শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
স্থবির বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন

এ খাঁচা ভাঙবে কেমনে!

সারাবিশ্বে খেলোয়াড়রা এখন ঘরবন্দী। যেন এক খাঁচায় বন্দী সবাই। এমন ঘটনা আগে কখনই ঘটেনি। ক্রীড়াঙ্গনের এই স্থবিরতা কবে কীভাবে কাটবে?

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এ খাঁচা ভাঙবে কেমনে!

মরণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত বিশ্ব। স্থবির জনজীবন। বন্ধ খেলাধুলা। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই এক মাসের উপর (৩৫ দিন) বন্ধ ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, বাস্কেটবল, টেনিসসহ সবধরনের খেলা। ফের কবে মাঠে গড়াবে খেলা তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউ। এমনকি ধারণাও করতে পারছেন না। সবাই একটি ছকে বাঁধা কথা বলছেন। কেউ বলছেন জুন, কারো মতে জুলাই, কেউ আবার আগস্টকে টার্গেট করেছেন। কিন্তু নিশ্চিত নন। কভিড-১৯ প্রাণঘাতী ভাইরাসে যদি খেলা আদৌ হতে না পারে, তাহলে কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে খেলাধুলা, ধারণা করতে পারছেন না কেউ। যদিও করোনাভাইরাসে ভীত না হয়ে বেলারুশ ও তাইওয়ান ফুটবল ফেডারেশন দর্শকশূন্য মাঠে পেশাদার ফুটবল লিগ শুরু করেছে। অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে মাঠে নামার। কিন্তু এসব সাহসীকতা কি প্রাণ ফেরাবে খেলাধুলায়?

সারাবিশ্বে খেলোয়াড়রা এখন ঘরবন্দী। যেন এক খাঁচায় বন্দী সবাই। এমন ঘটনা আগে কখনই ঘটেনি। ক্রীড়াঙ্গনের এই স্থবিরতা কবে কীভাবে কাটবে? 

করোনাভাইরাসে গোটা পৃথিবীতে আক্রান্তের সংখ্যা ২১ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে দিন দিন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাড়ানো হচ্ছে লকডাউন। ২৬ মার্চ লকডাউন শুরুর আগে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেটের একটি রাউন্ড হয়েছিল। পরিস্থিতির বিবেচনায় এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত। পাঁচ রাউন্ডের পর বন্ধ পেশাদার ফুটবল লিগও। স্থগিত বাংলাদেশ গেমস। স্থগিত হয়েছে বাংলাদেশের পাকিস্তান সফরের বাকি অংশ, আয়ারল্যান্ড সফর এবং বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ। ফুটবলে স্থগিত বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ বাছাইপর্ব। এত গেল বাংলাদেশের খেলাগুলো। স্থগিত হয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল, স্প্যানিশ লা লিগা, সিরি-এ, বুন্দেস লিগা, ফ্রেঞ্চ ফুটবল লিগসহ ইউরোপের সব ফুটবল লিগ। এক বছর পিছিয়েছে অলিম্পিক, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো আসর কোপা আমেরিকা কাপ। স্থগিত হয়েছে আইপিএল, সংশয়ের মুখে টি-২০ বিশ্বকাপ। এসব আসর কবে মাঠে গড়াবে কেউ জানে না। লিগগুলোর ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্লাবগুলো। এজন্যই বাধ্য হয়ে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস কর্তৃপক্ষ খেলোয়াড়দের বেতন কাটার সিদ্ধান্তÍ নিয়েছে। লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরাও মেনে নিয়েছেন ক্লাবের সিদ্ধান্ত।

বিশ্বের বড় বড় ক্লাবগুলোর আয় বেশিরভাগই নির্ভরশীল ম্যাচের ওপর। বাকি অর্থ আসে স্পন্সরশিপ থেকে। তাই মাঠে খেলা না থাকলে ক্লাবগুলো আয় বঞ্চিত হয় পুরোপুরি। বিদেশি ক্লাবগুলো যেখানে ম্যাচের ওপর নির্ভরশীল। সেখানে ভিন্ন চেহারা বাংলাদেশে। ক্লাবগুলোর অধিকাংশই নির্ভরশীল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুদানের ওপর। এখন ক্লাব পরিচালনায় বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসায় ভালোমানের খেলোয়াড় আসছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে খেলাধুলায়। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যদি দীর্ঘ হয়, তাহলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই ধাক্কা লাগবে খেলাধুলায়। স্পন্সরশিপ অর্থ কমে যাবে। খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকও কমে যাবে তখন। 

দেশের ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ। ক্রিকেটাররা ঘরবন্দী। খেলা নেই বলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্রিকেটাররা। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অবশ্য মুখ সরিয়ে নেয়নি ক্রিকেটারদের থেকে। চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারদের মাসোহারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রেখে প্রিমিয়ার ক্রিকেটের ৯৬ ক্রিকেটারকে ৩০ হাজার টাকা এবং জাতীয় দলের মহিলা ক্রিকেটারদের ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। যদি লিগ শেষ না হয়, তাহলে ক্লাবগুলো আর্থিক ক্ষতি কীভাবে সামাল দিবে? কিংবা আগামী মৌসুমে কীভাবে দল গোছাবে? কঠিন প্রশ্ন। কিন্তু বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে সবাইকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর