মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

কেমন আছেন গলফাররা

কেউ কেউ ঘর ভাড়াও দিতে পারছেন না

মেজবাহ্-উল-হক

কেমন আছেন গলফাররা

‘ঘর ভাড়া দিতে পারছি না। বাড়িওয়ালা চাপ দিচ্ছেন। তাকে অনুরোধ করেছি ক্লাব খুললেই টাকা দেব। কিন্তু এখন তো কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। সামনে কীভাবে চলব?’ ‘সত্যি কথা বলতে চক্ষুলজ্জার জন্য কারও কাছে হাত পাততে পারি না। তাই খুব কষ্ট আর হতাশায় দিন কাটছে।’ -গলফার আবদুর রহমান

গলফ বড়লোকের খেলা, গলফ উচ্চবিত্তের খেলা-এমন ধারণা অনেকেরই! কিন্তু অভিজাত শ্রেণি শখের বশে যা খেলে তা শৌখিন গলফ। বাংলাদেশে যারা পেশাদার গলফ খেলেন তার শতকরা প্রায় ৯০ ভাগই নিম্নমধ্যবিত্ত বানিম্নবিত্ত। খেলা হলে তাদের আয় হয়, খেলা নেই আয়ও নেই।

করোনা মহামারীর সময় খেলা বন্ধ থাকায় হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া পেশাদার গলফার প্রায় সবাই মানবেতর-জীবন যাপন করছেন।

ক্লাব খোলা থাকলে পেশাদার গলফারদের অনেকেই ‘খেলা শিখিয়ে’ও আয় করতেন। তাদের এ রোজগার দিনভিত্তিক। এখন ক্লাব বন্ধ থাকায় তাদের সে আয়ও বন্ধ।

চক্ষুলজ্জার কারণে পেশাদার গলফাররা কারও কাছে হাতও পাততে পারছেন না। আবার সংসার চালাতেও হিমশিম খাচ্ছেন। করোনা মহামারীর সময় তারা বাসায় নিভৃতে কাঁদছেন। তাদের এ কষ্ট দেখার কেউ নেই।

নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে পেশাদার গলফার আবদুর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘর ভাড়া দিতে পারছি না। বাড়িওয়ালা চাপ দিচ্ছেন। তাকে অনুরোধ করেছি ক্লাব খুললেই টাকা দেব। কিন্তু এখন তো কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। সামনে কীভাবে চলব?’

তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে চক্ষুলজ্জার জন্য কারও কাছে হাত পাততে পারি না। তাই খুব কষ্ট আর হতাশায় দিন কাটছে।’

বাংলাদেশে এখন পেশাদার গলফারের সংখ্যা ১২৫! সিদ্দিকুর রহমান আন্তর্জাতিক অনেক টুর্নামেন্ট খেলে বেশ আয় করেন। বাকিদের আয় স্পন্সরশিপ, টুর্নামেন্ট ও কোচিং থেকে। যে কজন পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন তাদের কথা বাদ দিলে বাকি সবাই এখন হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।

গলফার মো. জাকিরুজ্জামান বলেন, ‘জানি, করোনার সময় সবাই খুব কষ্টে আছেন। তবে গলফারদের কষ্টটা সীমাহীন। কারণ গলফ ব্যক্তিগত খেলা। খেলা হলে আমরা টাকা পাই, না হলে নাই। সবার তো স্পন্সরও নেই। খেলাই আমাদের আয়ের একমাত্র পথ। খেলা নেই আমাদের আয়ও বন্ধ। কিন্তু খরচ তো আর বন্ধ নেই! তাই দুশ্চিন্তা ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না। ভবিষ্যৎ নিয়ে একদম ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। এক একটা দিন কাটছে খুবই হতাশায়।’

তারকা গলফার সাখাওয়াত হোসেন সোহেল বলেন, ‘হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া সবারই কষ্ট হচ্ছে। আমি যেমন প্রতিদিন ছাদে যাই কিছুটা সময় অনুশীলন করি। অন্য অনেকের হয়তো এ সুবিধাটাও নেই। গলফারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আর্থিক। সবাই তো টুর্নামেন্টের ওপর নির্ভরশীল। সেখানে করোনা মহামারী সব বন্ধ করে দিয়েছে। আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে।’

আরেক তারকা গলফার জামাল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘সবাই মনে করে গলফ বড়লোকের খেলা। তাই যারা গলফ খেলেন সবাই বড়লোক। কিন্তু পেশাদার গলফাররা যে কতটা কষ্টে আছেন তা কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। খেলা না চললে আমাদের কোনো ইনকাম নেই। বলতে গেলে এখন প্রায় সবাই মানবেতর-জীবন যাপন করছেন। তারা নিজেদের অসহায়ত্বের কথা কাউকে বলতেও পারছেন না!’

