শনিবার, ২০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চলে গেলেন রাম চাঁদ গোয়ালা

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

চলে গেলেন রাম চাঁদ গোয়ালা

ইংল্যান্ডের ডব্লিউ জি গ্রেস। যিনি ক্রিকেটের ‘অমর বুড়ো’ বলে খ্যাত। শত শত ক্রিকেটীয় কীর্তির জন্য অমর হয়ে যাওয়া শ্মশ্রুধারী গ্রেস খেলেছেন ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত। গ্রেসের মতো বিশ্বব্যাপী পরিচিতি নেই রাম চাঁদ গোয়ালার। খেলেননি জাতীয় দলে। কিন্তু তিনিও ইংলিশ ক্রিকেটারের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটার। গ্রেস যেমন ইংল্যান্ডের, গোয়ালা তেমন বাংলাদেশের। গোয়ালা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট খেলেছেন ৫৩ বছর বয়স পর্যন্ত। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বাঁ হাতি স্পিনার রাম চাঁদ গোয়ালা গতকাল পাড়ি দিয়েছেন পরলোকে। তাঁর মৃত্যুতে বিষাদের ছায়া পড়েছে ময়মনসিংহসহ গোটা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। দেশের অন্যতম প্রবীণ ক্রিকেটারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), আবাহনী ক্লাব, ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াব, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট কমিউনিটি (বিএসজেসি), বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএসজেএ), বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরিচিত মুখ গোয়ালা। ১৯৪১ সালে ময়মনসিংহে জন্ম। ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু মাত্র ১৪ বছর বয়সে পন্ডিতপাড়ার হয়ে। ঢাকার ক্রিকেটে অভিষেক ২১ বছর বয়সে ১৯৬২ সালে ভিক্টোরিয়ার পক্ষে। এরপর তিনি শান্তিনগর, মোহামেডান, আবাহনী ও জিএমসিসির হয়ে খেলেছেন। তবে তাঁর পরিচিতি আবাহনীর গোয়ালা বলে। দীর্ঘদেহী গোয়ালা একটু ভারী শরীরের ছিলেন বলে ফিল্ডিং কিংবা ব্যাটিংটা ভালো করতেন না। তার পরও ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে মোহামেডানের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে প্রিয় আবাহনীর বিপক্ষে অসাধারণ একটি রেকর্ড রয়েছে তাঁর ও দৌলতুজ্জামানের। ৮৬ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর গোয়ালা ও দৌলত শেষ উইকেট জুটিতে ৯৯ রান যোগ করেন। তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামের ম্যাচটি অবশ্য আবাহনী জিতেছিল ৬ উইকেটে। পরের বছর তিনি যোগ দেন আবাহনীতে। বাঁ হাতি স্পিনার গোয়ালার বোলিংয়ের মূল অস্ত্র ছিল ফ্লাইট, নিয়ন্ত্রণ ও টার্ন। ঢাকা ক্রিকেট লিগে ১৯৭৪ সালে টাউন ক্লাবের বিপক্ষে ২৩ রানে ৭ উইকেট নেওয়ার একটি রেকর্ডও রয়েছে তাঁর। মোহামেডানে খেলেন ১৯৭৫ থেকে ’৮১ সাল পর্যন্ত। এরপর আবাহনী এবং সবশেষ জিএমসিসিতে যখন খেলেন, তখন তাঁর বয়স ৫৩ বছর।

দেশের অন্যতম সেরা বাঁ হাতি স্পিনার হওয়ার পরও রাম চাঁদ গোয়ালা কখনোই আইসিসি ট্রফি খেলেননি। তবে বিসিবি একাদশের হয়ে পশ্চিম বাংলা সফরে অরুণলালের উইকেট নিয়েছিলেন। ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে অনুরা টেনেকুনের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি বেসরকারি টেস্ট খেলেছেন। অসাধারণ মানসিকতাসম্পন্ন গোয়ালা ঢাকার জীবন শেষ করে ফিরে যান জন্মস্থান ময়মনসিংহে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত সেখানে কোচিং করান তরুণ ক্রিকেটারদের। তাঁর হাতে গড়া ক্রিকেটারই বর্তমান টি-২০ ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। গোয়ালা বিয়ে করেননি। ক্রিকেটই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। তবে দুবার স্ট্রোক করার পর আর মাঠমুখী হননি।

লড়াকু ক্রিকেটার গোয়ালার জীবনের শেষ দিনগুলো সুখকর ছিল না। দীর্ঘদিন ভুগেছেন নানা রোগে। কমে গিয়েছিল স্মৃতিশক্তিও। চিরকুমার রাম চাঁদ গোয়ালা সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় চলে যান না-ফেরার দেশে। দুুপুরে নগরীর মরখলা এলাকায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

 

সর্বশেষ খবর