মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
সা ক্ষা ৎ কা র

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্যাম্প করতে চাই

ফেডারেশন দ্রুত কোনো নির্দেশনা দিক

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্যাম্প করতে চাই

ফরহাদ আহমেদ শিতুল, অধিনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল

বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের অধিনায়ক ফরহাদ আহমেদ শিতুল। লকডাউনের এ সময়ে তিনিও বন্দী জীবনযাপন করছেন। তবে ফিটনেস ধরে রাখার যুদ্ধ ঠিকই করে যাচ্ছেন। কিন্তু ঘরের মধ্যে আর কত দিন? তার দাবি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্যাম্পের ব্যবস্থা করুক হকি ফেডারেশন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দ্রুত দিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য ফেডারেশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন শিতুল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেজবাহ্-উল-হক

প্রশ্ন : হকির কি অবস্থা?

শিতুল : সবার আগে তো করোনার এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তারপর অন্য চিন্তা। এ কঠিন অবস্থা থেকে বের হতে পারলে প্রথমেই দরকার দলবদল। সেটা সবার জন্যই। অনেক দিন থেকেই আমাদের এ সমস্যা। তাই সবার আগে সবার জন্য দলবদল দরকার। যদি দলবদলটা হয় সেক্ষেত্রে সবাই আর্থিকভাবে লাভবান হবেন, তখন খেলার প্রতি সবার আগ্রহটা আরও বেড়ে যাবে।  এটাই এখন চাওয়া।

এখন কোথায় আছেন, কি করছেন?

আমি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চাকরি করি। এখন আমাদের সরকারি ছুটি। তবে আমরা নৌবাহিনীর একটা প্রতিষ্ঠানের ভিতর আছি। কোয়ারেন্টাইনে আছি।

আপনি কি ফিটনেস নিয়ে কোনো কাজ করছেন?

ফিটনেস ধরে রাখার জন্য আমাদের বাহিনীর নিজস্ব জিম আছে। আমি যেখানে থাকি সেই বিল্ডিংয়ের নিচেই। সেখানে আমরা প্রতিদিন এক বেলা করে কম সময়ের জন্য জিম করে আসি।

ফিটনেসের জন্য এই মুহূর্তে কি কি কাজ করছেন?

ফিটনেস ধরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার মোটামুটি সবই করছি। ধরেন, জগিং, এছাড়া হাতের কিছু অনুশীলন, পায়ের কিছু কাজ, স্কোয়াট -এ কাজগুলোই নিয়মিত করছি। অবশ্য ইচ্ছা থাকলেও এর বাইরে বেশি করার সুযোগ আমাদের নেই। আমাদের সাধ্যের মধ্যে যা যা করা সম্ভব সবই করছি।

কঠিন এ সময়ে জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে আপনি কি অন্যদের খোঁজ খবর রাখছেন?

হ্যাঁ, অবশ্যই। অন্যদের সঙ্গে বিশেষ করে জাতীয় দলের সবার সঙ্গে আমার নিয়মিত কথা হয়। এর বাইরেও আমি অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই ভালো আছেন। নিরাপদে আছেন।

অন্য খেলোয়াড়রা কিভাবে অনুশীলন করছেন এ সময়ে?

সবার কথা আমি ঠিকভাবে বলতে পারব না। আমি কেবল বলতে পারি জাতীয় দলে যারা খেলছেন তাদের কথা। প্রত্যেকে নানাভাবে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। যাদের বাড়ির আশেপাশে খোলা মাঠ বা ফাঁকা জায়গা আছে সে ফিটনেসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ বা বাসার ভিতর জিম করেই যতটা সম্ভব ফিটনেস ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

ফেডারেশন আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে কিনা?

ফেডারেশন থেকে অনেককে নাকি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এই উদ্যোগকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তবে এতে তো আর খেলোয়াড়দের চাহিদা পূরণ হয় না। আরও ভালো কিছু করতে পারলে ভালো হতো। তারপরও আমি চাই সামনের দিকে যাতে এমন উদ্যোগ যেন আরও বেশি নেওয়া হয়। এই সহযোগিতা যাতে অব্যাহত রাখা হয়, এটাই আমি তাদের কাছে কামনা করি।

ক্রিকেটারদের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নানা গাইডলাইন দিচ্ছে। হকি ফেডারেশন থেকে এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা?

হকি ফেডারেশন থেকে এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। তবে আমাদের কোচরা বা স্টাফরা ফেসবুকে বিভিন্ন ভিডিও শেয়ার দেয় ফিটনেস ধরে রাখতে কি করতে হবে, তা দেখে আমরা অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করি। আমরা সেগুলো অনুশীলন করি।

এখন যে অবস্থা, হকি নিয়ে কি চিন্তা করছেন বা আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

 আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল সামনে নভেম্বরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা। কিন্তু করোনার কারণে তা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ গেমস ছিল। এই দুইটা টুর্নামেন্ট যদি আবার চালু হয়, আমার বিশ্বাস ধীরে ধীরে কামব্যাক করতে পারব আমরা। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এখন যাদের বাসার আশেপাশে জায়গা আছে সেখানেই কঠোরভাবে অনুশীলন করতে হবে। বাইরের দেশের কথা চিন্তা করলে, তাদের নিজস্ব মাঠ, সুইমিং পুল আছে আমাদের কিন্তু সে সুবিধা নেই। তবে আমাদের যতটুকু সুযোগ সুবিধা আছে তার মধ্য থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

অনেক দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন ইভেন্টে খেলোয়াড়রা ধীরে ধীরে অনুশীলন শুরু করছেন, ফেডারেশন এ ব্যাপারে আপনাদের কোনো নির্দেশনা দিয়েছে কিনা?

কবে থেকে আমরা অনুশীলন শুরু করতে পারি, ফেডারেশনের কাছ থেকে এমন কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি। আমার বিশ্বাস দ্রুত করোনার সমস্যা দূর হবে। তারপর আমরা অনুশীলনে হয়তো ফিরতে পারব। আগে তো আমাদের জীবন, তারপর তো খেলাধুলা।

করোনার এই পরিস্থিতি যদি আরও দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয় সেক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় কি হকি বন্ধই থাকবে, নাকি ধীরে ধীরে অনুশীলন চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে ফেডারেশনের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কিনা?

না, এ ব্যাপারে ফেডারেশনের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তবে আমরা খেলোয়াড়রা মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছি। যদি আমাদের বলা হয়, তারা যদি কোনো নিয়ম বা শৃঙ্খলা দিয়ে বলে এটা মেনে চলে খেলবা আমরা তাতেই রাজি। এমনকি যদি বলে কাল থেকে তাতেও আমরা রাজি। আমরা খেলার জন্য মুখিয়ে আছি। আমরা প্রস্তুতি হয়েই আছি। এখন দরকার ফেডারেশনের পদক্ষেপ।

সবাই কি বাসায় অনুশীলন করার সুযোগ পাচ্ছেন? ফেডারেশনের ভূমিকা কি এ ব্যাপারে?

এটা সত্যি যে, অনেকেই বাসায় অনুশীলন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। বিশেষ করে যাদের ঢাকায় বাসা, আশে পাশে জিম নেই, তারা কি করবেন? তাই শৃঙ্খলা মেনে যদি কোনো কিছু করা সম্ভব সেটাই ভালো। কারণ সামনে আমাদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। তাই খুব ভালো হতো ফেডারেশন যদি সব নিয়ম মেনে চলে ক্যাম্পের ব্যবস্থা করত। আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্যাম্প করতে চাই। এ ব্যাপারে ফেডারেশনের দ্রুত দিক নির্দেশনা চাই।

অধিনায়ক হিসেবে সতীর্থদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কি?

শিতুল : আমি সবার উদ্দেশেই বলতে চাই, সবার আগে আমাদের জীবন, তারপর খেলাধুলা। সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। আমরা যা কিছুই করব তাতে যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে। নিজের জীবন বাজি রেখে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। ভালো থাকাটা আমাদের নিজের জন্য এবং নিজের পরিবারের জন্য জরুরি।  এটাই আমার কামনা।

সর্বশেষ খবর