রবিবার, ৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

হকি খেলোয়াড়দের চাপা কান্না

ক্রীড়া প্রতিবেদক

হকি খেলোয়াড়দের চাপা কান্না

দুই বছর ধরে প্রিমিয়ার হকি লিগের দেখা মিলছে না। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম এখন করোনাভাইরাসে ফাঁকা। তাই লিগ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে -রোহেত রাজীব

করোনাভাইরাসে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন স্থবির হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের চিত্রও ভিন্ন নয়। প্রিমিয়ার ক্রিকেট ও পেশাদার ফুটবল লিগ স্থগিত। তবে দুই আসরই মাঠে নামানোর ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। কিছুদিন আগে বাফুফে ক্লাব প্রতিনিধির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সও করেছে। এখানে যে যার বক্তব্য তুলে ধরেছে। সব চেয়ে বড় কথা ক্রিকেটার ও ফুটবলারা মৌসুমের পারিশ্রমিকের অধিকাংশ টাকা বুঝে পেয়েছেন। এখন লিগ না হলে সেটাও সমঝোতার মাধ্যমে ফয়সালা হবে। বিসিবি তো চুক্তির বাইরে থাকা ৯০ জন ক্রিকেটারকে আর্থিক সহযোগিতাও করছে। অর্থাৎ দুর্দিনেও একেবারে হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই ক্রিকেট ও ফুটবল।

দেশের আরেক বড় খেলা হকিতে দীর্ঘদিন ধরেই হাহাকার চলছে। এখন না হয় করোনাভাইরাসে সব কর্মকান্ড বন্ধ। হকির সচল চাকা তো প্রায় দেড় বছর ধরে অচল হয়ে আছে। প্রিমিয়ার লিগে দুই মৌসুমে দেখা নেই। প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগও বন্ধ। হিসাব করে দেখা যায় প্রায় ৩০০ খেলোয়াড় বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। কিছু বলবে তার উপায় নেই। কারণ শাস্তি পাওয়ার ভয় আছে। তাদের চাপা কান্না কেউ শুনেনও না। জাতীয় দলের সাবেক এক তারকা খেলোয়াড় বলেন, দেখেন সার্ভিসেস দলে চাকরি করি। তাই অনেক বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়। আমরা না হয় চাকরি করছি। যাদের আয় শুধু লিগ ঘিরে তাদের কথা একবার ভাবুন। হকিতে কর্মকর্তাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে তাতে দুই বছর ধরে লিগ হবে না কেন? মানবতা কোথায় গেছে একবার ভেবে দেখুন। ক্রিকেট ও ফুটবল কেন হ্যান্ডবল আর অন্য খেলা তো নিয়মিত হচ্ছে। এখন না হয় করোনাভাইরাস, হকির সংকটাপণ্ন অবস্থা তো আগে থেকেই। অবাক লাগে এ নিয়ে ক্রীড়া প্রশাসনও নীরব ভ‚মিকা পালন করছে।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মুসা মিঞা বলেন, হকিতে ফ্লাডলাইট ও আধুনিক সবকিছুই চালু হয়েছে। ভেবেছিলাম ব্যস্ততার মধ্যেই কাটবে হকি। কিন্তু নির্বাচনের পর পরই দেখছি সব খাঁ খাঁ করছে। নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের হদিস নেই। কিন্তু তাই বলে হকি থেমে থাকবে কেন? দুই বছর ধরে প্রিমিয়ার, প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগের খেলা নেই। কতটা কষ্টে আছেন খেলোয়াড়রা তা কেউ ভাবেন না। এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় থেকেও খেলোয়াড়রা কেউ টু-শব্দটা করতে পারছেন না। কেননা শাস্তির ভয় আছে। সুতরাং চাপা কান্না ছাড়া কিছুই করার নেই তাদের।

এখন না হয় করোনাভাইরাসে সব কর্মকান্ড বন্ধ। হকির সচল চাকা তো প্রায় দেড় বছর ধরে অচল হয়ে আছে। প্রিমিয়ার লিগে দুই মৌসুমে দেখা নেই। প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগও বন্ধ। হিসাব করে দেখা যায় প্রায় ৩০০ খেলোয়াড় বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। কিছু বলবে তার উপায় নেই। কারণ শাস্তি পাওয়ার ভয় আছে

হকি ফেডারেশনে সবচেয়ে বেশিদিন ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন শামসুল বারী। সেই বর্ষীয়ান সংগঠকের মুখে প্রতিবাদের ঝড়- ‘নিজে খেলেছি, তাই খেলোয়াড়দের কষ্টটা বুঝি। দুই বছর লিগ না হওয়ার কোনো যুক্তিতো দেখছি না। এক সময় হকি লিগে কোনো সেশন জট ছিল না। এখন তো দেখছি হকিরই যাই যাই অবস্থা। দুই বছর কোনো লিগই হচ্ছে না। খেলোয়াড়রা কতটা কষ্ট আছেন এ খবর কেউ রাখেন না। ভেবেছিলাম নতুন কমিটি এ খেলাকে আরও জাগিয়ে তুলবে। এখন তো আমার ধারণা ভুল। আসলেও হকি চালাতে সৎ ও যোগ্য লোক লাগে। এ টেকনিক্যাল খেলা চালানো এত সহজ নয়। তা ছাড়া বার বার একজনকে নিয়েই বিতর্ক হচ্ছে। হকির তো একটা গঠনতন্ত্র আছে তা কেন মানা হচ্ছে না। জনপ্রিয় হকি কি আর আলোর মুখ দেখবে না।’

সাবেক সুপার স্টার জামাল হায়দার বলেন, ‘দুই বছর লিগ না হওয়াটা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যর্থতা। এখানে এককভাবে কেউ দায়ী নন। এ দায়ভার পুরো ফেডারেশনের। যাক এমন অবস্থায় লিগ নিয়ে কথা বলাটাই বৃথা। তবে এ দুর্দিনে খেলোয়াড়, অ্যাম্পায়ার বা মাঠ কর্মীদের আর্থিক সহযোগিতা করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।’

নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মুমিনুল হক সাঈদ। দীর্ঘদিন ধরে ফেডারেশনের কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি যে কোথায় আছেন কেউ জানেন না। তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘দুই বছর ধরে লিগ না হওয়াটা অবশ্যই আমাদের ব্যর্থতা। খেলোয়াড়রা কষ্টের মধ্যে আছেন। তবে আমাকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দেওয়ার পর লিগ শুরুর প্রক্রিয়া শুরু করি। এ জন্য লিগ কমিটিও গঠন হয়েছে। দলবদল ও লিগের তারিখ নির্ধারণে ক্লাবগুলোর জন্য চিঠিও তৈরি হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসে তা সম্ভব হয়নি। এই ভয়াবহতা কেটে গেলে ফেডারেশনের প্রথম এজেন্ডা থাকবে লিগ। তবে তালিকা তৈরি করে আমরা বেশ কজন খেলোয়াড়, অ্যাম্পায়ার ও কর্মকর্তাকে আর্থিক সহযোগিতা করব। সুতরাং হকির চাকা যে অচল হয়ে গেছে তা বলাটা ঠিক হবে না।’

সর্বশেষ খবর