রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বাতিল হচ্ছে ফুটবল লিগ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাতিল হচ্ছে ফুটবল লিগ

গতকাল লিগের ভাগ্য নির্ধারণে ১৩টি ক্লাব প্রতিনিধির সঙ্গে বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী এমপি ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। সেখানেই অধিকাংশ ক্লাবই জানিয়ে দিয়েছে এমন সংকটে কোনো অবস্থায় স্থগিত লিগ শুরু করা সম্ভব নয়

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এটা নিশ্চিত বলা যায় চলতি মৌসুমে পেশাদার ফুটবল লিগ মাঠে গড়াচ্ছে না। গতকাল লিগের ভাগ্য নির্ধারণে ১৩টি ক্লাব প্রতিনিধির সঙ্গে বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম মুর্শেদী এমপি ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। সেখানেই অধিকাংশ ক্লাবই জানিয়ে দিয়েছে এমন সংকটে কোনো অবস্থায় স্থগিত লিগ শুরু করা সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তারা। তাই দেরি না করে দ্রুত লিগ বাতিল ঘোষণা হোক। জানা গেছে ১২ ক্লাবই লিগ বাতিলের পক্ষে। তারা চায় এক দলবদল বহাল রেখে আগামীতে নতুন লিগে খেলতে।

লিগ কমিটি চাচ্ছিল অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে। ৩০ বা ৪৫ দিন হাতে সময় নিয়ে দেখতে চেয়েছিল স্থগিত লিগ শুরু করা যায় কিনা। কিন্তু ক্লাবগুলোর এক কথা করোনাভাইরাস কবে মুক্ত হবে তা কেউ জানে না। তারপর আবার অর্থনৈতিক বিষয় জড়িয়ে আছে। এখন অপেক্ষা মানেই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ক্লাবগুলো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। বাফুফে তো আর কোনো সহযোগিতা করবে না। ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ মানিও বুঝিয়ে দিচ্ছে না তারা। সালাম চাচ্ছিলেন অপেক্ষা করতে। কিন্তু তিনি বাস্তবতা কি ভেবে দেখেছেন? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে বলছে সামনে করোনাভাইরাস আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে। এ অবস্থায় লিগ সামনে শুরু করা যাবে তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? তাছাড়া পেশাদার লিগে প্রথম পর্বে কেউ ছয় বা পাঁচ ম্যাচ খেলেছে। তারপর আবার পুরো দ্বিতীয় রাউন্ড পড়ে আছে। একেক দলের ১৮টি করে ম্যাচ বাকি আছে। সেক্ষেত্রে লিগ যদি শুরু হয়ও শেষ করতে অক্টোবর-নভেম্বর লেগে যাবে। তাই এত দিনে ক্লাবগুলোকে কতটা লোকসান গুনতে হবে লিগ কমিটি কি ভেবে দেখেছে?

চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা আমি তুলে ধরেছি। করোনাভাইরাসে যে অবস্থা তাতে করে কোনো অবস্থায় খেলা সম্ভব নয়। ৩/৪ মাস অপেক্ষা করব, এরপরও কি নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে করোনাভাইরাস মুক্ত থাকবে দেশ। এমনিতেই আমরা লোকসানে হাবুডুবু খাচ্ছি। ৩/৪ মাস অপেক্ষা করলে ক্লাবগুলোর কি অবস্থা হবে ফেডারেশন কি ভেবে দেখেছে? আমি তাই সবকিছু চিন্তা করেই চলতি মৌসুমে লিগ বাতিল করার প্রস্তাব দিয়েছি। এক দলবদল না নতুন করে সেই চিন্তা পরে করা যাবে।’

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেন, ‘একটা লিগ হারিয়ে যাক তা আমি কোনো ভাবেই চাই না। কিন্তু বাস্তবতা তো চিন্তা করতে হবে। করোনাভাইরাসে বিশ্বই এলোমেল। সেখানে লিগ হয় কীভাবে? কবে হতে পারে এ নিয়ে অপেক্ষা করলে লোকসান শুধুই গুণতে হবে। অবাক লাগছে লিগ খেলব না এ কথা ক্লাবগুলোকে বলতে হবে কেন? লিগ কমিটিরই উচিত ছিল ভিডিও কনফারেন্সে চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দেওয়া চলতি মৌসুমের লিগ হবে না। এ জন্য বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভা কেন হবে তা বুঝছি না।’

শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের পরিচালক (ক্রীড়া) সালেহ জামান সেলিম বলেন, ‘দেশের এ ভয়াবহ অবস্থায় আমরা লিগ খেলব না আগেই আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল। ভিডিও কনফারেন্সে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিলাম। ১২টি দলই লিগ খেলবে না। সুতরাং

শতভাগ ধরে নিতে পারেন চলতি মৌসুমে লিগ হচ্ছে না। আমাদের তো যা লোকসান হয়েই গেছে। বাফুফের উচিত হবে এ দুঃসময়ে আমাদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া।’

ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের পক্ষে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন মঞ্জুর আলম মঞ্জু। তিনি লিগ বাতিলের ব্যাপারে বলেন, ‘আমিও একমত পোষণ করেছি। তবে স্থানীয় ফুটবলারদের কথাও ভাবতে হবে। কারণ যে অর্থ তারা পেয়েছে নতুন লিগেও খেলতে হবে। এক্ষেত্রে মানবতার কথা চিন্তা করে বাফুফের তাদের সহযোগিতা করা উচিত।’

ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীর পক্ষে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল না। তবে কিছুদিন আগে কাজী নাবিল আহমেদ এমপি মিডিয়ায় প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন বিদেশি বাদ দিয়ে লিগের বাকি খেলা হোক। কনফারেন্সে সালাম তা তুললে সব ক্লাব নাকচ করে দেয়। চট্টগ্রাম আবাহনী, সাইফ স্পোর্টিং, পুলিশ, ব্রাদার্স, উত্তর বারিধারা, রহমতগঞ্জ, আরামবাগ সব ক্লাবই লিগ বাতিলের পক্ষে। সবাই চায় এবারের লিগ বাতিল হোক। তারপরও সালাম চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আগেই বলেছিলাম আলোচনায় প্রাধান্য পাবে ক্লাবগুলো কি চায়। আমি সবার কথা শুনেছি। তবে লিগ বন্ধের ঘোষণা আমি দিতে পারি না। ক্লাবের প্রস্তাবনা নিয়ে বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভা হবে। তা পাস হলে এএফসি ও ফিফায় পাঠানো হবে। তারা কি উত্তর দেয় সেটার ওপরই নির্ভর করছে সব কিছু।’ সালাম তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে ১২টি ক্লাবই এখন লিগ চাচ্ছে না সেই সিদ্ধান্ত তো লিগ কমিটির হওয়া উচিত। এখানে বাফুফে নির্বাহী কমিটির সভার প্রয়োজন কি? এ সভা কবে হবে ঠিক নেই। এতদিন ক্লাবগুলো কি বসিয়ে বসিয়ে বিদেশিদের বেতন দিয়ে যাবে। সালামই বলেন, ‘ক্লাব নিয়েই লিগ কমিটি। তাহলে আবার অপেক্ষা কেন?’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর