বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

এক আসরেই মৌসুম শেষ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এক আসরেই মৌসুম শেষ

শুধুমাত্র ফেডারেশন কাপ আয়োজনের মাধ্যমে ফুটবলে এক মৌসুমের অবসান ঘটল। এ নিয়েও চলছে বিতর্ক। কেউ বলছেন ক্লাবগুলো না চাওয়ায় বাফুফে লিগ বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। জাতীয় দলের বেশ ক’জন ফুটবলার এ নিয়ে হতাশ। তাদের কথা আমরা তো ক্লাবগুলোকে ছাড় দিতে প্রস্তুত ছিলাম। আরও অপেক্ষা করে দেখা যেত না।

কেউবা বলছেন বাফুফের দায়িত্বহীনতার কারণে লিগ বাতিল হয়েছে। ক্লাবগুলোর না করার পেছনে করোনার আতঙ্ক ছাড়াও লোকসানের বিষয়টি কাজ করেছে। অযথা বসিয়ে বসিয়ে ফুটবলারদের কত আর বেতন দেবেন। এক্ষেত্রে বাফুফের উচিত ছিল ক্লাবগুলোকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করার পাশাপাশি আর কিছুদিন দেখা। সহযোগিতা তো দূরের কথা বকেয়া টাকায় ফেডারেশন ক্লাবগুলোর হাতে তুলে দেয়নি। তাই লিগ বন্ধের মূল কারণ ক্লাবগুলোর না বলাটাই মূল নয়। এর পেছনে বাফুফের সাংগঠনিক ব্যর্থতাকেও দায়ী করা যায়। এ নিয়ে তারা কোনো হোমওয়ার্কই করেনি।

কথা হচ্ছিল দেশ বরেণ্য ক্রীড়া সংগঠক ও বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একটা মৌসুম থেকে লিগ হারিয়ে যাওয়াটা কষ্টের। ক্লাবগুলো অনেক পরিকল্পনা ও আশা নিয়ে দল গড়ে। ফেডারেশন চায় লিগটা উপভোগ্য হোক। এবার পেশাদার লিগ শুরু থেকেই জমে উঠেছিল। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছি না। অথচ লিগই কি না বাতিল হয়ে গেল। ফুটবলপ্রেমী হিসেবে অবশ্যই কষ্ঠ পেয়েছি। কিন্তু এ ছাড়া উপায়ও ছিল না। করোনাভাইরাসে যেখানে জীবনমরণ সমস্যা, সেখানে ফুটবল হয় কিভাবে? ক্লাবগুলোকে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছিল। স্বাভাবিক কারণেই তারা লিগ বাতিলের দাবি তুলে। লিগ তো ক্লাবগুলোকে নিয়েই। তারাই যদি খেলতে না চায় বাফুফে কি করবে? অপেক্ষা করবে, কিন্তু কতদিন। তাই এএফসির গাইড অনুযায়ী বাফুফে লিগ বাতিল করেছে।’

সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের মহাসচিব ও বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল বলেন, ‘পেশাদার লিগ বাতিলের সিদ্ধান্তটা একেবারে সঠিক। ক্লাবগুলো লোকসানের পর লোকসান গুনছিল। করোনাভাইরাসে কবে লিগ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থায় বাতিল ছাড়া বিকল্প কোনো পথ ছিল না। এই লিগের জন্য অপেক্ষা করলে দেখা যেত সামনের লিগেও জটিলতা  দেখা দিত। সেখানে এক লিগ বাতিল হওয়াটা বেটারই হয়েছে। এটা ঠিক খেলোয়াড়রা এ নিয়ে আফসোস করছে। আবার এটাও তো মানতে হবে মাঠে নামাটাও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। একটা লিগ হারিয়ে গেছে এখন সামনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। করোনাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে নামলে হয়তো ফুটবলে বড় ক্ষতিও হয়ে যেতে পারত। এখানে কারো দোষ খুঁজে লাভ নেই। পরিস্থিতির শিকারে লিগ বাতিল হয়েছে।’

এবারের মৌসুমে শুধু অনুষ্ঠিত হয় ফেডারেশন কাপ। চ্যাম্পিয়ন হয় বসুন্ধরা কিংস। গত বছর লিগ ও স্বাধীনতা কাপ জিতে ইতিহাস গড়ে তারা। এ ক্লাবেরই সভাপতি জনপ্রিয় সংগঠক ইমরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শুধু নিজ সাফল্য নয়। দেশের ফুটবলের উন্নয়ন। সে পথ ধরে কিংস এগুচ্ছে। এক আসর দিয়ে মৌসুম শেষ তা সত্যিই হতাশার। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এ ছাড়া উপায়ও ছিল না। বিদেশিদের বসে বসে বেতন দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রাও অধিকাংশ পেমেন্ট পেয়ে গেছে। তবুও কোনো কোনো ক্লাবের সামর্থ্য ছিল অপেক্ষা করার। আবার কোনো ক্লাবের আর্থিক অবস্থা এত করুণ যে পুনরায় ক্যাম্প শুরু করার সামর্থ্য ছিল না। সবাইকে নিয়েই তো লিগ। তাই লিগ বাতিল বলা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ ছিল না। বাফুফে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ডেকে লিগ বাতিল করেছে। কারণ অপেক্ষা করলে দেখা যেত সামনের মৌসুম এসে গেছে। তখন হয়তো নতুন মৌসুম নিয়ে শঙ্কা দেখা যেত। লিগ বাতিল হয়েছে তারপরও বলব স্থানীয় ফুটবলাররা যেন লোকসানের সম্মুখীন না হন। শোনা যাচ্ছে অনেক ফুটবলারই চুক্তি করার পরও টোকেন মানি পেয়েছে। এখন বাফুফের উচিত হবে সেইসব খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক আদায়ের ব্যবস্থা করা। আর এক দল বদলে দুই মৌসুম নিয়েও কথা আছে। ধরেন এবার যে খেলোয়াড় ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন তাকে যদি আরও অর্থ না দিয়ে একই ক্লাবে খেলার নিয়ম করে দেয় তা হবে অমানবিক। এ ক্ষেত্রে তার অর্থ আরও বাড়ানো যেতে পারে। অবশ্য পুরো ব্যাপারটি নির্ভর করছে বাফুফের সিদ্ধান্তের ওপর।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর