বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

সফল বিদেশি কোচ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সফল বিদেশি কোচ

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হতে খুব সময় লাগেনি। ১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়া মারদেকা কাপে জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের যাত্রা। প্রথম জাতীয় দলের কোচের দায়িত্বপালন করেন শাহেব আলী। ১৯৭৩ থেকে ২০২০ এই ৪৭ বছরে ফুটবলে বাংলাদেশের প্রাপ্তি সুখকর নয়। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা থাকলেও সাফল্য সেভাবে আসেনি। ৪৭ বছরে ট্রফি জেতা হয়েছে মাত্র ছয়টি। যা আবার খুব উঁচু লেভেলের নয়। অবশ্য শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করার সামর্থ্য তখনো ছিল না এখনো নেই। ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে কপাল খুলে বাংলাদেশের। সেবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে বাংলাদেশের লাল ও সবুজ নামে দুটি দল গঠন হয়। ছাইদ হাছান কাননের নেতৃত্ব দেওয়া লাল দল ছিল মূলত জাতীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া।

এই একমাত্র টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ লোকাল কোচের তত্ববধানে চ্যাম্পিয়ন হয়। মো. সাদেকের প্রশিক্ষণে ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্মলিত বিশ্ববিদ্যালয় দলকে ফাইনালে পরাজিত করে। বাকি ট্রফি এসেছে বিদেশি কোচের মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালে মিয়ানমার চার জাতি টুর্নামেন্টে মোনেম মুন্নার নেতৃত্বে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। জার্মান অটোফিস্টারের প্রশিক্ষণে লাল সবুজরা ফাইনালে হারায় স্বাগতিক মিয়ানমারকে। ১৯৯৯ সালে নেপালে সাফ গেমসে ফুটবলে বাংলাদেশ আলফাজের গোলে নেপালকে হারায় জুয়েল রানার নেতৃত্বে দল। কোচ ছিলেন ইরাকের শামির সাকি।

২০০৩ সালে আবারও বিদেশি কোচের প্রশিক্ষণে বাংলাদেশের ট্রফি জয়। অস্ট্রিয়ার জর্জ কোটানের প্রশিক্ষণে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপকে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথম ও শেষবারের মতো এ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়। দলকে নেতৃত্ব দেন রজনীকান্ত বর্মন। অবশ্য তার আগে ভুটানেও এক টুর্নামেন্টে কোটানের প্রশিক্ষণে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে নিয়ম অনুযায়ী ফুটবলে অনূর্ধ্ব- ২৩ দল খেললেও বয়স কম থাকায় বাংলাদেশের মূলত জাতীয় দলই অংশ নেয়। গেমসে দ্বিতীয়বার সোনা জিতে সার্বিয়ার কোচ জোয়ান জর্জোভিচের প্রশিক্ষণে। এরপর বাংলাদেশের আর কোনো ট্রফি জেতার কৃতিত্ব নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে ছয় ট্রফির মধ্যে পাঁচটি এসেছে বিদেশি কোচের মাধ্যমে। জাতীয় দলে লোকাল কোচের দায়িত্ব পালনে সংখ্যা একেবারের কম নয়। সেক্ষেত্রে সেরাদের তালিকায় বিদেশি কোচদের নামই আসবে। এ নিয়ে আলাপ হয় গোলাম সারোয়ার টিপু, শফিকুল ইসলাম মানিক ও গোলাম রব্বানী জিলানীর সঙ্গে। টিপু জাতীয় ও মোহামেডানের মতো বড় দলের দায়িত্ব পালন করেছেন। লোকাল আসরে মানিক সব বড় দলের কোচ থাকলেও জাতীয় দলের দায়িত্ব পাননি কখনো। আর জিলানীর প্রশিক্ষণের অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়।

