সোমবার, ১১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রিমিয়ার লিগ চালু হবে কি-না!

প্রিমিয়ার লিগ চালু হবে কি-না!

ভার্চুয়াল মিটিং করে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) ক্রিকেট বোর্ডকে চিঠি দিয়েছে ঈদের পরই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ পুনরায় চালু করার ব্যাপারে। ক্রিকেট বোর্ড আনুষ্ঠানিক কিছু না জানালেও এখনই যে ক্রিকেট মাঠে গড়ানো সম্ভব হচ্ছে না তা পরিষ্কার! ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও জানাচ্ছেন, স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে বোর্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবেচিন্তে। ঈদের পর ক্রিকেট মাঠে গড়ানো সম্ভব না হলেও ক্রিকেটারদের আর্থিক বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। এ নিয়ে গতকাল সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, বোর্ড পরিচালক জালাল ইউনুস, বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিম, কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল এবং লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিসের সঙ্গে কথা বলেছেন- মেজবাহ-উল-হক

 

এখন কোনোরকম ঝুঁকি নেওয়া যাবে না

রকিবুল হাসান

সাবেক অধিনায়ক, জাতীয় ক্রিকেট দল

এখন কোনোরকম ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। একদম জিরো টলারেন্সে থাকতে হবে। জীবনের আগে কখনই জীবিকা নয়। জীবনের আগে কখনই ক্রিকেট নয়। তবে এটাও চাই- যত দ্রুত সম্ভব খেলা মাঠে গড়াক। কিন্তু এখন পরিস্থিতি তো দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আজও (গতকাল) ১৪ জন মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। তা ছাড়া ঈদেরও তো বেশি দেরি নেই। তাই খেলা শুরুর ব্যাপারে এত তাড়াহুড়ো করার কী আছে?

এখন সবকিছু বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই সময়ে সবাইকে ছাড় দিয়ে চলতে হবে। এই সময়ে একদম জিরো টলারেন্সে থাকতে হবে। ক্লাবদের কথাও শুনতে হবে।

এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবারই ধৈর্য ধারণ করাটা জরুরি। কখনই জীবনের আগে খেলা নয়। বিষয়টি মনে রাখতে হবে।

খেলোয়াড়দের পাশাপাশি ক্লাব মালিকদের সঙ্গেও কথা বলা দরকার। তারা কী চান।

হয়তো ক্লাবগুলোও চাইবে লিগ দ্রুত শেষ হয়ে যাক। এক্ষেত্রে সবকিছু দেখেশুনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিসিবিকেই!

তবে খুশির বিষয় হচ্ছে, বিসিবি ক্রিকেটারদের পাশেই আছে।

ঈদের পরই খেলা চালানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত হবে না

জালাল ইউনুস

পরিচালক, বিসিবি

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লিগ চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া বাস্তবসম্মত হবে না। কেননা এখন প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতি থাকলে কীভাবে ঈদের পর প্রিমিয়ার লিগ চালু করা যাবে? বিসিবি আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে, তারপর সিদ্ধান্ত নেবে। দোকানপাট চালু করা আর মাঠে খেলা চালানো তো এক কথা নয়। এতগুলো খেলোয়াড় খেলবে, হয়তো সবাইকে টেস্ট করানো হলো। কিন্তু তাদের কারও সঙ্গে আক্রান্ত কারও যাতায়াত নেই তা কি কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে? আমরা লিগ চালু করলাম, তারপর কোনো খেলোয়াড় আক্রান্ত হয়ে পড়ল, তার দায়-দায়িত্ব কে নেবে? তাই বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর।

জীবনের চেয়ে কখনই খেলা আগে নয়। আমরাও চাই যত দ্রুত সম্ভব খেলা মাঠে ফিরুক। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ঈদের পর লিগ চালানোর সিদ্ধান্ত মোটেও বাস্তবসম্মত হবে না। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের পরিস্থিতি হলেও আমরা চিন্তা করতে পারতাম। কিন্তু আমরা তো এর ধারে-কাছেও নেই। আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেটা তো সবাই বুঝব। তখন খেলাও চালুর ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

ক্রিকেটের স্বার্থেই প্রিমিয়ার লিগ চালু করা উচিত

দেবব্রত পাল

সাধারণ সম্পাদক, কোয়াব

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে ক্রিকেটের স্বার্থেই এখন প্রিমিয়ার লিগ চালু করা উচিত। ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে। সরকারও অর্থনৈতিক সব কর্মকান্ড এবং অফিস আদালত খুলে দিচ্ছে। তাই আমরা মনে করি ক্রিকেটও এখন মাঠে চলতে পারে। তা ছাড়া ক্রিকেট তো আর হকি বা রাগবির মতো বডি কন্ট্রাক খেলা নয়। এখানে ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিং সব সময় নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় থাকে।

