মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

দুই প্রতিবেশীর ‘অন্যরকম’ গল্প

মেজবাহ্-উল-হক

দুই প্রতিবেশীর ‘অন্যরকম’ গল্প

স্ট্যানলি পার্ক-যুক্তরাজ্যের বুকে এক টুকরো নিসর্গ প্রকৃতি! ১১০ একরের বিশ্বখ্যাত ছোট্ট এই পার্কই যেন ইংল্যান্ডের মার্সিসাইড কাউন্টির প্রাণ! পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সবুজ মাঠ-সারা দিন ব্যস্ত থাকে উঠতি ফুটবলারদের পদচারণায়। আছে মনোমুগ্ধকর স্বচ্ছ পানির লেক - ছবির মতো বাগানও।

নয়নাভিরাম ছোট্ট এই পার্কের এক পাশে লাল দুর্গ, আরেক পাশে নীল রাজ্য। বলা হচ্ছে- অ্যানফিল্ড ও গুডিসন পার্কের কথা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বিখ্যাত দুই ক্লাব লিভারপুল এফসি ও এভারটনের দুই হোম গ্রাউন্ড।

লিভারপুল এফসির ছদ্মনামই তো ‘অল রেডস’, আর এভারটনের আরেক নাম ‘দ্য ব্লুজ’।

শুধু নামেই নয়, অ্যানফিল্ডের আঙিনায় পা রাখলেই চোখে পড়বে চারদিকে লালের সমাহার। স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকেই বিশাল এক শপ। সেখানে লিভারপুল এফসির হাজারও রকমের সুভ্যেনির। উঁচু এই শপের গ্লাসের ওয়ালে টানানো আছে মোহাম্মদ সালাহর বিশাল সাইজের এক ছবি -সেটিও লালে লাল। এছাড়া মিউজিয়াম, স্টেডিয়ামও লাল।

গুডিসন পার্কে - আশেপাশের সব কিছুই নীল। স্টেডিয়ামের প্রধান গেটের সামনেই নীল রঙের ফ্যান ক্লাব। দোকানপাটও সব নীল, পাশের বাড়িগুলোর রঙও নীল - যেন এক নীলের রাজ্য!


মার্সিসাইড ডার্বি

নয়নাভিরাম স্ট্যানলি পার্কের এক পাশে লাল দুর্গ, আরেক পাশে নীল রাজ্য। বলা হচ্ছে- অ্যানফিল্ড ও গুডিসন পার্কের কথা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বিখ্যাত দুই ক্লাব লিভারপুল এফসি ও এভারটনের দুই হোম গ্রাউন্ড। লিভারপুল এফসির ছদ্মনামই তো ‘অল রেডস’, আর এভারটনের আরেক নাম ‘দ্য ব্লুজ’


অ্যানফিল্ড ও গুডিসন পার্ক পাশাপাশি হলেও দুই ক্লাব যেন দুই সংস্কৃতি ধারণ করে আছে! খুব কাছাকাছি- কিন্তু কত্তো বৈসাদৃশ্য। এক ক্লাবের সমর্থকরা যেন আরেক ক্লাবের সমর্থকদের চিরশত্রু!

মার্সিসাইড ডার্বি অর্থাৎ লিভারপুল এফসি ও এভারটনের ফুটবল ম্যাচ মানেই পুরো এলাকায় আগুনে উত্তাপ। এই আগুন ছড়িয়ে পড়ে খেলোয়াড়দের মধ্যেও। মর্যাদার লড়াই কেউ কাউকে এক চুলও যেন ছাড় দেয় না!

যদিও মাঠের লড়াইয়ে সাম্প্রতিক লিভারপুল যোজন যোজন এগিয়ে এভারটনের চেয়ে। এবারের লিগেই যেমন লিভারপুল যেখানে ৩০ ম্যাচে ৮৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে সেখানে সমান ম্যাচে এভারটনের পয়েন্ট মাত্র ৩৮। দ্য ব্লুজ রয়েছে তালিকার ১২ নম্বরে। তবে লিভারপুলের বিরুদ্ধে খেলা হলে এভারটন হয়ে যায় ‘ভয়ঙ্কর’ এক দল।

রবিবার রাতে গুডিসন পার্কে আরেকবার নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করল এভারটন। তারা আটকে গিয়ে ফর্মের তুঙ্গে থাকা অল-রেডসকে। মার্সিসাইড ডার্বি গোলশূন্য ড্র হয়েছে। তবে ম্যাচের পরতে পরতে ছিল উত্তেজনায় ঠাসা।

গোলের দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিল ব্লুজরা। কার্লো আনচেলোত্তির শিষ্যরা দুর্দান্ত দাপট দেখিয়েছে। লিভারপুলের গোলপোস্টে অ্যালিসন বেকার বাধা হয়ে না দাঁড়ালে এক যুগ পর জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারত এভারটন। তখন অবশ্য গোডিসনের দর্শকদের জন্য ম্যাচটি আফসোসের কারণও হয়ে থাকত। কারণ এই প্রথম যে মাঠে বসে খেলাটি দেখতে পারেননি তারা। করোনা মহামারীর জন্য স্টেডিয়ামে দর্শক নিষিদ্ধ ছিল!

ম্যাচটি লিভারপুলের দর্শকদের জন্য রীতিমতো হতাশার। পুরো ম্যাচে ৬৭ ভাগ সময় বল ছিল অল-রেডদের দখলে। একাধিক সুযোগও তৈরি করেছিল তারা। কিন্তু

জার্গেন ক্লপের শিষ্য কাক্সিক্ষত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি।

লিগে লিভারপুলের শিরোপা প্রায় নিশ্চিত। দরকার ছিল মাত্র দুটি জয়। হয়তো দর্শকরা ভেবে রেখেছিলেন, এভারটনকে এ ম্যাচে হারানোর পর বৃহস্পতিবার ক্রিস্টাল

প্যালেসের বিরুদ্ধে জিতে তারা প্রিয় অ্যানফিল্ডেই ৩০ বছর পর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ের আনন্দ উৎসব করবে।

কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ ১০৩ দিন পর খেলতে  নেমে নিজেদের সেরা দেখাতে পারেনি লিভারপুল। দলের মধ্যমণি মোহাম্মদ সালাহ তো রিজার্ভ বেঞ্চে বসেই সময়টা পার করে দিলেন। অবশ্য এজন্য কারও আক্ষেপ থাকার কথা নয়। কারণ জার্গেন ক্লপের ওপর অগাধ বিশ্বাস আছে সবার। আর বিশ্বাস কেনই বা থাকবে না? এই জার্মান কোচই তো গত বছর চ্যাম্পিয়ন লিগের শিরোপা এনে দিয়েছেন। সেই ম্যাচেও খেলতে পারেননি মোহাম্মদ সালাহ। আর এবার লিভারপুলকে লিগ শিরোপা প্রায় এনেই দিয়েছেন। ক্লপ তো এখন অ্যানফিল্ডের রাজা!

এভারটনকে হারাতে না পেরে কাগজে-কলমে অপেক্ষা একটুখানি বেড়ে গেল লিভারপুলের!

তবে সম্ভাবনা এখনো আছে, পরের ম্যাচে জিতে অ্যানফিল্ডেই শিরোপা জয়ের উৎসবে মেতে উঠতে পারে অল-রেডসরা, যদি দ্বিতীয় স্থানে থাকা ম্যানসিটি ড্র কিংবা হেরে যায় বার্নলির বিরুদ্ধে ম্যাচে! ম্যানসিটি জিতে গেলেও সমস্যা নেই। অল-রেডস ভক্তদের আর একটু ধৈর্য ধরতে হবে - এই যা!

সর্বশেষ খবর