শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
স্টেডিয়াম যখন হাসপাতাল

ফিরে এলো ১০০ বছর আগের স্মৃতি

দ্য গার্ডিয়ান

ফিরে এলো ১০০ বছর আগের স্মৃতি

এটি ১০০ বছরের আগের ছবি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহতদের চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ডের ট্রেন্টব্রিজ স্টেডিয়ামকে তৈরি করা হয়েছিল হাসপাতাল। ছবিতে সেই হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীরা -দ্য গার্ডিয়ান

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা কেমন তা ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে যুক্তরাজ্যের মানুষ। প্রথম দিকে সাধারণ মানুষ ততটা গুরুত্ব দেয়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ও এমনটা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল, যুদ্ধাহতদের জন্য ৫০ হাজার বেড হলেই হয়ে যাবে। কিন্তু আহত হয়েছিল ৭৩ হাজার। পরে ট্রেন্টব্রিজ ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে হাসপাতাল বানানো হয়েছিল। মানুষ বুঝতে পেরেছিল বিশ্বযুদ্ধ কতটা ভয়াবহ ছিল। ১০০ বছর পর আবারও স্টেডিয়ামগুলো হাসপাতাল বানানো হচ্ছে

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তখন শেষের পথে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক প্রকান্ড জাহাজ এসে ভিড়ল ম্যানচেস্টারে। জাহাজের সব যাত্রীই মৃতপ্রায়। তারা সবাই ভয়াবহ এক ফ্লুতে আক্রান্ত। আটলান্টিক মহাসাগরের দীর্ঘ জার্নিতে তাদের ফ্লু রূপ নিয়েছে নিউমোনিয়ায়।

যাত্রীদের দুর্দশা দেখে নিকটবর্তী রেড ক্রস হাসপাতালের ‘মিস জেলডার্ট’ তাদের চিকিৎসা দেওয়ার দায়িত্ব নেন এবং তার স্বেচ্ছাসেবীদের জানিয়ে দেন রোগীদের যাতে খুব ভালোভাবে দেখাশোনা করা হয়। এজন্য হাসপাতালকে পরের চার সপ্তাহ খুবই ভোগান্তির মধ্যে পড়তে

হয়েছিল। এমনিতেই চার বছরের যুদ্ধে অনেক ঝামেলা গেছে হাসপাতালের ওপর।

ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বানানো সাময়িক হাসপাতালে তাদের রাখা হয়েছিল। যদিও রোগীদের অধিকাংশই আর সুস্থ হতে পারেননি। কিন্তু যারা সুস্থ হচ্ছিলেন তাদেরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। বাইরের কিছু দেখতে পেতেন না। কেবল জানালা দিয়ে তারা বাইরের ঘাস দেখতেন। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের প্যাভিলিয়ন, দীর্ঘ রুম, ড্রেসিং রুমেই কেবল তারা সীমাবদ্ধ ছিলেন। যারা একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তারা পিচে ঘোরাঘুরি করতেন। রোগীদের রাখার জন্য ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব ল্যাঙ্কাশায়ারের ক্রিকেটাররাও তখন এই মাঠ ব্যবহার করতে পারেননি।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রোগী রাখার জন্য স্টেডিয়াম ব্যবহারের গল্প যুক্তরাজ্যের মানুষ শুনেছেন তাদের পিতামহ-প্রপিতামহের কাছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এখন তারা সেই দৃশ্য অবলোকন করছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যেভাবে খেলার মাঠ, স্কুল, হোটেল সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এখনো তাই হচ্ছে।

ইতিমধ্যে ওয়েলসের রাজধানী শহর ওয়েলসের নয়নাভিরাম রাগবি স্টেডিয়াম ‘কার্ডিফ প্রিন্সিপালিটি স্টেডিয়াম’-এ করোনায় আক্রান্তদের রাখার জন্য ২০০০ বেডের একটি হাসপাতাল বানানো হয়েছে। এই স্টেডিয়ামে ২০১৭ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে জুভেন্টাসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রোনালদোর রিয়াল মাদ্রিদ!

বিখ্যাত স্টেডিয়াম ওয়েম্বলি এবং ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রশিক্ষণ মাঠ সেন্ট জর্জ পার্ককে নিয়েছে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস। ‘হোম অব ক্রিকেট’ লর্ডসকেও হাসপাতালের সরঞ্জামাদি রাখা ও চিকিৎসা কর্মীদের পার্কিং হিসেবে ব্যবহার করার জন্য দেওয়া হয়েছে।

ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাব তাদের ইতিহাদ স্টেডিয়ামকে ডাক্তার ও নার্সদের ট্রেনিংয়ের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। চেলসিও করোনায় সহযোগিতা করার জন্য বেশকিছু আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। সিলভারস্টোন একটি মেডিকেল সেন্টার বানানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রায় প্রতিটি ক্লাবই এগিয়ে এসেছে করোনা মহামারীর এই সময়ে। কেউ আবাসনের ব্যবস্থা করছে, কেউ মেডিকেল যন্ত্রপাতি রাখার জায়গা দিচ্ছে, কেউ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করছে, কেউ মেডিকেল যন্ত্রপাতি দিচ্ছে। ফুটবল, ক্রিকেট, ফর্মুলা-ওয়ান, গলফ, রাগবি ইউনিয়ন, সাইক্লিং প্রতিটি ক্লাবই এগিয়ে এসেছে এই মহামারীর সময়ে।

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা কেমন তা ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে যুক্তরাজ্যের মানুষ। প্রথম দিকে সাধারণ মানুষ ততটা গুরুত্ব দেয়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ও এমনটা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল, যুদ্ধাহতদের জন্য ৫০ হাজার বেড হলেই হয়ে যাবে। কিন্তু আহত হয়েছিল ৭৩ হাজার। পরে ট্রেন্টব্রিজ ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে হাসপাতাল বানানো হয়েছিল। মানুষ বুঝতে পেরেছিল বিশ্বযুদ্ধ কতটা ভয়াবহ ছিল।

১০০ বছর পর আবারও স্টেডিয়ামগুলো হাসপাতাল বানানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষ আঁচ করতে পারছে করোনার ভয়াবহতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস তো কম-বেশি তাদের জানাই! ১০০ বছর আগের সেই স্মৃতি আবার ফিরে এসেছে যুক্তরাজ্যে।

সর্বশেষ খবর