আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা হারনান বারকোসের ‘পাইরেট সাইনে’র সঙ্গে ঢাকার ফুটবল দর্শকদের পরিচয় গত মার্চে। এএফসি কাপের ম্যাচে মালদ্বীপের ক্লাব টিসি স্পোর্টসের জালে চারটি গোল দিয়েছিলেন তিনি। তারপর সতীর্থদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে ‘পাইরেট সাইন’ (এক হাতে এক চোখ ঢেকে মুষ্টিবদ্ধ অন্য হাত উঁচিয়ে ধরা) দেখিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য কিংস সমর্থকদের। বারকোসের এমন উদযাপন এরপর আর দেখতে পারেনি তারা করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। তবে পরিস্থিতি এখন অনেক দেশেই ভালো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপে ফুটবল মাঠে গড়িয়েছে বেশ কিছ ুদিন আগে। এশিয়াতেও ফুটবল মাঠে গড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ক্লাব এবং সংশ্লিষ্ট দেশের ফেডারেশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক ভিডিও কনফারেন্স করে এএফসি কাপ কর্তৃপক্ষ। সেখানে বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মেনে নেওয়া হয়েছে বসুন্ধরা কিংসের বেশ কিছু দাবি।
ভিডিও কনফারেন্সে দুটি বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরে এএফসি। প্রথমত, হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে সেপ্টেম্বরে টুর্নামেন্ট শুরু করা। দ্বিতীয়ত, অক্টোবরে একটি সেন্ট্রালাইজড ভেন্যুতে মিনি টুর্নামেন্টের মতো ম্যাচগুলো আয়োজন করা। বসুন্ধরা কিংসসহ মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস ও ম্যাজিয়া এবং ভারতের চেন্নাই সিটি এফসি এএফসির দ্বিতীয় প্রস্তাবটি গ্রহণ করে। এএফসি বাংলাদেশ, ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে কোনো একটা দেশকে আয়োজক হওয়ার আহ্বান জানালে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ তা প্রত্যাখ্যান করে। ভারত এখনো নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। তবে বসুন্ধরা কিংসের পক্ষ থেকে ভারতে খেলার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘এক ভেন্যুতে খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রস্তাব মেনে নিয়েছে সবাই। আর এএফসির কাছ থেকে নতুন করে ফুটবলার রেজিস্ট্রেশনের অনুমতিও পাওয়া গেছে।’ এতে করে কিংস পুরনো বিদেশিদের ছেড়ে নতুন ফুটবলার নেওয়ার সুযোগ পাবে। দল আরও শক্তিশালী করতে পারবে। অবশ্য বসুন্ধরা কিংসের আরও একটি প্রস্তাব নিয়ে চিন্তা করছে এএফসি। কিংস দাবি জানিয়েছে, ভারত কিংবা মালদ্বীপ বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ কোনো ভেন্যুতে যেন ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয়। সেক্ষেত্রে কিংসের কাছে কোনো ভেন্যুর প্রস্তাবনা চাইলে তারা মালয়েশিয়া অথবা থাইল্যান্ডের নাম প্রস্তাব করবে। কিংস সভাপতি বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অন্য দেশের তুলনায় ভালো। তা ছাড়া এ দুটি দেশে খুব কম সময়েই পৌঁছা যাবে। আমরা কোনোভাবেই ভারতে গিয়ে খেলতে চাই না। কারণ, তাদের ভিসা জটিলতা অনেক বেশি।’
‘আমরা যতদূর জানি মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অন্য দেশের তুলনায় ভালো। তা ছাড়া এ দুটি দেশে খুব কম সময়েই পৌঁছা যাবে। আমরা কোনোভাবেই ভারতে গিয়ে খেলতে চাই না। কারণ, তাদের ভিসা জটিলতা অনেক বেশি।’বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘সব দলই মোটামুটি একমত হয়েছে একটা ভেন্যুতে খেলার ব্যাপারে। বসুন্ধরা কিংসের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলার দাবি জানানো হয়েছে। দলটা ভারতে গিয়ে খেলতে চায় না ভিসাসহ নানান জটিলতার কারণে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দুই/তিন সপ্তাহের মধ্যেই সবকিছু নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
এক ভেন্যুতে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত হওয়ায় এটা নিশ্চিত, ২৩ অক্টোবর থেকে নতুন করে শুরু হচ্ছে কিংসের এএফসি কাপের মিশন। ডাবল রাউন্ড রবিন ভিত্তিতে অনুষ্ঠেয় গ্রুপ পর্বের লড়াই শেষ হবে ৪ নভেম্বর। এর অর্থই হলো, দুদিন পর পর ম্যাচ থাকবে। এএফসির পরিকল্পনায় নকআউট পর্ব হবে এক লেগের। ইন্টার-জোন সেমিফাইনাল হবে ২৪-২৫ নভেম্বর। ইন্টার জোন ফাইনাল হবে ১-২ ডিসেম্বর। এএফসির লক্ষ্য, ১২ ডিসেম্বর এএফসি কাপের ফাইনাল শেষ করা। সেক্ষেত্রে ২০২১ সালের এএফসি কাপ আয়োজন সহজ হবে। অবশ্য সব কিছুর পরও এএফসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিরাপদ হলেই কেবল ফুটবল মাঠে গড়ানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে জুনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ক্লাবগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছে এএফসি। এএফসি কাপে ই গ্রুপে একটি করে ম্যাচ খেলেছে সব দল। এর মধ্যে ৩ পয়েন্ট ও +৪
গোল ব্যবধান নিয়ে শীর্ষে আছে বসুন্ধরা কিংস। ম্যাজিয়া ও চেন্নাইয়ের সংগ্রহ ১ পয়েন্ট করে।
এএফসির ডিরেক্টর অব কমপিটিশন অ্যান্ড ফুটবল ইভেন্টস ডিভিশন শিন ম্যান গিলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়েছেন বাফুফের হেড অব কমপিটিশন মোহাম্মদ জাবের বিন তাহের আনসারি, বসুন্ধরা কিংসের মিডিয়া ম্যানেজার আহমেদ শাইক, ভারতের অনিল কামাত, সুনন্দ ধর ও কৃষ্ণ কুমার এবং মালদ্বীপের আবদুল্লাহ শিবাউ, ইসমাইল রিয়াজ, হাসান শিফান ও আহমেদ আব্বাস।