বৃহস্পতিবার, ১৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বযুদ্ধকেও হার মানাল করোনা

রাশেদুর রহমান

বিশ্বযুদ্ধকেও হার মানাল করোনা

এক দিন আগেই স্থগিত হয়েছিল ইউরো কাপ। গতকাল স্থগিত করা হয় কোপা আমেরিকাও। ছবি : এএফপি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা কেমন ছিল? পৃথিবীর নানান দেশের আকাশে বোমারু বিমানের আওয়াজ। ইউরোপ আর এশিয়ার বিভিন্ন শহরে বোমা ফাটার বিকট শব্দ। যুদ্ধের ময়দানে আহত মানুষের আহাজারি। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় জর্জরিত নির্বাক লাখ লাখ মানুষ। বিশ্বযুদ্ধের সেই ভয়াবহতায় বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছিল পৃথিবীর অনেক শহর। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল যাতায়াত ব্যবস্থা। বাতিল হয়েছিল অসংখ্য ক্রীড়া ইভেন্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কেটে গেছে প্রায় ৭৫ বছর। এর মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে অনেক। কিন্তু কোনো যুদ্ধই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যায়নি। বরং মানুষ সেই ভয়াবহতাকে স্মরণ করে বার বার সতর্ক হয়েছে। শান্তির বাণী ছড়িয়ে একে-অপরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ক্ষুদ্র এক ভাইরাস ‘করোনা’ এসে বিশ্বযুদ্ধের সেই ভয়াবহতাকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে বিশ্বযুদ্ধকেও।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাতিল করা হয়েছিল বিশ্বকাপ ফুটবল এবং দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থখ্যত অলিম্পিক গেমস। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ অনুষ্ঠিত হয়নি সাত মৌসুম। ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানও অনুষ্ঠিত হয়নি সাতটি মৌসুম। অবশ্য জার্মান বুন্দেসলিগা এবং ইতালির সিরি এ লিগ কেবল এক বছরের জন্য স্থগিত হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে আরও অনেক ক্রীড়া ইভেন্টই বাতিল হয়েছিল তখন। কিন্তু অনেক ক্রীড়া ইভেন্ট যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেমন কোপা আমেরিকার চারটি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯৩৯, ১৯৪১, ১৯৪২ ও ১৯৪৫)। লা লিগা স্প্যানিশ সিভিল ওয়ারের সময় বন্ধ থাকলেও বিশ্বযুদ্ধের সময় ঠিকই অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাস্কেটবল আর বেসবলের অনেক টুর্নামেন্টও চলছিল বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্য দিয়েও। কিন্তু করোনাভাইরাস বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ককেও ছাড়িয়ে গেল। বিশ্বজুড়ে বলতে গেলে সব ক্রীড়া ইভেন্টই স্থগিত হয়ে গেছে। কোনো কোনোটা বছরখানেকের জন্য পিছিয়ে গেছে। কোনো কোনোটা একেবারেই বাতিল হয়ে গেছে। আবার কিছু ইভেন্ট স্থগিত হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব ধরনের ক্রীড়া ইভেন্ট স্থগিত করা হয়েছে।

চলতি বছর সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আকর্ষণ টোকিও অলিম্পিক গেমস। এখনো এই আসর স্থগিত করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি স্থানীয় আয়োজক কমিটি এবং ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে দাবি জানিয়েছেন, এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হোক অলিম্পিক। তার মতো অনেক দেশের সরকারই চাইছে, পিছিয়ে যাক অলিম্পিক। অলিম্পিকের পরই সেরা আকর্ষণ ছিল ইউরো কাপ ও কোপা আমেরিকার আসর। দুটিই স্থগিত হয়ে গেছে। এক বছর পর অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্ট দুটি। বিভিন্ন লিগ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলো আবার মাঠে গড়াতে পারবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই আসর নিয়েও আছে সংশয়।

বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়ার বড় এক অঞ্চল ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। ল্যাটিন আমেরিকার একটা অংশও যুদ্ধে জড়িয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ১৫০টিরও বেশি দেশে। চীন থেকে শুরু হয়ে এই ঘাতক ভাইরাস ইউরোপ, আমেরিকা আর আফ্রিকায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এরই মধ্যে ৮ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। লাখ লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। বোমারু বিমানের জোরাল আওয়াজ না থাকলেও এখন ইউরোপ আমেরিকার শিশুরা খেলতে বের হয় না।

ধীরে ধীরে বিরানভূমি হয়ে উঠছে পুরো পৃথিবী। শোকস্তব্ধ এই পৃথিবীর মানুষের মধ্যে বিনোদনের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে পারত ক্রীড়াঙ্গন। কিন্তু পৃথিবীজুড়ে বেশিরভাগ ক্রীড়া ইভেন্ট স্থগিত হওয়ায় সেই সুযোগ হারাল মানুষ। বিশ্বযুদ্ধের সময় পত্রিকার পাতায় অনেকেই খেলার খবর পড়ে সময় কাটাতেন। এখন আর সেই সুযোগ কোথায়!

সর্বশেষ খবর