সোমবার, ১৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
সা ক্ষা ৎ কা র

সহধর্মিণী এখন সিদ্দিকুরের শিক্ষক

সহধর্মিণী এখন সিদ্দিকুরের শিক্ষক

বাংলাদেশ গলফে আলোচিত জুটি সিদ্দিকুর রহমান ও সামাউন আঞ্জুম অরণি। স্বামী-স্ত্রী দুজনই গলফার হওয়ায় অধিকাংশ সময় দুজনকে দুই প্রান্তে থাকতে হয়। তাই অরণি এখন খেলা ছেড়ে দিয়ে গলফের প্রশিক্ষক পেশা বেছে নিয়েছেন। তাই আর দূরে দূরে থাকতে হয় না। এখন স্বামীর সঙ্গে বিদেশ ট্যুরেও যান। অরণি এখন শিক্ষক হিসেবেই সিদ্দিকুরের পাশে থাকেন। লকডাউনের সময়ও শিক্ষক সহধর্মিণীর কাছে অনেক কিছু শিখছেন দেশসেরা গলফার। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশের গলফ ও নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন সিদ্দিকুর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেজবাহ্-উল-হক

 

প্রশ্ন : এই লকডাউনে কীভাবে সময় কাটছে আপনার?

সিদ্দিকুর রহমান : চেষ্টা করছি ফিজিক্যাল ফিটনেসটা ধরে রাখার জন্য। রুমের ভিতর যতটা করা যায় সেভাবেই চলছে আরকি। তবে বসে নেই। অনুশীলন চলছে।

কী কী অনুশীলন করছেন?

ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজগুলো করছি। সাইকোলজিক্যাল যে পার্টটা আছে সেটা করছি। ইয়োগা করছি। স্ট্রেন্থ এক্সারসাইজ করছি। এ ছাড়া টেকনিক্যাল কাজও করছি। রোজা রেখে যতটা নিউট্রিশাস ফুড খাওয়া যায় সেদিকেও মনোযোগ দিচ্ছি। মোটামুটি সবকিছুই করছি।

অনলাইনে কোনো কোচের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন কি?

আমি আমার ফিটনেস কোচের সঙ্গে কাজ করছি। ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছি। সাইকোলজিক্যাল বিষয় নিয়ে আলী ভাইয়ের (আলী খান) সঙ্গে কাজ করছি। প্রতি সপ্তাহে তার সঙ্গে কথা হয়। তার সাজেশন পুরোটা অনুসরণ করছি।

আপনি একসঙ্গে ফিজিক্যাল, মানসিক এবং টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। একটু বিস্তারিত বলবেন কি?

টেকনিক্যাল সাইটে ভালো করার জন্য আমি কিছু ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কে-ভেস্ট নামে এক যন্ত্র ব্যবহার করি। এটা আমার কোচের মতো সবকিছু শেখায়।

আপনার সহধর্মিণীও একজন গলফার। ইদানীং তিনি  ট্রেনিং/টিচিং করানো শিখছেন!

হ্যাঁ, তার কাছে আমি শিখছি। এটা আমার জন্য অনেক ভালো হয়েছে। অনেক বেশি সহযোগিতা পাচ্ছি। এটা আমার জন্য খুবই প্লাসপয়েন্ট।

ঘরেই এখন আপনার শিক্ষক! এটা ভাবতে কেমন লাগে?

আমি আসলে অনেক ভাগ্যবান। আমরা একই পেশায় আছি। সে টিচিং লাইনে চলে যাওয়ায় আমার জন্য অনেক ভালো হয়েছে। যদি সে খেলোয়াড় থাকত তাহলে দেখা যেত আমার ট্যুর একদিকে, তার অন্যদিকে। আমার সঙ্গে ট্যুর করতে পারছে না সে। টিচিং লাইনে চলে যাওয়ায় আমার সঙ্গে ট্যুর করতে পারে। এটা আমাদের দুজনের জন্যই ভালো।

একজন গলফারের জন্য ফিটনেস কতটা জরুরি?

এটা নির্ভর করে আপনি কোন লেবেলে খেলছেন। কিংবা কোন লেবেলে খেলতে চান। আমার ইচ্ছা, আমি গলফের টপ লেবেলে খেলব। সেখানে খেলার জন্য যা যা করা লাগে বা লাগবে আমি সবই করব। পিজিএ ট্যুরে খেলার জন্য আমার যে ফিটনেস দরকার, টেকনিক্যাল যে বিষয়গুলো জানা দরকার সবই করছি।

এক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি কতটা যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন?

হ্যাঁ, এখন আমি মানসিক বিষয়ের ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। আমার ফিজিক্যাল ফিটনেস যথেষ্ট ভালো। আমি যতটা সম্ভব নির্ভুলভাবে (গেম অ্যাকুরেসি) খেলতে পারি। মানসিকভাবে যদি আমি শক্ত থাকতে পারি, ইতিবাচক থাকতে পারি তাহলে অর্জন করাটা খুব বেশি কঠিন নয়।

২০১০ সালের ব্রুনাই ওপেন জয়ের স্মৃতিটা কি মনে পড়ে?

সত্যি কথা বলতে, জেতার আগ পর্যন্ত ওটা একটা কঠিন মুহূর্ত ছিল। তখন খুবই আর্থিক কষ্টে ছিলাম। খেলার শুরুর আগে আমি চিন্তা করছিলাম আর্থিকভাবে টিকে থাকতে পারব কিনা। ওটা আমার জীবনের বড় অর্জন। সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। ব্রুনাই ওপেন জয়ের পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এরপর আমার আত্মবিশ্বাসই বেড়ে গেছে। তারপরই নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছি। তারপর থেকে অনেক ভালো করে আসছি। ওই টুর্নামেন্টে জয়ের পর যে আনন্দ পেয়েছি সেটা কখনো ভোলার মতো নয়।

২০১৩ সালে জয় করলেন হিরো ইন্ডিয়া ওপেন, সে স্মৃতি সম্পর্কে যদি বলেন।

এটা অনেক বড় টুর্নামেন্ট ছিল। ভারতীয় তারকা গলফাররা ছাড়াও ইউরোপ আমেরিকা থেকে অনেক তারকা গলফার খেলেছেন। এই শিরোপাও আমার জন্য স্মরণীয় ঘটনা। কখনো ভোলার মতো নয়।

২০১৬ সালে ইউরোপিয়ান ট্যুরে, মরিশাস ওপেনে একদম শেষ হোলে গিয়ে পারেননি? সেই স্মৃতি কতটা কষ্ট দেয়?

মরিশাস ওপেন ছিল আমার জন্য অনেক বড় শিক্ষা। এটা অবশ্যই ভুল। তবে এই ভুল থেকে আমি অনেক বেশি শিখেছি। তিন হোল বাকি থাকতেই আমি ভাবছি আমি জিতে গেছি। সেলিব্রেশনও করি। সেটাই ছিল ভুল। ওই ভুল থেকে এটা অনুধাবন করেছি যে, খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো সেলিব্রেশন করা যাবে না। আপনার পর বাংলাদেশের আর কোনো গলফার শিরোপা জিততে পারেননি।

দেশে আর নতুন করে সিদ্দিকুর তৈরি হচ্ছে না কেন?

আমাদের গলফারদের দেখে মনে হচ্ছে, তাদের উচ্চাকাক্সক্ষা নেই। তবে তাদের ভালো করার সক্ষমতা আছে। কিন্তু এই সক্ষমতাটা কেউ ব্যবহার করতে পারছে না। কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলবে, আমি ওমুক বড় টুর্নামেন্টে খেলতে চাই, কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ কেউ করছে না। উচ্চাকাক্সক্ষা না থাকলে তাকে একটা গলফ ক্লাব লিখে দিলেও সে কিছু করতে পারবে না।

আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশে পেশাদার গলফের সম্ভাবনা কতটা?

সম্ভাবনা অনেক আছে। আমি রুট লেবেল থেকে এসেছি। বলবয় ছিলাম। তারপর এই লেবেলে এসেছি। আমরা কিন্তু কেউ সবকিছু শিখে দুনিয়াতে আসি না। অভিজ্ঞদের দেখেই আমরা শিখে থাকি। অন্যদের ভালো খেলার সক্ষমতা আছে, কেবল দরকার উচ্চাকাক্সক্ষা ও সে অনুযায়ী কঠোর পরিশ্রম।

বাংলাদেশের গলফ সেভাবে না এগোনোর পেছনে কারণ কী?

আমাদের গলফ সেভাবে না এগোনোর পেছনে বড় কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক সমস্যা। এশিয়ান ট্যুরের একটা টুর্নামেন্ট খেলতে ৩ হাজার ডলার খরচ হয়। আমি প্রতি বছর ২৫টা টুর্নামেন্ট খেলি। আমার সুইং কোচ আছে, মেন্টাল কোচ আছে, ফিটনেস কোচ আছে, আমার ইন্টারন্যাশনাল কেডি আছে -এদের পেছনে আরও ৩০-৪০ হাজার ডলার খরচ হয়। তাই আমাদের প্লেয়াররা কোয়ালিফাই হলেও এমন চিন্তার কারণে খেলতে পারেন না।

বিদেশের মাটিতে নিজের দেশের পতাকা ওড়াতে কেমন লাগে?

এই বিষয়টা নিয়ে আমি খুবই গর্ববোধ করি। প্রথমত আমি গর্বিত, আমি একজন বাংলাদেশি। আমি যখন বিদেশে গিয়ে লাল-সবুজ পতাকা দেখি এর চেয়ে ভালো লাগার আর কিছু হতে পারে না।

গলফ ক্যারিয়ারে আপনার সবচেয়ে মধুর স্মৃতি সম্পর্কে বলেন?

আমার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে, আমি অলিম্পিকে খেলেছি। আর সবচেয়ে মধুর মুহূর্ত হচ্ছে, ব্রুনাই ওপেন জয়। কোন দুঃস্মৃতি আপনি সবসময় ভুলে থাকতে চান? মরিশাস ওপেনে জিততে না পারা।

আপনার পছন্দের গলফ কোর্স কোনটি?

আমার সবচেয়ে পছন্দের কোর্স কুর্মিটোলা গলফ কোর্স। এ ছাড়া ভারতের দিল্লি গলফ কোর্সেও আমার অনেক মধুর স্মৃতি আছে। অন্যান্য ক্রীড়া ইভেন্টের চেয়ে গলফে ফিজিক্যাল কনটান্ট কম হয়। তাহলে কেন আপনারা অনুশীলন করছেন না কোর্সে গিয়ে? ইউরোপের গলফাররা অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে। আসলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটটা একটু ভিন্ন। আমরা জানি পৃথিবীর অনেক দেশেই গলফ কোর্স খুলে দিয়েছে। তবে কোথায় কিন্তু টুর্নামেন্ট হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে কেন প্র্যাকটিসের জন্য খুলে দিচ্ছে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। আমাদের এখানে বিদেশের মতো সুযোগ সুবিধা নেই। ওদের কেডির দরকার নেই, ওরা গলফ কার্ট নিয়ে অনুশীলন করে। আমাদের তো সেই সুবিধা নেই। তারপরও আমার মনে হয়, চাইলে এখন গলফ কোর্স খুলে দিতে পারে। কারণ যে লেবেলের মানুষ গলফ খেলেন, তারা অনেক সচেতন। এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষ ভাবছেন।

সর্বশেষ খবর