মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

অনুদান না অপমান?

ক্রীড়া প্রতিবেদক

অনুদান না অপমান?

কেউ রিকশা চালাচ্ছেন। কেউবা ভ্যানে ফল ও সবজি বিক্রি করছেন। তবে এই অভাবের মধ্যে কোনো কোনো ফেডারেশন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় চার মাস হয়ে গেল খেলোয়াড়রা বেকার হয়ে বসে আছেন। সংকট কবে কাটবে তার ঠিক নেই। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই

 

করোনাভাইরাসে দেশের সব খেলাধুলা বন্ধ। কাজ নেই বলে অধিকাংশ ফেডারেশনে তালা ঝুলছে। এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় অসংখ্য ক্রীড়াবিদ অসহায় জীবনযাপন করছেন। মাঠে খেলা থাকলে দলগুলোর কাছ থেকে কমবেশি অর্থ মিলত। এখন কে দেবে টাকা। খেলোয়াড়দের পুরোপুরি পকেট খালি। না খেয়ে মরার উপক্রম। নিরুপায় হয়ে অনেক খেলোয়াড়ই সামান্য আয়ের জন্য অন্যপথ বেছে নিচ্ছেন। অভাবে এক তরুণ ফুটবলার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। কেউ রিকশা চালাচ্ছেন। কেউবা ভ্যানে ফল ও সবজি বিক্রি করছেন। তবে এই অভাবের মধ্যে কোনো কোনো ফেডারেশন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় চার মাস হয়ে গেল খেলোয়াড়রা বেকার হয়ে বসে আছেন। সংকট কবে কাটবে তার ঠিক নেই। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

ক্রিকেট কিংবা ফুটবলে বড় মাপের খেলোয়াড়রা চলতে পারবেন। অস্বীকার করার উপায় নেই বাংলাদেশে যে কোনো খেলায় খেলোয়াড়রা আসেন মূলত দরিদ্র ঘর থেকে। এরা এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে খেলাধুলায় আর থাকতে চাইবেন কিনা সংশয় রয়েছে। সেক্ষেত্রে খেলোয়াড়ই খুঁজে পাওয়া যাবে না। বয়সভিত্তিক বা তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড়দের তখন কী উৎসাহটা থাকবে। একে ক্রীড়াঙ্গনের অশনি সংকতেই বলা যায়।

খেলোয়াড়রা না খেয়ে মরছেন। অথচ কোনো কোনো ফেডারেশন এ সংকটকালেও বড় অংকের বিনিময়ে কোচিং স্টাফ নিয়োগ দিচ্ছে। যেখানে দুস্থ খেলোয়াড়দের সহযোগিতার অর্থ নেই সেখানে আবার অঢেল অর্থ খরচ করে বিদেশি কোচিং স্টাফ নিয়োগ দেয় কীভাবে? তারা কি পারবে তাদের বেতন বাকি রাখতে। এ যেন গরিবের বিলাসিতা! তবে করোনাকালে কেউ কেউ অনুদান পেয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একি অনুদান না অপমান?

রবিবার বাফুফে ভবনে পাইওনিয়ার লিগের ১০০ জন ফুটবলার ও ৩০ জন কোচকে অনুদান দিয়েছে। এ কাজটির জন্য কেউ কেউ হয়তো বাফুফের প্রশংসাও করবেন। কিন্তু অর্থের পরিমাণ শুনলে শুধু অবাক হবেন না ক্ষোভে বলেও ফেলবেন ফুটবলাররা কি ভিক্ষুক? প্রত্যেক ফুটবলার ও ৩০ কোচকে ১০০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এখনকার যুগে ১০০০ টাকার অনুদান এ তো ডেকে এনে অপমান করার মতো।

এ অর্থ দিয়েছে পাইওনিয়ার লিগের স্পন্সর কোম্পানি। অবাক লাগে বাফুফের মতো স্বনামধন্য ফেডারেশন এ কাজটি করল কিভাবে। এ নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে বিতর্কের ঝড় বইবে তারা কি উপলব্ধি করেননি। এমনিতেই ফেডারেশনের নানা কর্মকা-ে ক্রীড়াপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ। তারপর আবার ফিতরার মতো অনুদান দিয়ে ক্রীড়াপ্রেমীদের আরও ক্ষেপিয়ে তুলল।

বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেছেন এ নিয়ে সমালোচনা করার কোনো কারণ দেখছি না। স্পন্সর গ্রুপ অনুদান দিয়েছে এটা তো প্রশংসার কাজ করেছে। তিনি বলেন, এই সংকটের সময় কে এগিয়ে আসে বলেন। হতে পারে টাকার পরিমাণ কম। কিছুটা হলেও তো খেলোয়াড়দের উপকারে আসবে। তাহলে কি ১০০০ টাকার অনুদান যথেষ্ট? সোহাগ বলেন, দরিদ্র খেলোয়াড়দের জন্য ৫০০ বা ১০০০ টাকা এখনকার সময় উপকারে আসবে। একে আপনারা অপমান বলছেন। কিন্তু খেলোয়াড়রা তো খুশি মনে নিয়েছে।

যাক এই অনুদান তো কোনো স্পন্সর দিল। বাফুফে কি নিজ উদ্যোগে দুস্থ ফুটবলারদের সহযোগিতা করবে না। সোহাগ বলেন, তা নির্ভর করছে ফিফার গাইডলাইনের ওপর। কভিড-১৯ জন্য তারা যে ফান্ড দেবে তা কোন খাতে খরচ হবে একটা নির্দেশনা থাকবে। সেখানে যদি ফুটবলারদের সহযোগিতার প্রসঙ্গ থাকে, অবশ্য অনুদান দেওয়া হবে। বাফুফের নিজস্ব ফান্ড নেই? সোহাগের একটাই উত্তর ফিফার ফান্ডই ভরসা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর