শিরোনাম
শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

লিভারপুলের স্বপ্নের শিরোপা

আসিফ ইকবাল

লিভারপুলের স্বপ্নের শিরোপা

এক-দুই দিন নয়, কিংবা এক-দুই সপ্তাহ নয়, এমনকি এক-দুই মাসও নয়; গুনে গুনে ৩০ বছর! ১৯৯০ থেকে ২০২০। সময়ের হিসাবে তিন দশক। এ ৩০ বছরের সুদীর্ঘ ব্যবধানে অবসান হয়েছে একটি অপেক্ষার। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে লিভারপুলের। তিন দশক যে আক্ষেপ বয়ে বেড়িয়েছে অ্যানফিল্ডের ক্লাবটি, পরশু রাতে চেলসি-ম্যান সিটি ম্যাচের পর সে আক্ষেপ ও হতাশাকে ইংলিশ চ্যানেলে ছুড়ে ফেলে লিভারপুল শিরোপা জিতেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের। লিগ শেষ হতে যদিও ৭ ম্যাচ বাকি। তার আগেই ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা স্বপ্নের শিরোপা উৎসবে মেতে উঠেছেন। ক্লাবের ইতিহাসে এটা ১৯ নম্বর শিরোপা। তবে ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শুরুর পর এটাই প্রথম শিরোপা লিভারপুলের।

১৯৮৯-৯০ মৌসুম থেকে শিরোপা উৎসবে মাততে লিভারপুল খরচ করেছে ১.৪৭ বিলিয়ন পাউন্ড। খেলিয়েছে ২৩৯ জন ফুটবলার। ম্যানেজার ছিলেন সাতজন। এ সময় অল রেডদের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামমুখী হয়েছে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ৯৪২ জন। এ তিন দশকে ক্লাবের জার্সি গায়ে মাঠ মাতিয়েছেন ইয়ান রাশ, কেনি ডালগ্লিস, রবি ফাওলার, স্টিভেন জেরার্ড, মাইকেল ওয়েন, লুইস সুয়ারেজ, ফার্নান্দো টরেসদের মতো বিশ্বখ্যাত তারকা ফুটবলার। এর মধ্যে ইংলিশ ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার জেরার্ড খেলেছেন দুই যুগ বা ২৪ বছর। কিন্তু এরা কেউ শিরোপার মধুর স্বাদ নিতে পারেননি। অথচ তারকা খ্যাতিতে তাদের ধারেকাছে না থাকলেও লিভারপুলের সমর্থকদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছেন মোহাম্মদ সালাহ, সাদিও মানে, ভ্যান ঝিল ডাইক, রবার্তো ফিরমিনোরা। তিন দশকে অল রেডদের শিরোপা উপহার দিতে নিজেদের মেধার সর্বোচ্চটা ঢেলে দিয়েছেন কেনি ডালগ্লিস, গ্রায়েম সাউনেস, রয় এভান্স, রাফায়েল বেনিতেজ, রজ হজসন, ব্রেন্ডন রজার্স। কিন্তু শিরোপার সুখকর মুহূর্ত উপভোগ করতে পারেননি। সে কাজইি করেছেন জার্মান বংশোদ্ভূত কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। লিগের ১৩১ বছরের ইতিহাসে ক্লপই একমাত্র জার্মান যিনি কোনো ক্লাবকে শিরোপা উপহার দিয়েছেন। শিরোপার ব্যর্থতা ঘোচাতে ক্লাব কর্তৃপক্ষ তিন মৌসুম আগে বুরশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে নিয়ে আসে ক্লপকে। প্রথম মৌসুমে তেমন কিছু উপহার দিতে পারেননি। কিন্তু গত মৌসুমে ক্লাব সমর্থকদের স্বপ্ন দেখানো শুরু করেন। ম্যান সিটি দুরন্ত ফুটবল খেলে শেষ মুহূর্তে শিরোপা জিতলে হতাশ হয়ে পড়েন সমর্থকরা। কিন্তু ২০১৯ সালের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা উপহার দেন। এবার শুরু থেকেই দাপুটে ফুটবল খেলতে থাকেন। করোনাভাইরাসে লিগ বন্ধ না হলে অনেক আগেই শিরোপা উৎসব করতে পারত ক্লাবটি। কিন্তু প্রাণঘাতী কভিড-১৯ ভাইরাসের জন্য প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ ছিল তিন মাসের ওপর। যখন শুরু হয় তখনই শিরোপা উৎসবে মেতে ওঠার ক্ষণ গুনতে থাকেন সমর্থকরা। ১০৩ দিন বন্ধ থাকার পর নিজেদের প্রথম ম্যাচে এভার্টনের কাছে পয়েন্ট হারায় ক্লপ বাহিনী। ক্রিস্টাল প্যালেসকে ৪-০ গোলে গুঁড়িয়ে শিরোপার মঞ্চ তৈরি করে নেয়। হয়তো ২ জুলাই ম্যান সিটির বিপক্ষে ম্যাচেই সে ক্ষণটি আসত। কিন্তু তার আগেই বৃহস্পতিবার রাতে সে সুখকর মুহূর্তটি উপহার দিয়েছে চেলসি। ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের চেলসি পরশু রাতে ম্যান সিটিকে হারায় ২-১ গোলে। ওই হারেই অপেক্ষার অবসান হয় লিভারপুলের। ছয় বছর আগে চেলসির কাছে হেরেই জেরার্ড লিভারপুলের স্বপ্ন ভেসে গিয়েছিল কান্নার নোনা জলে। সেবার চেলসির কাছে ০-১ গোলে হারলে শেষ মুহূর্তে চ্যাম্পিয়ন হয় ম্যান সিটি। তাই মজা করে বলাই যায়, ২০১৪-১৫ মৌসুমে চেলসি যে শিরোপা কেড়ে নিয়েছিল লিভারপুলের, ২০১৯-২০ মৌসুমে লিভারপুলকে সেই চেলসিই শিরোপা উপহার দিল!

স্ট্যাম্পফোর্ড ব্রিজে খেলা চলছিল চেলসি-ম্যান সিটির। ম্যাচে ছিল না লিভারপুল। অথচ দলটির সমর্থকদের নজর ছিল ম্যাচটির দিকে। তাই ম্যাচ শেষে লিভারপুলের ২ হাজার সমর্থক লকডাউন ভেঙে শহরের সেন্টার পয়েন্টে নেমে আতশবাজি জ্বালিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন।

সর্বশেষ খবর