করোনাকাল যত দীর্ঘ হবে ততই বাড়বে ভোগান্তি। পেশাদার গলফাররা কোথাও থেকে আশার কথাও শুনতে পাচ্ছেন না। দুবারের এশিয়ান ট্যুরজয়ী দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন এভাবে চলতে থাকলে হয়তো আমাদের গলফারদের অনেকে হারিয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশের পেশাদার গলফারদের বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশের পেশাদার গলফকে টিকিয়ে রাখতে হলে এই কঠিন সময়ে গলফারদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে তাদের পক্ষে গলফ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। কেননা, এখন তারা ধারদেনা করে চলছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের সবার আগে দৃষ্টি থাকবে দেনা পরিশোধের দিকে। তখন তারা স্বভাবতই খেলার দিকে মনোনিবেশ করতে পারবেন না। তাই পেশাদার গলফ বাঁচাতে হলে এই গলফারদের জন্য কিছু করা উচিত।’

যদিও এই কঠিন সময়ে পেশাদার গলফারদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রফেশনাল গলর্ফাস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএ)। প্রতিষ্ঠানটি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী বেছে বেছে ৮৩ জন পেশাদার গলফারকে ৭-৮ হাজার করে টাকা দিয়েছে। তবে এটা যে একজন গলফারের জন্য খুবই সামান্য তা স্বীকার করেছেন বিপিজিএ প্রেসিডেন্ট কর্নেল খন্দকার আবদুল ওয়াহেদ (অব.) নিজেই। তাই এই কঠিন সময়ে তিনি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। ওয়াহেদ বলেন, ‘আমরা বিপিজিএ থেকে কিছু সহযোগিতা করেছি। জানি তা দিয়ে তেমন কিছুই হয় না। তাই গলফকে বাঁচাতে হলে এই গলফারদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। দরকার তাদের জন্য ফান্ড গঠন করা। এ বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিতে চাই। তবে এগিয়ে আসতে হবে বিত্তবানদের।’

দীর্ঘদিন গলফের সঙ্গে জড়িত ও বিপিজিএ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর মাহমুদুর রহমান চৌধুরী (অব.) বলেন, ‘অন্য ক্রীড়া ইভেন্টের খেলোয়াড়রা হয়তো কোথাও না কোথাও থেকে প্রণোদনা পাচ্ছেন। কিন্তু গলফাররা কী পাচ্ছেন? আশা করছি আমাদের পেশাদার গলফারদের বিষয়টি সরকার ও বিত্তবানরা ভেবে দেখবেন।’

পেশাদার গলফকে টিকিয়ে রাখতে হলে এই কঠিন সময়ে গলফারদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে তাদের পক্ষে গলফ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। গলফ বাঁচাতে হলে এই গলফারদের জন্য কিছু করা উচিত।

-সিদ্দিকুর রহমান

হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া সবারই কষ্ট হচ্ছে। গলফারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আর্থিক। সবাই তো টুর্নামেন্টের ওপর নির্ভরশীল। সেখানে করোনা মহামারী সব বন্ধ করে দিয়েছে। আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে।

-সাখাওয়াত হোসেন সোহেল

সবাই মনে করে গলফ বড়লোকের খেলা। তাই যারা গলফ খেলেন সবাই বড়লোক। কিন্তু পেশাদার গলফাররা যে কতটা কষ্টে আছেন তা কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। প্রায় সবাই মানবেতর-জীবন যাপন করছেন।

-জামাল হোসেন মোল্লা

গলফারদের কষ্টটা সীমাহীন। খেলাই আমাদের আয়ের একমাত্র পথ। খেলা নেই আমাদের আয়ও বন্ধ। কিন্তু খরচ তো আর বন্ধ নেই! দুশ্চিন্তা ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না। এক একটা দিন কাটছে খুবই হতাশায়।

-মো. জাকিরুজ্জামান

 

‘আমরা বিপিজিএ থেকে কিছু সহযোগিতা করেছি। জানি তা দিয়ে তেমন কিছুই হয় না। তাই গলফকে বাঁচাতে হলে এই গলফারদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। দরকার তাদের জন্য ফান্ড গঠন করা। এ বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিতে চাই। তবে এগিয়ে আসতে হবে বিত্তবানদের।’

কর্নেল খন্দকার আবদুল ওয়াহেদ (অব.)

প্রেসিডেন্ট, বিপিজিএ 

 

 

‘অন্য ক্রীড়া ইভেন্টের খেলোয়াড়রা হয়তো কোথাও না কোথাও থেকে প্রণোদনা পাচ্ছেন। কিন্তু গলফাররা কী পাচ্ছেন? আশা করছি আমাদের পেশাদার গলফারদের বিষয়টি সরকার ও বিত্তবানরা ভেবে দেখবেন।’

মেজর মাহমুদুর রহমান চৌধুরী (অব.)

কার্যনির্বাহী সদস্য, বিপিজিএ

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর