞ্চুরির পর ইনিংসে আর বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেননি। আটকে যান ৫৯ রানেই।  খেলেছেন মাত্র ৩৯ বলে। তার ইনিংসে ছিল পাঁচটি বাউন্ডারির সঙ্গে তিনটি দর্শনীয় ছক্কার মার।

তামিম ইকবাল অবশ্য লিটনের আগেই ফিরে গেছেন সাজঘরে। তিনি করেছেন ৩৩ বলে ৪১ রান। তিনটি চারের সঙ্গে দুটি ছক্কা। শেষ ওয়ানডেতে যেভাবে লিটনকে সমর্থন দিয়েছেন, গতকালও একই কাজ করেছেন। অনেক দিন থেকেই ওপেনিং জুটি নিয়ে ভুগছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তামিম ফর্মে ফেরার পাশাপাশি লিটনও ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিং করছেন। পাওয়ার প্লের প্রথম ছয় ওভারে বাংলাদেশ যেন ‘সুপার পাওয়ার’ এক দল! ৩৬ বলে বিনা উইকেটে করেছিল ৫৯ রান। সবচেয়ে বেশি ঝড় পোহাতে হয়েছে জিম্বাবুয়ের পেসারদের। ক্রিস এমপোফু তার ৪ ওভারেই দিয়েছেন ৫৮ রান। ডোনাল্ড তিরিপানো ৪ ওভারে দিয়েছেন ৩৯ রান। প্রথম দুই ওভারে মুম্বা ২৪ রান দেওয়ার পর তার হাতে আর বল তুলে দেওয়ার সাহসই পাননি অধিনায়ক শন উইলিয়ামস।

জিম্বাবুয়ের বোলাররা গতকাল একদমই সুবিধা করতে পারেননি। তারপরও ৩২টি ডট বল আদায় করে নিয়েছেন। অন্যদিকে গতকাল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও যেন ছক্কা হাঁকানোর দিকে একটু  বেশিই মনোযোগী ছিলেন। সব মিলে বাংলাদেশের ইনিংসে ছক্কা ছিল ১২টি। এটিও একটি রেকর্ড। গতকাল কোনো ব্যাটসম্যানই বল ‘নষ্ট’ করেননি। মুশফিকের ইনিংসটি মাত্র ৮ বলের হলেও এর মধ্যেই দুটি ছক্কা ছিল, রান ১৭। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ করেছেন ৯ বলে ১৪ রানের হার না মানা ইনিংস।

বাইশগজে টাইগাররা ঝড় তুললেও গ্যালারি ছিল অনেকটা ফাঁকা! করোনাভাইরাসের কারণে গ্যালারি  দর্শক সমাগম যাতে কম হয় এজন্য সাবধানতা  থেকেই সব ক্রিকেট বিক্রি করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট  বোর্ড।

 

বাংলাদেশ : ২০০/৩ (২০ ওভার) (সৌম্য ৬২*, লিটন ৫৯, তামিম ৪১; মাধিভিরে ১/১৫, সিকান্দার ১/৩১)।

জিম্বাবুয়ে : ১৫২/১০ (১৯ ওভার) (টিনাশে ২৮, কার্ল মুম্বা ২৫, উইলিয়ামস ২০; মুস্তাফিজ ৩/৩২, আমিনুল ৩/৩৪)।

ফল : বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা : সৌম্য সরকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর