বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

তরুণদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

ঘরে থাকতে হবে, বাইরে যোগাযোগ রাখতে হবে

মেজবাহ্-উল-হক

তরুণদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাদের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটার কিংবা যারা প্রথম শ্রেণিতে খেলেন এমন খেলোয়াড়দের পরামর্শ দিয়েছেন এই করোনাকালে ঘরবন্দী থাকা অবস্থায় কী করতে হবে আর কী করা যাবে না সে বিষয়ে!

কিন্তু যারা জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ তারকা, এখন বয়সভিত্তিক দলে খেলেন কিংবা সামনে বয়সভিত্তিক দলে খেলবেন সেই তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটাররা এই মহামারীর সময় কীভাবে কাটাচ্ছেন তার খোঁজও কেউ রাখছেন না! এ সময়টা সেই উদীয়মান ক্রিকেটারদের জন্যই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন ‘ক্রিকেট ক্ষুরধার মস্তিষ্ক’ বলে পরিচিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গেম ডেভেলপমেন্টের সাবেক ম্যানেজার, বর্তমানে বিকেএসপিতে (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) কর্মরত নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

স্কুলপড়ুয়া তরুণরা পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো স্থানীয় কোচদের অধীনে ক্রিকেট শিখত। কেউবা ক্রিকেট খেলে পাড়া-মহল্লা মাতিয়ে বেড়াত। হয়তো চলতি মৌসুমেই তাদের কেউ কেউ বয়সভিত্তিক দলে সুযোগও পেয়ে যেত। সেসব তরুণ এই কঠিন সময়ে ঘরবন্দী হয়ে আছে। তারাই সবচেয়ে বেশি হতাশায় দিন কাটাচ্ছে। ফাহিম বলেন, ‘উঠতি ক্রিকেটার যারা এখনো শেখার পর্যায়ে আছে, যারা সিরিয়াস ক্রিকেট নিয়ে ভাবছে তাদের জন্য এই সময়টা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং।’

ক্রিকেট, ফুটবল, হকি কিংবা অন্য যে কোনো ক্রীড়া ইভেন্টের খেলোয়াড়দের জন্যই এ সময়টা কঠিন। এমন সময় ফিটনেস ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। মানসিকভাবে সুস্থ থাকাও একটা পরীক্ষা। আগে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন না হলেও পেশাদার খেলোয়াড়রা তাদের অভিজ্ঞতার কারণেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৌশল আয়ত্ত করতে পারবেন। তা ছাড়া পেশাদার কোচ, ট্রেইনারদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ তো আছেই। সহজেই নিজেদের করণীয় সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন কিংবা কোচরাই তাদের করণীয় সম্পর্কে অবহিত করছেন।

কিন্তু এই সময়ে তরুণরা কী করবেন? উদীয়মান ক্রিকেটারদের জন্য নাজমুল আবেদীন ফাহিমের উপদেশ, ‘যারা এখনো শেখার পর্যায়ে আছে তাদের প্রথম কাজ হচ্ছে একটা রুটিন করে ফেলা। প্রথম দফায় অন্তত সেটা দু-তিন মাসের জন্য হলে ভালো হয়। পড়াশোনা কিংবা অন্য সব কাজের ফাঁকে দিনে অন্তত এক-দুই ঘণ্টা শুধু ক্রিকেটের জন্য বেছে নিতেই হবে। সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন সেই রুটিন মেনে চলতে হবে। প্রথমে ফিটনেসের কথাই চিন্তা করতে হবে এই সময়ে। যদিও তাদের একেকজনের সুযোগ-সুবিধা একেক রকমের। কারও বাসায় ছোট ভাই কিংবা অন্য কেউ থাকলে তাকে নিয়েই অনুশীলন করতে পারে।’

একজন ক্রিকেটারকে অনুশীলনের পাশাপাশি ক্রিকেটীয় অনেক জ্ঞানও অর্জন করতে হয়। কিন্তু ক্রিকেটাররা কেবল প্র্যাকটিস নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে ক্রিকেটীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য আলাদা সময় বের করতে পারেন না। করোনাকালকে ক্রিকেটীয় জ্ঞান অর্জনের উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন ফাহিম, ‘ক্রিকেটীয় জ্ঞান অর্জনের এটাই সেরা সময়। যারা যে কোচের সঙ্গে কাজ করে তাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতে হবে। এই সময়ে থাকতে হবে ঘরে কিন্তু বাইরের সঙ্গে যোগাযোগটা রাখতে হবে।’

করোনাকালে সিনিয়র ক্রিকেটারদের জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। নাজমুল আবেদীন বলেন, ‘ক্ষতি তো সবার হচ্ছেই, আমি মনে করি এর একটা ইতিবাচক দিকও আছে। পুরো বছর ব্যস্ত সূচির কারণে তারা নিজেকে নিয়ে আলাদা করে ভাবার জন্য খুব একটা সময় পান না। এখন এই সময়ে তারা নিজের সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারেন। কোথায় কোথায় তার ভুলভ্রান্তি হচ্ছিল সেই জায়গাগুলোর দিকে বেশি নজর দিতে পারেন। নিজেকে রিভিউ করার উপযুক্ত সময়।’

নাজমুল আবেদীন ফাহিম

যারা জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ তারকা, এখন বয়সভিত্তিক দলে খেলেন কিংবা সামনে বয়সভিত্তিক দলে খেলবেন সেই তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটাররা এই মহামারীর সময় কীভাবে কাটাচ্ছেন তার খোঁজও কেউ রাখছেন না! এ সময়টা সেই উদীয়মান ক্রিকেটারদের জন্যই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

 

পরামর্শ

তরুণদের প্রতি...

সারা জীবন তো আর এমন পরিস্থিতি থাকবে না। তাই হতাশ না হয়ে যতটা সম্ভব নিজেকে তৈরি কর। সামনের লড়াইয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। মনে এমন বিশ্বাস রাখতে হবে যে, সামনে যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং নতুন করে খেলা শুরু হবে তখন যেন সামান্য সুযোগ নষ্ট না হয়। ঘরে থাকার সময়টায় হতাশ না হয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতে হবে। এ সময় আমার উপদেশ থাকবে- ঘরে থেকে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত কোচ বা বড় ভাইদের কাছ থেকে উপদেশ নিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

 

সিনিয়রদের প্রতি...

সিনিয়র ক্রিকেটাররা জানেন, তাদের এমন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। ক্ষতি তো সবার হচ্ছেই, আমি মনে করি এর একটা ইতিবাচক দিকও আছে। এটা নিজেকে রিভিউ করার উপযুক্ত সময়। পুরো বছর ব্যস্ত সূচির কারণে তারা নিজেকে নিয়ে আলাদা করে ভাবার খুব একটা সময় পান না। এখন এই সময়ে তারা নিজের সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারেন। কোথায় কোথায় তার ভুলভ্রান্তি হচ্ছিল সে জায়গাগুলোর দিকে বেশি নজর দিতে পারেন। পাশাপাশি ক্রিকেটীয় জ্ঞান অর্জনের সেরা সময় এটা। এ ছাড়া ফিটনেস নিয়ে যার যার ভাবনা তো আছেই।

সর্বশেষ খবর