এখন দর্শকও হয় না। তাই এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তা ছাড়া আমরা ড্রেসিংরুমকে ব্যবহার করব কেবলমাত্র ব্যাট রাখা এবং টয়লেটের জন্য। বাইরে প্যান্ডেল করে সেখানেই নির্দিষ্ট দূরত্বে ক্রিকেটাররা বসবেন। এতে তো সমস্যা হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।

যদি এই অবস্থা এক বছর চলে, আমাদের ক্রিকেট কি এক বছরই বন্ধ থাকবে সেজন্য? প্রিমিয়ার লিগ চালু না হলে তো কোনো লিগই আমরা চালু করতে পারব না। বোর্ড সভাপতি ক্রিকেটারদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। আমরা চাই বোর্ডের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে। ইতিমধ্যে বোর্ডকে আমরা চিঠি দিয়েছি লিগ শুরুর ব্যাপারে। দেখা যাক কী হয়!

মার্কেট-গার্মেন্ট চালু হলে ক্রিকেট লিগ কেন নয়?

শাহরিয়ার নাফিস

ক্রিকেটার, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ

ধীরে ধীরে সবকিছুই তো খুলে দেওয়া হচ্ছে। সবকিছুই স্বাভাবিক হচ্ছে। মার্কেট, গার্মেন্টও খুলে দেওয়া হচ্ছে। তাহলে ক্রিকেট কেন হবে না! গার্মেন্টে যেখানে এক জায়গায় ৫-৭ হাজার বা তারও বেশি মানুষ কাজ করে সেখানে প্রিমিয়ার লিগে খেলে মাত্র ১৫০ জনের মতো ক্রিকেটার। আর গ্রাউন্ডসম্যান ও অন্যান্য মিলে ৫০-৬০ হবে।

জাতীয় দলের কিছু ক্রিকেটার ছাড়া বাকি ক্রিকেটারের আয় কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ থেকেই। আমরা এখান থেকে আয় করেই এক বছর সংসার চালাই।

তাই এই লিগ না চললে আমরা খুবই সংকটে পড়ে যাব। এভাবে যতই দিন যাবে আমাদের হাত আরও খালি হতে থাকবে। আর আরও বেশি সংকটের সম্মুখীন হব। তাই আমরা আশা রাখছি ঈদের পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আবার চালু হবে।

বিসিবির কাছে এটা আমার দাবি নয়, চাওয়া। ক্রিকেটারদের অভিভাবক হিসেবে সব সময় বিসিবি আমাদের পাশে থাকে। এবারও ক্রিকেটারদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে প্রিমিয়ার লিগ চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে বলে আমরা আশা করি।

সবার আগে ক্রিকেটারদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে

নাজমুল আবেদীন ফাহিম

ক্রিকেট উপদেষ্টা, বিকেএসপি

করোনা পরিস্থিতি কী হবে পরের এক মাসে তা এখন বলা কঠিন। আরও ভালো হতে পারে কিংবা খারাপ হতে পারে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন। তাই সবকিছু জেনেশুনে চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রিমিয়ার লিগ চালু করা যাবে কি যাবে না!

আমরা তো একটু হলেও আঁচ করতে পারছি। মার্কেট খুলে দেওয়ার কথা বললেও মানুষ কিন্তু মার্কেট খুলছে না। তারা ভাবছে এখন সেটা নিরাপদ নয়। তাই লিগ চালুর ব্যাপারেও সবার আগে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।

ক্রিকেট কিংবা লিগ বন্ধ থাকলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি তো বোর্ডেরই হবে। তারা তো চাইবে ক্রিকেট চলুক। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে সবার আগে। যদি লিগ চালু করা হয়, দেখা গেল বেশকিছু ক্রিকেটার আক্রান্ত হলো, তারপর কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটল তখন কী হবে? সে ক্ষতি কী পুষিয়ে নেওয়া যাবে?

আবার এটাও ঠিক যে, এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে কারও কারও সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে। সে বিষয়টি বিসিবিকেই ভেবে দেখতে হবে। যদিও এর মাঝেই বিসিবি বেশকিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। তারা এই কঠিন পরিস্থিতির সময় ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে।

এই পরিস্থিতিতে আমার কথা হচ্ছে, ঈদের পর যদি মনে হয় খেলা চালানো সম্ভব সেটাও যেন বিসিবি ভেবে দেখে। হতে পারে ম্যাচের আয়তন ছোট করে। অথবা লিগটা আরও সংক্ষেপও করা যেতে পারে। তবে যদি লিগ চালু করা না যায় বা পরিস্থিতি খুব ভালো না হয় সেক্ষেত্রে অসচ্ছল ক্রিকেটারদের কীভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা যেতে পারে সে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। সবার আগে ক্রিকেটারদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পরিস্থিতি দেখেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ক্রিকেট বোর্ডকে।

সর্বশেষ খবর