১৯৭৮ সালে ঢাকায় এশিয়ান যুব ফুটবলে জার্মানির বেকেল হপট কোচের দায়িত্ব পালন করেন। তবে জাতীয় দলের প্রথম কোচ ছিলেন আরেক জার্মানি জেরার্ড স্মিথ। ১৯৮২ সালে তার প্রশিক্ষণে এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ ২-১ গোলে হারায় মালয়েশিয়াকে। তার দায়িত্বে মেয়াদ বেশিদিনের স্থায়িত্ব ছিল না। এক সময় বিদেশি কোচের আগমন এতই সংক্ষিপ্ত ছিল যেন পিকনিকে এসে বেড়িয়ে যাওয়ার মতো। তবু বিদেশিদেরই সাফল্যের পাল্লাটা বেশি। টিপু বলেন, ‘কোন লেভেলে সেই বির্তকে আমি যাচ্ছি না। শিরোপা বিদেশি কোচরাই এনে দিয়েছে। তবে সেরা বলাটা সত্যিই কঠিন। অটো ফিস্টার হাই প্রোফাইলের কোচ ছিলেন। তিনি একটি শিরোপাও এনে দেন। ফিস্টারের প্রশিক্ষণে বিশ্বকাপ চূড়ান্ত পর্বে টেগোর মতো দেশ খেলেছে। সৌদি আরব অলিম্পিকে। ঘানার ফুটবলের চেহারা পাল্টে দেন তিনি। অথচ তাকে আমরা কাজে লাগাতে পারেনি। সংস্কৃতি চুক্তিতে হলেও আমরা এত বড় কোচকে বিদায় করে দিয়েছি। কোটান আমাদের সাফ চ্যাম্পিয়ন শিপের শিরোপা এনে দেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবশ্যই এটি বড় টুর্নামেন্ট। তবে আমি এগিয়ে রাখব ইরাকের শামির সাকিকে। সাফ গেমসে সোনা জেতাটা খুবই সহজ ব্যাপার ছিল। অথচ একের পর এক ব্যর্থতায় তা সোনার হরিণে পরিণত হয়েছিল। সেই হতাশা কেটেছে তার প্রশিক্ষণে। এখানে তাকে তো স্বার্থক কোচ বলতেই হয়। আমাদের ফুটবলারের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। তারপরও আমরা তাকে ধরে রাখতে পারেনি। ইরানের নাসের হেজাজিকে আমি দুর্বল বলি কীভাবে? ১৯৮৯ সালে সাফ গেমেসে তার প্রশিক্ষণে ফাইনালে বাংলাদেশ হেরে যায়। এশিয়ান ক্লাব কাপে উনি মোহামেডানকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তা তো স্বপ্নই বলা যায়। সুতরাং তাকেও সেরাদের মধ্যে রাখ যায়।’

শফিকুল ইসলাম মানিক এককভাবে কাউকে সেরা বলতে নারাজ। ‘শিরোপা অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর। কিন্তু তার মানে তিনিই সেরা কোচ আমি মনে করি না। অটো ফিস্টার, কোর্টান, শামির ও হেজাজি এরা নিঃসন্দেহে সেরা বা ভালোমানের কোচ ছিলেন। এমন কি ১৯৯৩ সাফ গেমসে ভরাডুবি ঘটলেও সোয়াব ছিলেন হাই প্রোফাইলের। এদেরকে যদি বাফুফে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারত ফুটবলের এ বেহাল দশা হতো না। এখন জেমি ডের সঙ্গে নতুনভাবে চুক্তি করা হয়েছে। আমি বলব উনি যদি প্রফেশনাল মেনে দায়িত্ব পালন করেন অবশ্যই বাংলাদেশকে ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন। আগাম বিতর্ক করে তো লাভ নেই। কোচ সেরা বড় কথা নয়। আমি তাকে কতটা স্বাধীনতা দিলাম সেটাও কিন্তু বড় বিষয়।’

অন্যদিকে জিলানী বলেন, ‘অটো ফিস্টার, কোর্টান ও শামির খুবই উঁচুমানের মানের কোচ ছিলেন। তিন জনই দেশকে শিরোপা এনে দিয়েছেন। তবে তাদের হাত ধরে ফুটবলে বাংলাদেশের চোহারাটা পাল্টানো যেত। তা হয়নি এটাই বড় ট্রাজেডি।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর