শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

লোকসানের পাহাড়ে ক্লাবগুলো

ক্রীড়া প্রতিবেদক

লোকসানের পাহাড়ে ক্লাবগুলো

বাংলাদেশের ফুটবলে না আছে মান না জনপ্রিয়তা। যতটুকু প্রাণ আছে তা ক্লাবগুলোর কল্যাণে। তারা এ খেলাকে ধ্বংসের মুখ থেকে বাঁচাতে প্রতি মৌসুমে ঘরোয়া আসরে কোটি কোটি ব্যয় করে দল গঠন করছে। সত্যি বলতে কি খেলোয়াড়দের আয়ের চাকা সচল রেখেছে এ ক্লাবগুলোই। অথচ ফেডারেশনের কাছে তাদের গুরুত্ব নেই। তাদের ভালো-মন্দের ব্যাপারে কেউ নজরও দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। তবু ফুটবলের স্বার্থের কথা চিন্তা করে পিছু হটছে ক্লাবগুলো। নির্বাচনের সময় ফুটবল ও খেলোয়াড়দের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্রীড়াঙ্গন গরম করে ফেলেন প্রার্থীরা। বিজয়ী হওয়ার পর বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। যা হয় বা হচ্ছে তা শুধু ক্লাবগুলোরই মাধ্যমে।

সেই ক্লাবগুলোর এখন বড্ড দুর্দিন চলছে। এ সময় আর্থিক সহযোগিতা করা তো দূরের কথা। ক্লাবগুলোর বকেয়াও শোধ করছে না বাফুফে। তবে এবার নড়েচড়ে বসেছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। এ ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মহিউদ্দিন আহমেদ মহি বলেছেন, অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন ক্লাবের নির্বাহী কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বকেয়ার জন্য বাফুফেকে উকিল নোটিস পাঠানো।

৩ মাসে ১৩ ক্লাবের ক্ষতির পরিমাণ অবশ্যই ৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। করোনাভাইরাসে কারও হাত নেই। কিন্তু ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রতিটি ক্লাবই লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে

করোনাভাইরাসে মার্চ থেকেই পেশাদার লিগ বন্ধ। কবে হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় কম বেশি মিলিয়ে পেশাদার লিগের ১৩ ক্লাবের লোকসানের সম্মুখীন। অঙ্কের পরিমাণ ৬০ কোটিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের পরিচালক (ক্রীড়া) সালেহ জামান সেলিম বলেন, ‘লিগ বন্ধের পর আমরা প্রায় তিন মাস বসিয়ে বসিয়ে বিদেশি ও স্থানীয় ফুটবলারদের বেতন দিয়েছি।’ আমার ক্লাবেরই শুধু বিদেশিদেরই বেতন প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। কারো আবার বেশি বা কম হতে পারে। এরপর আবার কোচিং স্টাফ ও অন্য কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়। একটা ক্লাবের আবাসিক ক্যাম্প শুরু হয় মূলত লিগ কেন্দ্র করেই। অনেক ক্লাবই গত অক্টোবর মাস থেকে ক্যাম্প চালু করে। খাওয়া-দাওয়া আবার অনুশীলন মিলিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। কি পরিমাণ খরচ হয় তা বাফুফে কর্মকর্তাদের অজানা নয়। তারাও তো কোনো না ক্লাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।’

সেলিম জানান, ‘লিগ বন্ধ আছে। কিন্তু ক্লাবকে খেলোয়াড় ও কোচের টাকা ঠিকই দিতে হচ্ছে। ৩ মাসে ১৩ ক্লাবের ক্ষতির পরিমাণ অবশ্যই ৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। করোনাভাইরাসে কারও হাত নেই। কিন্তু ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রতিটি ক্লাবই লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। পেশাদার লিগে আবার এমন ক্লাবও আছে যাদের প্রতিদিনের খরচ শুনলে অনেকে অবাক হয়ে যাবেন। করোনার কারণে আমরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত। এরপরও বকেয়া অর্থ দেওয়া ব্যাপারে বাফুফের কোনো টু শব্দ নেই। তারা কি ভেবেছেন এ বকেয়া তাদের না দিলেও চলবে। এত সহজ নয়, কেননা কোনো কোনো ক্লাব এ নিয়ে বাফুফের বিরুদ্ধে মামলা করার চিন্তা-ভাবনা করছে। কেউ পেশাদার লিগে শর্ত উপেক্ষা করার কারণে ফিফার কাছে চিঠি পাঠাতে প্রস্তুত। ক্লাবগুলো লোকসানে হাবুডুবু খাচ্ছে। আর বাফুফে সব দেখেও নীরব থাকছে এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে।’

বাফুফে যে বসে আছে তাও বলা যাবে না। পেশাদার লিগ নিয়েই সোমবার বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভা হওয়ার কথা। সেখানে প্রাধান্য পাবে ক্লাবগুলোর লোকসানের বিষয়টি। তবে এর পেছনে নাকি মানবতার চেয়ে আজব এক সিদ্ধান্ত হতে পারে। বিশেষ একটি ক্লাব চাচ্ছে বিদেশি ফুটবলার ছাড়া স্থগিত লিগ খেলতে। ভিডিও কনফারেন্সে ১২টি ক্লাবই এমন দুর্দিনে লিগ বাতিলের মত দিয়েছে। এখন তাদের মতামত উপেক্ষা করে বাফুফে সেই বিশেষ ক্লাবেরই এজেন্ডা বাস্তবায়িত করতে চাচ্ছে। তবে সবাই নয় ৪/৫ জন মিলে। এখানে আবার সামনের নির্বাচনীও ইস্যু রয়েছে।

নির্বাহী কমিটি সভায় সিদ্ধান্ত হতে পারে ক্লাবগুলোর লোকসানের বড় কারণ হচ্ছে বসিয়ে বসিয়ে বিদেশি ফুটবলারদের বেতন দেওয়া। তাই প্রস্তাব আসবে বিদেশিদের বিদায় জানিয়ে শুধু স্থানীয়দের নিয়ে লিগের বাকি অংশ শেষ করা। কথা হচ্ছে নির্বাহী কমিটিতে কারো মাধ্যমে এ প্রস্তাব উত্থাপিত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে গেলে বাফুফেই বিপদে পড়ে যাবে। কারণ বিদেশিদের বাদ দেওয়া মানেই এবার লিগের বাইলজ ভঙ্গ করা। নিশ্চয় কোনো না কোনো ক্লাব ফিফার কাছে অভিযোগ জানাবে।

সর্বশেষ খবর