বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা জয় করে বায়ার্ন চ্যাম্পিয়ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

করোনা জয় করে বায়ার্ন চ্যাম্পিয়ন

বিশালকায় ওয়েজার স্টেডিয়াম। আসন সংখ্যা ৪২ হাজারের উপর। প্রিয় দল ওয়ের্ডার ব্রেমেনের খেলা। প্রতিপক্ষ জার্মানির সেরা ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ। অথচ দর্শক নেই একজনও। গর্জন নেই। উচ্ছ্বাস নেই। সমর্থনও নেই। একেবারেই যেন ভুতুরে পরিবেশ! মরণঘাতী করোনাভাইরাসের জন্য এমন ভীতিকর পরিবেশেই বায়ার্ন তাদের টানা অষ্টম শিরোপা জয় করে স্বাগতিক ওয়ের্ডার ব্রেমেনকে ১-০ গোলে হারিয়ে। নিজেদের ইতিহাসে বায়ার্নকে ৩০ নম্বর শিরোপা উৎসবে মেতে উঠার উপলক্ষ করে দেন ক্লাবটির পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্তো লেনডোভস্কি। বায়ার্নকে টানা অষ্টম শিরোপা উৎসবে মেতে উঠার নায়ক লেনডোভস্কির লিগে এটা ৩১ নম্বর গোল। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে পোলিশ স্ট্রাইকারের গোলসংখ্যা ৪০ ম্যাচে ৪৬টি। করোনাভীতিকে পাশ কাটিয়ে বায়ার্ন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দলের সেরা ফুটবলার লেনডোভস্কি তাই বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রমাণ করলাম আমরাই জার্মানির সেরা ক্লাব।’ ভুল বলেছেন কি?

হাতে তিন ম্যাচ। চ্যাম্পিয়ন হতে চাই মাত্র একটি জয়। ওয়ের্ডার ব্রেমেনের কাছে হারলেও তেমন কোনো সমস্যা নেই বায়ার্নের। পরের দুই ম্যাচ থেকে ৩ পয়েন্ট পেলেও হবে। এমন সমীকরণ নিয়ে পরশু রাতে খেলতে নামেন ম্যানুয়েল নয়্যার, বোয়েটাং, লেনডোভস্কিরা। করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত, বন্ধ খেলাধুলা। ভয়াবহ পরিস্থিতি জার্মানিতেও। দেশটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৮৮ হাজার ৩৮২ জন এবং মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ৯১০ জন। দেশটিতে খেলাধুলা বন্ধ ছিল আড়াইমাস। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে জার্মানি ফুটবল ফেডারেশন গত মাসে শুরু করে বুন্দেসলিগা। দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের সাহসিকতার প্রশংসা করেন ফুটবল বরেণ্যরা। ক্লাবগুলোও নিয়ম মেনে অনুশীলন করে। ফুটবলাররা মাস্ক, গ্লাভস পরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অনুশীলন করে নিজেদের প্রস্তুত করেছেন। তবে এ নিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গোলরক্ষক নয়্যারের কোনো অভিযোগ নেই, ‘বিশ্বের সর্বত্রই সবাইকে এভাবেই কাজ করতে হচ্ছে। ফুটবলও এর বাইরে নয়। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেই শুরু হয়েছে বুন্দেসলিগা। এমন পরিস্থিতিতেই আমাদের ফুটবলাররা দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন। ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আমরাই সবার আগে লিগ শুরু করেছি। তাই দৃষ্টান্ত তৈরি করাও আমাদের দায়িত্ব ছিল। সেটা করতে পেরে ভালোই লাগছে।’ বুন্দেস লিগা জয়ের পর বায়ার্নের টার্গেট এখন আরও দুই শিরোপা। জার্মান কাপের পাশাপাশি এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগও জিততে চায় জার্মানির সেরা ক্লাবটি। ৪ জুলাই ক্লাবটি জার্মান কাপের শিরোপা জিততে ফাইনালে খেলবে বায়ার্ন লেভারকুজেনের বিপক্ষে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেরা ১৬-এর প্রথম লেগে ইংলিশ জায়ান্ট চেলসিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পথে এক পা দিয়ে রেখেছে বায়ার্ন। দলটির হেড কোচ হান্সি ফ্লিক দারুণ উচ্ছ্বসিত ক্লাবের পারফরম্যান্সে, ‘এটাই বায়ার্ন মিউনিখ। যাদের টার্গেট সবসময় আকাশছোঁয়া। আমরা প্রথমটির টার্গেটে পৌঁছেছি। দ্বিতীয় টার্গেট জার্মান কাপ এবং তৃতীয়টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। লিগ শিরোপা জয়ের পর এখন সব পরিকল্পনা পরের দুই টার্গেট ঘিরে।’ 

পরশু রাতে ওয়ের্ডার ব্রেমেনের ওয়েজার স্টেডিয়ামে যখন নামে বায়ার্ন, তখন তাদের শিরোপা মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। শুধু বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। ৪৩ মিনিটে লেনডোভস্কির দুর্দান্ত গোলে শিরোপা নিশ্চিত করলেও শিরোপা উৎসব করতে পারেনি বায়ার্ন। কারণ, স্টেডিয়ামে সব মিলিয়ে সাড়ে ৭০০ লোকের উপর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাই উৎসব করেছেন শুধু ফুটবলাররাই। ৬০ মিনিটে গোলসংখ্যা দ্বিগুণ করতে পারত। কিন্তু লেনডোভস্কির ব্যর্থতায় হয়নি। মুলারের ক্রসে পোলিশ স্ট্রাইকারের হেড  লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৮০ মিনিটে বায়ার্ন ১০ জনের দলে পরিণত হয় আলফাস ডেভিসের দ্বিতীয় হলুদকার্ড পাওয়ায়। এরফলে ৯০ মিনিটে গোল খেতে খেতে বেঁচে যায় বায়ার্ন। ব্রেমেনের জাপানিজ স্ট্রাইকার ওসাকার হেড দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন নয়্যার। এরপর আর কোনো সমস্যা হয়নি জার্মানির সফল ক্লাবটির।

টানা অষ্টম শিরোপা জয়ী বায়ার্নের মৌসুমের শুরুটা ছিল হতাশার। শুরুর ১৪ ম্যাচে চারটিতে হেরে নেমে পড়ে পয়েন্ট টেবিলের সপ্তম স্থানে। চাকরি হারান কোচ নিকো কোভিচ। তার জায়গায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেন ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মানির সহকারী কোচ হ্যান্সি ফ্লিককে। তার কোচিংয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ক্লাবটি এবং শিরোপা জয়ের আগে টানা ১৮ ম্যাচে অপরাজিত থাকে বায়ার্ন মিউনিখ। ক্লাবের পাশাপাশি ব্যক্তিগত রেকর্ডও গড়েছেন থমাস মুলার। তিনি বুন্দেসলিগার ৯টি শিরোপা জেতার রেকর্ড স্পর্শ করেছেন। এর আগে নেদারল্যান্ডসের ফ্রাঙ্ক রিবেরি এককভাবে নয়টি শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর