১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল। ঘরোয়া ফুটবলে একটি স্মরণীয় দিনই বলা যায়। সেদিন ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ঢাকা আবাহনী ও নবাগত ব্রাদার্স ইউনিয়ন। আগের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন আবাহনীতে তারকার ভরপুর। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে উঠে আসা ব্রাদার্সে ছিল অচেনা তরুণরা। দর্শক ঠাসা গ্যালারি। সবাই ভেবেছিল সহজ জয়ে আবাহনী শুভ সূচনা করবে। সব ধারণা পাল্টে দিয়ে অঘটন ঘটাল গফুর বেলুচের প্রশিক্ষণ দেওয়া দলটি। টুটুর একমাত্র গোলে গোপীবাগের দলটি জিতে গেল। স্বাধীনতার পর ঘরোয়া ফুটবলে এটিই ছিল প্রথম বড় অঘটন। আগের বছর অর্থাৎ ১৯৭৪ সালে মোহামেডানের সুপার লিগে না উঠাটাই ছিল বড় অঘটন। একের পর এক ম্যাচ হেরেছে তারা। তবে দিলকুশার কাছে ১-৫ গোলে বড় হারটা সবাইকে অবাক করে দেয়। অবশ্য ম্যাচটি নাকি পাতানো ছিল। ওই সময়ে মোহামেডানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ান্ডারার্সকে সুপার লিগ থেকে বাদ দিতেই এই পাতানো ম্যাচের আশ্রয় নিয়েছিল মোহামেডান।
১৯৭৬ সালে লিগে আবাহনী রানার্সআপ হলেও সুপার লিগে ওঠাটাই তাদের কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শান্তিনগর, ইস্টএন্ডের কাছে হারলেও বড় অঘটন ছিল বিজিপ্রেসের কাছে হারটা। যে দল রেলিগেশনে লড়ছে তাদের কাছে হেরে অঘটনের শিকার হয় আবাহনী।
১৯৭৮ সালে লিগের প্রথম পর্বে আবাহনী অপ্রতাশিত ভাবে ০-২ গোলে হেরে যায় দুর্বল ওয়ারীর কাছে। লোভন ও সাথী দুটি গোল করেন। আবাহনীর এই হার এতটাই আলোচিত হয়ে পড়ে তাদের কোনো খেলা হলেই মোহামেডানের সমর্থকরা ওয়ারী আইলো, ওয়ারী আইলো বলে তিরস্কৃত করত। সুপারলিগেও আবাহানী হেরে যায় ওয়ারীর কাছে। তবে ব্যবধান ছিল ১-০। ১৯৮২ সালে ভিক্টোরিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরে অঘটনের শিকার হয় মোহামেডান।১৯৮৫ সালে সুপার লিগে ১ গোলে এগিয়ে থেকেও মোহামেডান ১-২ গোলে হেরে যায় আরামবাগের কাছে। এই হারই শিরোপা রেস থেকে ছিটকে পড়ে সাদা-কালো জার্সিধারীরা। আর আরামবাগ পেয়ে যায় জায়ান্ট কিলারের খেতাব। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে সুপার লিগে মুক্তিযোদ্ধার কাছে আবাহনীর ২-০ হারটাও বড় অঘটন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই হারেই আবাহনীর শিরোপা আশা শেষ হয়ে যায়। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলের কাছে মোহামেডানের ২-১ গোলে হারটাও ছিল স্মরণকালের বড় অঘটন। টানা তিন মৌসুম লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের পর দুর্বল দলের হারটা সবাইকে অবাক করে দেয়। ১৯৯৫ সালে ১ গোলে এগিয়ে থেকেও ফকিরেরপুলের কাছে ১-২ গোলে হেরে যায় আবাহনী।
চলতি লিগে মোহামেডানের কাছে বসুন্ধরা কিংসের হারটাও অঘটন। তবে সব ছাপিয়ে গেছে ১৯৭০ সালে আগাখান গোল্ডকাপের একটি ম্যাচ। আটজন পাকিস্তানের জাতীয় দলের খেলোয়াড় নিয়ে গড়া তৎকালীন ইপিআইডিসি ১-০ গোলে হেরে যায় দুর্বল ফায়ার সার্ভিসের কাছে।