শনিবার, ৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

খেলার আড়ালে খেলা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

খেলার আড়ালে খেলা

পেশাদার লিগ ঠিকই মাঠে গড়িয়েছিল। ১৩টি দলের মধ্যে কেউ পাঁচ বা ছয় ম্যাচ খেলেছেও। এবার শুরু থেকেই প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ লিগ দেখা যাচ্ছিল। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছিল না। হারের খাতায় নাম লিখিয়েছে সবাই। এমন উপভোগ্য লিগও স্থগিত হয়েছে মহামারী করোনাভাইরাসে। শুধু বাংলাদেশ নয়, এই ভাইরাসে বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনও অচল হয়ে গেছে। তবে ইউরোপিয়ান লিগ স্থগিত হলেও তা ছিল শেষের দিকে। তাই তারা পুনরায় লিগ মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে। নেদারল্যান্ডস ঝুঁকি নিতে সাহস পায়নি। তারা লিগই বাতিল করে দিয়েছে।

বাংলাদেশে তো মাত্র লিগ মাঠে গড়িয়েছে। এখনো প্রথম পর্বের অর্ধেক এবং দ্বিতীয় পর্বের পুরোটাই বাকি। করোনাভাইরাস দিন দিন যে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে তাতে লিগ পুনরায় শুরু করা যাবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। তারপর আবার অর্থনৈতিক বিষয়টিও জড়িয়ে রয়েছে। খেলা হচ্ছে না অথচ বিদেশি-স্থানীয় ফুটবলারদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে। কোচিং স্টাফরাও এর বাইরে নয়। একে তো অনিশ্চয়তা তারপর আবার লোকসানের পর লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক ক্লাবেরই লিগের জন্য তৈরি করা বাজেট প্রায় শেষ। বাস্তবতা ও ক্লাবগুলোর সামর্থ্যরে কথা তুলে ধরে ১২টি ক্লাবই লিগ বাতিল করার ব্যাপারে মত দিয়েছে। গত ২৫ এপ্রিল বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি ক্লাব প্রতিনিধিদের সঙ্গে যে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন সেখানেই ক্লাব কর্মকর্তারা তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন।

ক্লাবগুলো না খেলার যৌক্তিকতা তুলে ধরলেও বাফুফে এখন এ নিয়ে খেলতে চাচ্ছে আরেক খেলা। বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এত দিন বলে আসছিলেন লিগের জন্য আলাদা কমিটি আছে। এখানে তার কোনো হস্তক্ষেপ প্রয়োজন পড়বে না। অথচ তিনিই নাকি লিগ নিয়ে আগামী সোমবার বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভা ডেকেছেন। সেখানে নাকি লিগের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। কথা হচ্ছে, হবেটা কি? বাতিল, না লিগের জন্য আরও অপেক্ষা। জানা গেছে, বাতিলের সম্ভাবনা ক্ষীণ। একটি বিশেষ ক্লাবের স্বার্থ উদ্ধার করতে নাকি এ বৈঠকে নতুন একটি ঘোষণা আসতে পারে। আর তা হলো- বিদেশি ফুটবলার বাদ দিয়ে লিগের বাকি অংশ শেষ করা।

যে বিশেষ ক্লাবটির কথা বলা হচ্ছে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবার ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। তার মুখ থেকেই বের হয় প্রয়োজনে বিদেশিদের বাদ দিয়ে লিগ শুরু করা যেতে পারে। এর পেছনে নাকি মূল কারণ হচ্ছে, শুধু স্থানীয়দের নিয়ে লিগ খেললে তার দলের চ্যাম্পিয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্য এক ফেবারিট দল এখন পিছিয়ে থাকলেও তা বিদেশির মাধ্যমে কভার করা সম্ভব। তা ছাড়া দ্বিতীয় পর্বে আরেক বিদেশি যোগ দিলে দলটি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। তার আগমন

নেদারল্যান্ডস ঝুঁকি নিতে সাহস পায়নি। তারা লিগই বাতিল করে দিয়েছে। বাংলাদেশে তো মাত্র লিগ মাঠে গড়িয়েছে। এখনো প্রথম পর্বের অর্ধেক এবং দ্বিতীয় পর্বের পুরোটাই বাকি। করোনাভাইরাস দিন দিন যে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে তাতে লিগ পুনরায় শুরু করা যাবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে

বন্ধ করতেই বাইলজ ভেঙে লিগে বিদেশিদের না করে দেওয়া। বাফুফের নির্বাহী কমিটির ৫/৬ জন মিলে বিশেষ ক্লাবের স্বার্থ উদ্ধার করতে চাচ্ছেন।

তারা এমনভাবে কাজটি করতে চাচ্ছেন, যাতে সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে। বাইলজে হয়তো তারা হাত দেবেন না। বৈঠকে বলা হবে, বিদেশিদের জন্যই ক্লাবগুলো বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন। তাই তাদের বিদায় জানিয়ে স্থানীয়দের দিয়ে লিগ খেলাতে। এখানে আবার এটাও বলা হবে, বিদেশি না থাকলে অনেক স্থানীয় দলে সুযোগ পাবে। এ থেকে নতুন প্রতিভার সন্ধান মিলবে। দেশের ফুটবলেও উন্নয়ন ঘটবে। তবে বিশেষ ক্লাবের কর্মকর্তা চাচ্ছেন আইন করে স্থগিত লিগে বিদেশি বন্ধ করতে। প্রয়োজনে এ জন্য আরেকটি লিগ কমিটির সভাও ডাকা যেতে পারে। অধিকাংশ ক্লাব যেন বিদেশি না খেলানোর ব্যাপারে মত দেয় সেই লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছেন তিনি। কয়েকটি ক্লাবকে নাকি তিনি ইতিমধ্যে হাতও করে ফেলেছেন। শীর্ষস্থানীয় একটি ক্লাবের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাকে ফোন করা হয়েছিল। আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি এই নোংরামির আশ্রয় নিলে আমরা মামলায় যাব।

লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাম বলেন, আসলে লিগের ভাগ্য নির্ধারণ নিয়ে বাফুফে সভা ডেকেছে। যা ক্লাব ও দেশের ক্লাবের জন্য মঙ্গলজনক সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সালাম বলেননি, তবে মঙ্গলকর সিদ্ধান্তটিই হবে বিদেশি ছাড়া বাকি লিগ। কথা হচ্ছে, বাফুফে যতই এক বিশেষ দলের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করুক না কেন তা কি সফল হবে? চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান আগেই বলেছেন, ‘প্রশ্নেই ওঠে না বিদেশি ছাড়া খেলা। এক লিগে দুই বাইলজ হয় কীভাবে।’ পেশাদার লিগের সাবেক এক চ্যাম্পিয়ন দলের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, নোংরামির আশ্রয় নিলে আমরা মামলা করব। ফিফার কাছে বিচার চাইব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর