শুক্রবার, ১২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
ঘরোয়া আসর

সেরা বিদেশি ফুটবলার

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সেরা বিদেশি ফুটবলার

বসুন্ধরা কিংসের পক্ষে প্রায় দুই বছর মাঠ মাতিয়েছেন কোস্টারিকার ড্যানিয়েল কলিনড্রেস। চার আসরে তিন শিরোপা উপহার দিয়েছেন রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা এ ফুটবলার। এবার করোনাভাইরাসে পেশাদার লিগ বাতিল হয়েছে। তাই মৌসুম জুড়ে কলিনড্রেসের নৈপুণ্য দেখতে পারেননি ফুটবলপ্রেমীরা। ১৯৭৪ সাল থেকে ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশিদের আগমন। ৪৬ বছরে প্রায় ৫০০ ফুটবলার ঢাকা কিংবা পরবর্তীতে পেশাদার লিগ খেলেছেন। কিন্তু অনেকের দৃষ্টিতে কলিনড্রেসই সেরা। কিংসে স্বল্প সময়ে খেললেও কলিনড্রেসের গতি, টেকনিক সবাইকে মুগ্ধ করেছে। দলের বিপদের সময় তার জ্বলে ওঠার জুড়ি ছিল না। প্রয়োজনে পজিশন বদল করে প্রতিপক্ষদের দিশাহারা করে ফেলতেন। নিজে গোল করেছেন। সতীর্থদের দিয়েও গোল করাতেন। টিম মেকার বা ম্যাচ চেঞ্জার বলতে যা বোঝায় সবগুণাবলী আছে কলিনড্রেসের মধ্যে।

কথা হচ্ছে ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে কলিনড্রেসই কি সেরা বিদেশি ফুটবলার? আশি দশক থেকেই ঢাকায় মানসম্পন্ন বিদেশি আসা শুরু। ১৯৮৭ লিগে মেক্সিকো বিশ্বকাপ খেলা ইরাকের দুই ফুটবলার করিম মোহাম্মদ ও সামির সাকির আবাহনীতে খেলে গেছেন। মোহামেডানে ইরানের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা নাসের হেজাজি কোচ কাম খেলোয়াড় ছিলেন। খেলেছেন চার ইরানি নালজেগার, বোরহানজাদে, মতুর্জা ও বিজন তাহেরী। এমেকা ওকোরিও সাদা-কালোর জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। পরবর্তীতে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার স্কোয়াডে ছিলেন। ১৯৯২ সালে মাঠ কাঁপিয়ে যান উজবেকিস্তানের রহিমভ। টানা তিন ম্যাচে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড আছে তার। আবাহনীতে দীর্ঘ আট বছর রক্ষণভাগে আস্থার পরিচয় দেন শ্রীলঙ্কার পাকির আলী। পরবর্তীতে প্রেমলালও খেলে যান। নব্বই দশকে আবাহনীর হয়ে মাঠে কাঁপান রুশ তারকা ঝুকভ। ১৯৮৬ সালে ধানমন্ডিতে চার ব্রাজিলিয়ান খেলেন। এত ফুটবলার দর্শকদের হৃদয় জয় করার পর কলিনড্রেস ঘরোয়া আসরের ইতিহাসে সেরা ফুটবলার হন কীভাবে? এ নিয়ে কথা হচ্ছিল দেশের নন্দিত সাবেক দুই ফুটবলার  ইমতিয়াজ সুলতান জনি ও সাইফুল বারী টিটুর সঙ্গে।

জনি যেমন পাকির আলী, প্রেমলাল, করিম মোহাম্মদ ও সামির সাকিরের সতীর্থ ছিলেন। তেমনি এমেকা, নালজেগার, বিজন তাহেরী ও হেজাজির সঙ্গে মোহামেডানে খেলেন। সেরা বিদেশি প্রসঙ্গ উঠতেই জনি বলেন, ‘কঠিন কাজ। তবে এককভাবে কাউকে সেরা বলা যাবে না। কলিনড্রেস নিঃসন্দেহে উঁচুমানের ফুটবলার। দীর্ঘদিন পর ঘরোয়া আসরে বড় মাপের বিদেশি খেলোয়াড়ের দেখা মিলে। বসুন্ধরা কিংসের সাফল্যের পেছনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তবু তাকে সেরা বলাটা ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে আমি নালজেগার, এমেকা, পাকির আলী ও সামির সাকিরের ভূয়শী প্রশংসা করব। এরা ছিলেন টিম মেকার যা আমি কলিনড্রেসের মধ্যে খুঁজে পেয়েছি। ক্লাবগুলোর কাছে আমার অনুরোধ থাকবে সামর্থ্য থাকলে যেন কলিনড্রেসের মানের ফুটবলার আনে। এতে করে লোকাল ফুটবলাররা অনেক কিছু শিখতে পারেন। তবে আশি দশকে এমেকা, নালজেগার, সামির ও পাকিরের ভূয়শী প্রশংসা করতে হয়। দলের জন্য তারা ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। পুরো মাঠ জুড়েই খেলেছেন। এরাও নিঃসন্দেহে ঘরোয়া আসরে সেরা ফুটবলার ছিলেন।’

ফুটবল ছেড়ে দীর্ঘদিন ধরেই কোচের দায়িত্ব পালন করছেন সাইফুল বারী টিটু। তিনি বলেন, ‘কলিনড্রেসের মধ্যে অবশ্যই আলাদা ক্যারিশমা খুঁজে পাওয়া গেছে। কিন্তু ঘরোয়া ফুটবল ইতিহাসে তিনিই সেরা বিদেশি তা বলাটা ঠিক হবে না। আপনি আশি দশকে এমেকার কথা বলেন, ও মাঠে শক্তি প্রদর্শন করলেও সারা মাঠ জুড়ে খেলতেন। নিজে গোল করেছেন। সতীর্থদের দিয়েও করিয়েছেন। ম্যাচ চেঞ্জার ফুটবলার ছিলেন। আমি বলব প্রতিপক্ষদের আতঙ্কের নাম ছিল এমেকা। আবাহনীর ঝুকভ অসাধারণ খেলেছেন। পুরো দলকে চাঙ্গা রাখতেন। নালজেগার ছিলেন দলের নির্ভরতার প্রতীক। রহিমভ বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি। তবু ঢাকা কাঁপিয়ে গেছেন তিনি। টানা তিন হ্যাটট্রিকে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে দেখিয়ে গেছেন ক্যারিশমা।’ জনি বা টিটু অনেক বিদেশি ফুটবলারের প্রশংসা করেছেন। অবাক লেগেছে তাদের মুখে সনি নর্দের নাম না শুনে। কলিনড্রেসের আগে সনিই ছিলেন পেশাদার লিগে আলোচিত ফুটবলার। দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে যেতেন তার নৈপুণ্যে। এ ব্যাপারে দুজনার বক্তব্য ছিল যাদের কথা উল্লেখ হয়েছে মান বিচার করে। সনি ভালো খেলেছেন। কিন্তু এমেকাদের মতো মাঠ কাঁপাতে পারেননি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর